Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

অস্তিত্বের লড়াই, দুর্গাপুজো হবে সেকরাপাড়ায়

গত দু’সপ্তাহ ধরে শুরু হওয়া বৌবাজার-বিপর্যয়ে প্রায় চাপা পড়তে বসা সেকরাপাড়ার বারোয়ারি দুর্গাপুজো এ ভাবেই জেগে উঠছে।

প্রচার: সেকরাপাড়ার পুজোর ফ্লেক্স। রবিবার, বৌবাজারে। নিজস্ব চিত্র

প্রচার: সেকরাপাড়ার পুজোর ফ্লেক্স। রবিবার, বৌবাজারে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১০
Share: Save:

‘মহাপ্রলয়ে ধ্বংসস্তূপে/ মা আসুক শান্তিরূপে’। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে রাস্তার ধারে ঝোলানো ফ্লেক্সের এই ক্যাচলাইনই চোখ টানছে পথচারীদের।

গত দু’সপ্তাহ ধরে শুরু হওয়া বৌবাজার-বিপর্যয়ে প্রায় চাপা পড়তে বসা সেকরাপাড়ার বারোয়ারি দুর্গাপুজো এ ভাবেই জেগে উঠছে। পুজো বহরে ছোট হলেও আন্তরিকতা এবং উদ্যোগে খামতি হবে না বলেই জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তবে যে জায়গায় পুজোর আয়োজন হত, এ বার সেখানে হবে না। সেকরাপাড়া লেন এবং বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থলের ফুটপাতে পুজোর অনুমতি চেয়ে পুলিশে আবেদন জানাবেন তাঁরা। পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিস সেন রবিবার বলেন, ‘‘আমাদের দুর্গতির কথা ভেবে পুলিশ আশাকরি পুজোর অনুমতি দেবে। আমরা ফের ঘুরে দাঁড়াতে চাইছি। তাই প্রতীকী হিসাবে পুজোর আয়োজন করব। অবশ্যই অন্য বারের মতো জাঁকজমক থাকবে না।’’

উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ঘুরে ঘুরে চাঁদা তোলার মানসিকতা তাঁদের কারও নেই। কুমোরটুলি থেকে নগদেই ছোট প্রতিমা কিনে আনবেন তাঁরা। নিজেদের উপার্জন থেকে এবং সরকারের সাহায্যের উপরে কিছুটা ভরসা করে এই আয়োজন সারতে চাইছেন কর্মকর্তারা। পুজোর খরচ তুলতে সরকারি সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে। পুজো কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, ক্রেতা সুরক্ষা দফতর এই পুজোয় অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শহরেরই অন্য একটি দুর্গাপুজো কমিটি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের তরফে সজল ঘোষও সেকরাপাড়ার পুজোর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। সেকরাপাড়ায় পুজো হবে শুনে খুশি কুমোরটুলি। গত ৪০ বছর ধরে ওই পুজোর প্রতিমা গড়ছেন কুমোরটুলির শিল্পী কমল পাল। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বিপর্যয়ের এক মাস আগেই ওঁরা এক হাজার টাকায় বায়না করে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনার দিন কয়েক পরে উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছিল, এ বার পুজো করবেন না তাঁরা। সেই সিদ্ধান্ত বদলানোয় খুব ভাল লাগছে। যে ভাবে সম্ভব ওঁদের পাশে দাঁড়াব।’’

ভেঙে পড়া বাড়ির অদূরে এ দিন দুপুরে যত্ন করে ফ্লেক্সগুলো ঝোলাচ্ছিলেন ক্লাব সদস্যেরা। দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেন এবং গৌর দে লেনের বাসিন্দারা পাড়ার পুজো বলতে বোঝেন ‘মধ্য কলকাতা সেকরাপাড়া লেন যুবক সমিতি’ আয়োজিত এই দুর্গোৎসব। এ বার ওই তিন লেনের অধিকাংশ বাসিন্দাই কার্যত হোটেল ‘বন্দি’। বৌবাজার বিপর্যয়ে চোখের সামনে ভেঙে পড়েছে আশিসবাবুর ৮বি, সেকরাপাড়া লেনের বাড়িটি। সপরিবার হোটেলে উঠেছেন তিনিও। ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে উদাস ভাবে বললেন, ‘‘ঠিকানা বলতে তো কিছু নেই আমাদের। লড়াইটা তাই অস্তিত্বের। উৎসবে মুষড়ে না পড়ে উঠে দাঁড়াতে এই পুজোর আয়োজন।’’

অন্যান্য বছর বাড়ি থেকেই পুজোর ঢাকের বাদ্যি শুনতেন বৃদ্ধা আরতি সেন, রেখা সেনরা। এ বার পুজোয় নিজের ঠিকানা থেকে অল্প দূরে অতিথি হয়েই হোটেলে কাটাবেন তাঁরা। পুজোর চেনা গন্ধ পেতে অবশ্য পাড়ার মণ্ডপে এক বার হলেও তাঁরা যাবেন বলে কথা দিয়েছেন উদ্যোক্তাদের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy