সুজ়লন এনার্জির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান-ম্যানেজিং ডিরেক্টর তুলসী তাঁতি। ফাইল ছবি
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার সন্ধ্যেবেলা মারা গিয়েছেন সুজ়লন এনার্জির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান-ম্যানেজিং ডিরেক্টর তুলসী তাঁতি। ভারতে যিনি ‘হাওয়া মানুষ’ (উইন্ড ম্যান) নামে জনপ্রিয়। বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। রবিবার স্টক এক্সচেঞ্জকে সংস্থা তাঁর মৃত্যুর খবর জানায়।
সংস্থা সূত্রের খবর, আমদাবাদে একটি সাংবাদিক বৈঠক সেরে পুণে ফিরছিলেন তাঁতি। রাস্তায় গাড়ির মধ্যেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন। চালককে কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা যান। স্ত্রী গীতা ছাড়াও রয়েছে তাঁর দুই ছেলেমেয়ে, নিধি এবং প্রণব।
তাঁতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। মোদী টুইটে লিখেছেন, ‘‘তুলসী তাঁতি একজন পথ প্রদর্শক শিল্পকর্তা ছিলেন, ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে যিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন এবং জাতির বিকল্প শক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রয়াসকে আরও শক্তিশালী করেছেন। তাঁর অকাল প্রয়াণ যন্ত্রণাদায়ক। পরিবার এবং বন্ধুদের সমবেদনা।’’
সংশ্লিষ্ট শিল্প মহলের দাবি, সময়ের থেকে এগিয়ে ভাবতেন তাঁতি। তাই ভারতে বিকল্প বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। সকলেই একবাক্যে বলছেন, বায়ু বিদ্যুৎ ব্যবসার পথ প্রদর্শক এবং দূষণহীন বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত এই বিশেষজ্ঞ বহু দিন আগে বুঝতে পেরেছিলেন বিকল্প শক্তির চাহিদার হাত ধরে ব্যবসার বিরাট সুযোগ খুলতে চলেছে। যে কারণে ১৯৯৫ সালে তৈরি করেন বায়ু বিদ্যুৎ সংস্থা সুজ়লন এনার্জি। সেই সময় এই বাজারে কর্তৃত্ব ছিল বিদেশি সংস্থাগুলির। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি ছিল অত্যন্ত জটিল এবং দামি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে সুজ়লনকে গড়ে তুলে বায়ু বিদ্যুতে কার্যত বিপ্লব আনেন তিনি।
বস্তুত তাঁতিরই নেতৃত্বে সুজ়লন এনার্জি দেশের বৃহত্তম বায়ু বিদ্যুৎ সংস্থায় পরিণত হয়। এই বাজারের ৩৩% তাদেরই দখলে। উপস্থিতি মোট ১৭টি দেশে। সংস্থার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার আমেরিকা।
রাজকোটে জন্ম তুলসী তাঁতির। গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক।। বায়ু বিদ্যুতে পা রাখার আগে ছিল বস্ত্র ব্যবসা। যেটা তিনি ২০০১ সালে বিক্রি করে দেন। তার পরেই ২০০৩ সালে আমেরিকায় বায়ু বিদ্যুৎ তৈরির ২৪টি টারবাইন সরবরাহের প্রথম বরাত পায় সুজ়লন। এখন সেই সংস্থার মূল্য ৮৫৩৫.৯কোটি টাকা। তাঁতি ইন্ডিয়ান উইন্ড টারবাইন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকার পাশাপাশি ২০০৬ থেকে বেলজিয়ামের টারবাইনের যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী জ়েডএফ উইন্ড পাওয়ার আন্টওয়্যারপেন-এর চেয়ারম্যানও ছিলেন।
সংস্থা সূত্রের দাবি, তাঁতির দূরদর্শিতার কারণেই ভারতের পাশাপাশি জার্মানি, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসেও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে সুজ়লনের। ব্যবসার যে মডেল অনুসরণ করে তারা, তা বিভিন্ন সংস্থার পরিবেশবান্ধব হওয়ার লক্ষ্য পূরণের জন্য বাস্তবসম্মত উপায় বাতলে দিতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy