(বাঁ দিকে) মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচ এলাকা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ‘দুর্গ’। তিনিই পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী। তিনিই এলাকার বিধায়ক। তাই তাঁর নাকের ডগা দিয়ে পুরসভার অনুমোদন ছাড়া বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, আর সেই খবর ফিরহাদের কাছে নেই, মানতে নারাজ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে তিনি গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে চারটি প্রশ্ন তুলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম পুরমন্ত্রী ফিরহাদের ভূমিকা। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু। সে সব অভিযোগের পাল্টা দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা মুখপাত্র শান্তনু সেন। তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে শুভেন্দুর মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।
গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে রাতেই পোস্ট করেছিলেন শুভেন্দু। সোমবার সকালে আরও একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘গার্ডেনরিচে পাঁচ তলা বাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধার এবং আহতদের চিকিৎসার উপরেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিন্তু এই ঘটনা বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রথমত, বাম সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তৃণমূল সরকার আসার পর থেকে কলকাতা পুরসভা এলাকার মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি জলাজমি বেআইনি ভাবে ভরাট করা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ এবং তৃণমূল নেতাদের মদতেই এই বেআইনি কাজগুলি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়, কারণ কোনও ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে বাধা আসেনি। বর্তমানে শুধু গার্ডেনরিচেই বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা ৮০০-র বেশি। এলাকাটি ফিরহাদের ‘দুর্গ’। ওঁর এলাকায় ওঁর নাকের ডগা দিয়ে এই বেআইনি কাজ হচ্ছে আর উনি কিছু জানেন না, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?’’ দোষী নিজেই রক্ষকের ছদ্মবেশে উদ্ধারকাজে শামিল হয়েছেন বলে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু।
বিরোধী দলনেতার দ্বিতীয় প্রশ্ন গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামস ইকবালকে নিয়ে। তিনি লেখেন, ‘‘ভেঙে পড়া বহুতলের প্রোমোটারের পাশাপাশি এলাকার কাউন্সিলরকেও গ্রেফতার করা উচিত। ২০২১ সালের পুরসভা নির্বাচনে তিনি ৯৮.২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। যা কলকাতা পুরসভায় সর্বোচ্চ। বেআইনি নির্মাণের রাজা এই শামস ইকবাল। তিনিই এক বার অ্যাস্টন মার্টিন গাড়ি নিয়ে পুরসভায় গিয়েছিলেন এবং শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। মানুষের জীবনের মূল্যে বিলাসবহুল জীবন গড়ে তুলেছেন তিনি। সম্প্রতি যে গাড়িটি তিনি কিনেছেন, তার বাজারমূল্য পাঁচ কোটি টাকা। এক জন সাধারণ কাউন্সিলর কী ভাবে এত টাকা রোজগার করতে পারেন?’’
শুভেন্দুর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতা শান্তনু বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতাকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং এলাকার মানুষ, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন, বেআইনি কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সকলকে শাস্তি দেওয়া হবে। দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না।’’ তার আগে ফিরহাদও স্থানীয় কাউন্সিলরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘একজন কাউন্সিলারের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় কোনটা বৈধ নির্মাণ এবং কোনটা অবৈধ। এটা প্রশাসনের দায়িত্ব।’’
গার্ডেনরিচের ঘটনায় মৃতদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ এবং আহদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে সকালে জানিয়েছেন ফিরহাদ। এই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছেন তিনি। ঘটনাটিকে তিনি ‘তৃণমূল-নির্মিত বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত ছিল।
শুভেন্দুর শেষ প্রশ্ন, আদর্শ আচরণবিধির মাঝে কী ভাবে ফিরহাদ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঘোষণা করলেন? ‘‘মেয়র হোন বা মুখ্যমন্ত্রী, ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর আদর্শ আচরণবিধির মাঝে তাঁরা কেউই প্রকাশ্যে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করতে পারেন না। আমি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পরিবর্তে প্রশাসনের কোনও অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে দিয়ে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করানো উচিত ছিল।’’
বিরোধী দলনেতার ক্ষতিপূরণ-প্রশ্নে শান্তনু বলেন, ‘‘যতটা প্রয়োজন বিবেচনা করেই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঠিক করা হয়েছে। পরে দরকার হলে আরও সাহায্য করা হবে।’’ কিন্তু আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ মানতে চাননি শান্তনু। তাঁর কথায়, ‘‘যে কোনও বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে আদর্শ আচরণবিধির ঊর্ধ্বে গিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা যা বলছেন, তা ধরা হলে তো দেশের কোথাও এখন ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হলে প্রধানমন্ত্রীও সাহায্য করতে পারবেন না। বিজেপি সবসময়ই ভোটের রাজনীতি করে। এই ঘটনাকেও তাই শুভেন্দু রাজনীতির সঙ্গে মেলাচ্ছেন। আসলে এর সঙ্গে নির্বাচনের যোগাযোগ নেই।’’
গার্ডেনরিচের ঘটনা নিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তাঁর আক্রমণের কেন্দ্রে রয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবাল। এক্সে সুকান্ত লিখেছেন, ‘‘কলকাতা বন্দর এলাকায় ফিরহাদের হয়ে বেআইনি নির্মাণের কাজ দেখাশোনা করেন এই কাউন্সিলর।’’ ইকবালের ছবিও তিনি পোস্ট করেছেন।
Who is responsible for the rampant illegal construction in WB?With a collapsed building in Ward No 134,Garden Reach,this is Shams Iqbal (Anil),Councillor of the ward,who manages illegal construction in the Kolkata Port area for Firhad Hakim,taking delivery of ₹5Cr Car.#Shameful pic.twitter.com/YGgca6IVx5
— Dr. Sukanta Majumdar ( মোদীজির পরিবার ) (@DrSukantaBJP) March 18, 2024
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy