All you need to know about building collapse in Garden Reach, Kolkata dgtl
Garden Reach Building Collapse
গার্ডেনরিচে ধ্বংসস্তূপ, উদ্ধারকাজের কী অবস্থা? ছবি তুলে ধরল আনন্দবাজার অনলাইন
কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে গার্ডেনরিচের ফতেহপুর ব্যানার্জি পাড়া লেনে রবিবার মধ্যরাতের ঘটনা। বেশ কিছু দিন ধরে একটি পাঁচ তলা বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছিল ওই এলাকায়।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ১২:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
রবিবার মধ্যরাতে কলকাতার গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় নয় জন মারা গিয়েছেন। ১৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ধ্বংসস্তূপের ভিতর আটকে রয়েছে ছ’জন। তবে সেই ছ’জনের মধ্যে এক জনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বাকিদের থেকে কোনও সাড়া পাচ্ছেন না উদ্ধারকারীরা। ফলে তাঁরা কী অবস্থায় আছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। সোমবার সকালে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভিতরে ছ’জন আটকে আছেন। এক জনের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আর কেউ সাড়া দিচ্ছেন না।’’ দমকলের তরফে জানানো হয়, উদ্ধারকাজ ৮৫ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। ঘিঞ্জি এলাকায় বহুতলটি এমন ভাবে ভেঙে পড়েছে, উদ্ধারে সময় লাগছে।’’ এখনও আতঙ্কের প্রহর কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষ।
০২১৮
কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে গার্ডেনরিচের ফতেহপুর ব্যানার্জি পাড়া লেনে রবিবার মধ্যরাতের ঘটনা। বেশ কিছু দিন ধরে একটি পাঁচ তলা বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছিল ওই এলাকায়। নির্মীয়মাণ বহুতলের আশপাশে বেশ কিছু ঝুপড়ি রয়েছে। সেগুলির উপর ভেঙে পড়ে বহুতলটি।
০৩১৮
রবিবার রাত ১২টা নাগাদ বিকট শব্দ করে বহুতলটি তার পাশের একটি টালির বাড়ির উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর রাস্তা বেশ সংকীর্ণ হওয়ায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দমকলের পৌঁছতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
০৪১৮
আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গার্ডেনরিচ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। আশপাশের বাড়ি এবং বহুতল থেকে তাঁরা রাস্তায় নেমে পড়েন। এই দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়া বহুতলটি সংলগ্ন অপর একটি বহুতল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
০৫১৮
রাত তিনটে নাগাদ উদ্ধারকাজে নামে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এর পরেই উদ্ধারকাজে গতি আসে। দমকলকর্মী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের পাশাপাশি উদ্ধারকাজে হাত লাগান স্থানীয়েরাও। গ্যাস কাটারের সাহায্যে কংক্রিটের চাঁই কেটে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ১৫ জনকে।
০৬১৮
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যরাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কলকাতার মেয়র তথা এলাকার বিধায়ক ফিরহাদ ওরফে ববি হাকিম। ফিরহাদ জানান, রাতে যে সময়ে বহুতলটি ভেঙে পড়ে সেই সময়ে পাশের টালির চালের বাড়িগুলিতে মোট ২১ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ন’ জনের মৃত্যু হয়েছে।
০৭১৮
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দমকলের আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নীচে অনেকে চাপা পড়ে থাকতে পারেন। ঝুপড়ি ঘরগুলিতে মোট কত জন ছিলেন, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি এখনও। ধ্বংসস্তূপের নীচে যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁদের কারও কারও সঙ্গে কথাও বলছেন উদ্ধারকারীরা। দেওয়া হচ্ছে জল, অক্সিজেন।
০৮১৮
প্রশাসন সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গার্ডেনরিচের ঘটনায় মোট আহতের সংখ্যা ১৬ জন। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় হাসপাতালের পাশাপাশি কয়েক জনকে নিয়ে আসা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। এঁদের মধ্যে চার জনকে চিকিৎসার পর এসএসকেএম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন, জাহারা বেগম, মহম্মদ আসলাম, শাহিনা খাতুন এবং নুর সালিম ইসলাম। মৃতদের নাম আকবর আলি (৩৪), রিজওয়ান আলম (২২), হাসিনা খাতুন (৫৫), শামা বেগম (৪৪), মহম্মদ ইমরান (২৭), মহম্মদ ওয়াসিক (১৯), নাসির আহমেদ (৫৯), নাসিমুদ্দিন (২৪),শেখ আবদুল্লা (১৮)।
০৯১৮
ফিরহাদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে সারা রাত ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান ফিরহাদ। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে
১০১৮
সোমবার সকালে ফিরহাদ বলেন, ‘‘টালির চালের ছোট ছোট বাড়ির উপর বহুতল ভেঙে পড়েছে। যাঁরা আহত, সকলেই গরিব মানুষ। কেউ কেউ ওখানে আড্ডা মারতে এসেছিলেন। খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা ওঁদের পাশে আছি। সারা রাত থেকেও দু’জনকে বাঁচাতে পারলাম না, এটাই আক্ষেপ।’’
১১১৮
বহুতলটি প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছিল তা মেনে নিয়েছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘এ সব এলাকায় বাম আমল থেকে বেআইনি নির্মাণ চলছে। কারণ, সে সময়ে প্রশাসনের কাছ থেকে নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যেত না। অনুমতি জোগাড় করতে অনেক হেনস্থা হতে হত। বিএলআরও অফিসে গিয়ে পায়ের চটি ক্ষয়ে যেত। তাই প্রোমোটারেরা বেআইনি নির্মাণের পথে হাঁটতেন। আমরা আসার পর এই কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছি। তা-ও কেন কিছু কিছু লোক বেআইনি নির্মাণ করছেন, জানি না।’’ ওই বহুতলের প্রোমোটারকে অবিলম্বে গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। সেই সঙ্গে ভাঙা বহুতল এবং পাশের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
১২১৮
ফিরহাদ জানান, বর্তমানে উদ্ধারকাজ কিছুটা শ্লথ করা হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে কংক্রিটের চাঙড় সরানোর কাজ করলে ভিতরে যাঁরা আটকে আছেন, তাঁরা আরও চোট পেতে পারেন। সেই কারণেই সন্তর্পণে একটি একটি করে চাঙড় সরিয়ে দেখা হচ্ছে নীচে কী রয়েছে।
১৩১৮
প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কী ভাবে বেআইনি নির্মাণ চলছে? এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে দোষ দিতে রাজি নন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘কোন গলিতে কী বেআইনি ভাবে তৈরি হচ্ছে, সেটা কাউন্সিলর জানবেন কী ভাবে? এটা দেখা তাঁর কাজ নয়। আধিকারিকদের কাজ। নিঃসন্দেহে প্রশাসনকে আরও কড়া হতে হবে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। আপাতত যাঁরা ভিতরে আটকে আছেন, তাঁদের উদ্ধার করা আমাদের অগ্রাধিকার।’’
১৪১৮
খবর পেয়েই সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিছু দিন আগে কপালে চোট পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর কপাল এবং নাকে সেলাইও পড়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে ১০ দিন বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সোমবার সকালে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মমতা। গাড়ি থেকে নেমে সরু গলি দিয়ে বেশ খানিকটা পথ হেঁটে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি।
১৫১৮
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর মমতা বলেন, ‘‘এটা খুব ঘিঞ্জি এলাকা। মন্ত্রীরা সারা রাত এখানে ছিলেন। প্রোমোটারদের একাংশ বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি করেন। তার আগে ভাবা দরকার, আশপাশে যাঁরা আছেন, তাঁদের যাতে ক্ষতি না হয়। আমি শুনলাম, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই বহুতলটি তৈরি করা হয়নি। এখন রমজান মাস চলছে। সকলে উপোস করে থাকেন। তা-ও সারা রাত এলাকার মানুষ উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর, দমকল, পুলিশ, কাউন্সিলররা সারা রাত ধরে কাজ করেছেন।’’
১৬১৮
মমতা যোগ করেন, ‘‘আমরা মর্মাহত। দু’জন মারা গিয়েছেন। পাঁচ-ছ’জন এখনও আটকে। এক জনের পা আটকে। তবে তিনি বেঁচে আছেন। উদ্ধারকারীদের ভিতরে ঢুকতে সময় লেগেছে। এখন সকলে ঢুকে গিয়েছেন। শোকস্তব্ধ পরিবারের কাছে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। যাঁরা বেআইনি কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। পরিবারের পাশে সরকার দাঁড়াবে। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তৈরি করে দিতে বলব।’’ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর হাসপাতালেও যান মমতা। সেখান থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘হাসপাতালে যাঁরা আছেন, তাঁরা স্থিতিশীল।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন মন্ত্রী সুজিত বসুও।
১৭১৮
ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে সকালে সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। ঘোষণা করা হয়েছে ক্ষতিপূরণও। সোমবার সকালে মমতা এ বিষয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, আমি তাতে শোকাহত। আমাদের মেয়র, দমকলমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনারের সেক্রেটারিয়েট, সিভিক পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দল সারা রাত ধরে ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। মৃতদের পরিবারকে এবং আহতদের আমরা ক্ষতিপূরণ দেব। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশেই রয়েছি। উদ্ধারকাজ চলছে।’’
১৮১৮
মেয়র, দমকলমন্ত্রী ছাড়াও নগরপাল বিনীত গয়াল, কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের সাংসদ মালা রায়ও যান ঘটনাস্থলে। গার্ডেনরিচের ঘটনায় ইতিমধ্যে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। শুভেন্দু অধিকারী রাতেই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ তলা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এই এলাকাটি কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের মাননীয় পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত। আমি পুলিশ, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বলব অবিলম্বে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে উদ্ধারকাজে নিয়োগ করতে। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আমার কাছে অনেক ফোন আসছে।’’