Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Puja Rally

ঘামে ও বৃষ্টিতে ভিজে নাজেহাল, ক্লান্ত শরীরেই শোভাযাত্রায় হাঁটল পড়ুয়ারা

কখনও গুমোট গরমে ঘেমেনেয়ে একসা হল পড়ুয়ারা। ছাতা থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টিতে ভিজে সেই ভেজা পোশাকেই রয়ে গেল। দু’ঘণ্টা ঠায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে মাঝপথে বাড়ির রাস্তা ধরল।

ক্লান্ত: পদযাত্রা শুরুর আগে অপেক্ষারত পড়ুয়াকে জল খাওয়াচ্ছে তার সহপাঠী। বৃহস্পতিবার, গিরিশ পার্কে। নিজস্ব চিত্র

ক্লান্ত: পদযাত্রা শুরুর আগে অপেক্ষারত পড়ুয়াকে জল খাওয়াচ্ছে তার সহপাঠী। বৃহস্পতিবার, গিরিশ পার্কে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:০৯
Share: Save:

কখনও গুমোট গরমে ঘেমেনেয়ে একসা হল তারা। কখনও ছাতা থাকা সত্ত্বেও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে সেই ভেজা পোশাকেই রয়ে গেল। দু’ঘণ্টা ঠায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে মাঝপথে বাড়ির রাস্তা ধরল। অনেকে আবার বন্ধুরা হাঁটছে বলে ক্লান্ত শরীর নিয়েই শোভাযাত্রা সম্পূর্ণ করল।

বৃহস্পতিবার শহরে প্রাক্-পুজোর মিছিলে দেখা গেল এমনই নানা ছবির কোলাজ। কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিদান উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের আগে শিক্ষকদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন একাদশ ও দ্বাদশের পড়ুয়াদের এই শোভাযাত্রায় ডাকা হচ্ছে? বৃষ্টি হলে কী হবে? চড়া রোদেই বা এতটা পথ কী ভাবে হাঁটবে পড়ুয়ারা? এমনকি এ দিন পড়ুয়াদের নিয়ে পদযাত্রায় যেতে বলায় স্কুলে আরও একটি শিক্ষাদিবস নষ্টের অভিযোগ করেছেন এআইডিএসও, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়ক।

বাস্তবেও দেখা গেল, শিক্ষকদের সেই আশঙ্কা এ দিন অনেকটা সত্যি হয়েছে। যদিও শিক্ষা দফতরের দাবি, শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী পড়ুয়াদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই ব্যাপারে তারা ব্যবস্থাপনায় খামতি রাখেনি।

এ দিন গিরিশ পার্ক মোড় থেকে পোস্তার দিকে তারাসুন্দরী পার্কে পড়ুয়াদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছিল পাখা, ছিল পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থাও। দুপুর ২টো নাগাদ শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১২টা থেকেই একের পর এক স্কুল জমায়েতস্থলে আসতে শুরু করে। তখনই দেখা দেয় সমস্যা। তারাসুন্দরী পার্কে এত পড়ুয়ার বসার জায়গা না থাকায় অনেককে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়। আর সেখানেই ঘণ্টাখানেক টানা দাঁড়িয়ে থেকে অনেকে ঘামে আর বৃষ্টিতে ভিজে নাজেহাল হয়ে পড়ে। দুটোর পরেও দেখা যায়, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে পড়ুয়ারা।

সময় যত গড়িয়েছে, শিক্ষকদের ক্ষোভ ততই বেড়েছে। এক শিক্ষিকা জানান, বার বার ঘাম আর বৃষ্টিতে ভিজে কয়েক জন পড়ুয়া অসুস্থ বোধ করায় তাঁরা শোভাযাত্রার মাঝপথ থেকেই ফিরে যাওয়ার কথা ভেবেছেন। পড়ুয়ারাও অনেকে জানায়, বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা দেওয়া হলেও সেই ছাতায় বৃষ্টি আটকায়নি। কেউ কেউ ফুটপাতেই বসার জায়গা দেখে বিশ্রাম নিতে বসে পড়ে।

কয়েক জন শিক্ষক বলতে থাকেন, তাঁরা আর রেড রোডে যাবেন না। কিন্তু এত জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে কী ভাবে স্কুলে ফিরবেন, সে ব্যাপারেও দিশা পাচ্ছেন না। কারণ, স্কুলে ফেরার গাড়ি থাকার কথা রেড রোডে। গিরিশ পার্কে হাতের কাছে মেট্রো পেয়ে কিছু পড়ুয়া মেট্রো ধরার জন্য এগিয়ে যায়। শেষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে, দুপুর আড়াইটে নাগাদ পড়ুয়াদের মিছিল গিরিশ পার্ক মোড় থেকে এগোতে শুরু করে।

সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়, টাকি বয়েজ়, টাকি গার্লস, হিন্দু স্কুল, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল, শুঁড়াকন্যা বিদ্যালয়, মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন), ব্রাহ্ম গার্লস, খন্না হাইস্কুল-সহ বেশ কিছু স্কুলের পড়ুয়ারা জানায়, আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তাঁদের শক্তি অনেকটাই শেষ। তবু তার পরে শোভাযাত্রায় হাঁটতে পেরে কিছুটা হলেও তৃপ্ত তারা।

শোভাযাত্রা শেষে দেখা গেল, রেড রোড পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে অধিকাংশ স্কুলই। সেখানে পৌঁছে তারা মাতে নিজস্বী তুলতে। অনেকেই জানিয়েছে, ক্লান্ত শরীরে হলেও মিছিলের পুরো পথ আসতে পারায় তারা খুশি। তবে স্কুলে ফেরার সময়ে পড়ুয়াদের বাস রাখা ছিল ইডেন গার্ডেন্স সংলগ্ন মাঠে। বাস ধরতে ফের তাদের মূল অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেশ কিছুটা পথ হাঁটতে হয়।

স্কুলের সামনে যখন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বাস পৌঁছল, তখন প্রায় সন্ধ্যা। অভিভাবকদের হাতে তাদের ছেলেমেয়েদের তুলে দিতে দিতে এক শিক্ষিকা বললেন, ‘‘পুরো পদযাত্রায় ধৈর্য আর শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হল পড়ুয়াদের। আমাদের স্কুলের দু’জন পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কিছুটা সামলে উঠে তারাও শোভাযাত্রার পুরোটা পথ হেঁটেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Puja Rally Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy