কলকাতার রাজপথে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। ছবি: টুইটার
আনিস-কাণ্ডের জেরে উত্তাল কলকাতা। আনিস মৃত্যু-রহস্যকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ কলকাতার রাজপথ জুড়ে। কলকাতার জায়গায় জায়গায় ছাত্রনেতা আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা। রাস্তায় নেমেছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা। তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কিনারা হয়নি আনিস মৃত্যু-রহস্যের। অধরা অভিষুক্তরাও। তাই অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার দাবিতেই রাস্তায় নেমেছেন পড়ুয়ারা।
ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করে মহাকরণ অভিযানে নেমেছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। এই মিছিল নবান্নের দিকে যেতে পারে আশঙ্কা করে পার্ক সার্কাসেই পড়ুয়াদের আটকে দেয় পুলিশ। ডোরিনা ক্রসিং-এ পড়ুয়াদের আটকাতে ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড দিয়ে আগে থেকেই তত্পর হয় পুলিশ। কিন্তু তার আগেই পার্ক সার্কাসে পুলিশি প্রতিরোধের মুখে পড়েন পড়ুয়ারা। পথ আটকানোর কারণে পার্ক সার্কাস-এ পৌঁছে রাস্তায় শুয়ে পড়ে শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভও দেখান পড়ুয়ারা। মল্লিক বাজার, মৌলালি হয়ে মহাকরণের দিকে যাওয়ার কথা এই মিছিলের। এই মিছিলের ফলে তীব্র যানজটের মুখেও পডে়ছেন নিত্যযাত্রীরা।
ডোরিনা ক্রসিং-এর পাশাপাশি এসএন ব্যানার্জি রোডেও ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। মিছিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রচুর পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। সাউথ-ইস্ট ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ নিজে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন।
পাশাপাশি আনিস মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তপ্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরও। মঙ্গলবার এসএফআই-এর ডাকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনের কাছে আন্দোলনে শামিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। আন্দোলনে নেমে দফায় দফায় তৃণমূল সংগঠনের ছাত্র এবং কর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তাল হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
আনিস মৃত্যু-রহস্যের তদন্তে নেমে আনিসের বাড়িতে যায় সিট (বিশেষ তদন্তকারী দল)। আনিসের মৃত্যুর তদন্ত প্রথমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাওড়া গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ সরকারের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সোমবার এই তদন্ত করার জন্য সিট (বিশেষ তদন্তকারী দল) গঠনের নির্দেশ দেন। তিন সদস্যের সিট-এ রয়েছেন রাজ্যের এডিজি (সিআইডি) জ্ঞানবন্ত সিংহ, ডিআইজি (সিআইডি) মিরাজ খালিদ এবং ব্যারাকপুরের যুগ্ম কমিশনার ধ্রুবজ্যোতি দে। ১৫ দিনের মধ্যে সিটকে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়াও ‘তদন্তে স্বচ্ছতার স্বার্থে’ মঙ্গলবার সকালে সাসপেন্ড করা হয় হাওড়ার আমতা থানার দুই পুলিশকর্মীকে। পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এক জন হোমগার্ডকে। এই তিনজনেরই সে রাতে ডিউটি ছিল। তিনজনেই আমতা থানা এলাকায় টহলের দায়িত্বে ছিলেন। তিন জনই শুক্রবার রাতে থানার খাতায় সই করে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে রাউন্ডে বেরিয়েছিলেন। ওই রাতেই আমতার সারদা দক্ষিণ খাঁ-পাড়ায় বাড়ির তিনতলার ‘ছাদ থেকে পড়ে’ মৃত্যু হয় ছাত্রনেতা আনিসের। তাঁর পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হয়, পুলিশের পোশাকে চার জন সে রাতে বাড়িতে ঢোকেন। আনিসকে তাঁরাই ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার জেরে আমতা থানার ওসি এবং আরও এক অফিসারকে তলব করা হয়েছে ভবানী ভবনে। ঘটনার রাতে কর্তব্যে গাফিলতির যে অভিযোগ উঠেছে থানার বিরুদ্ধে, সে ব্যাপারেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এই দু’জনকে।
আনিস মৃত্যু-রহস্য নিয়ে সরব হলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ তো আর খুন করতে যায়না। পুলিশকে দিয়ে খুন করানো হয়েছে। আমতা কান্ডের পিছনে কে আছে তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।’’
উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টেনে দিলীপ আরও বলেন, ‘‘আখলাখের মৃত্যুর সময় সারা দেশ তোলপাড় করেছিল। দিদি রাস্তায় হেঁটেছিলেন। এখন দিদি গরম রাস্তায় নামুন তবে বুঝব দম আছে। সংখ্যালঘুদের হাওয়া দিয়ে ভোট নিয়েছে। আর এখন পুলিশ পাঠিয়ে জন্তু জানোয়ারদের মতো খুন করে দিচ্ছেন। সিপিএম এতদিন শীতঘুমে ছিল। আজ মুসলিম ভোট নিয়ে ফুটবলের মতো খেলে যাচ্ছে সবাই। আনিস কান্ডে পুলিশকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা শুধুই আই ওয়াশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy