Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta Medical College

ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দেয় নির্মলের ‘খবরদারিই’

নির্মল-ঘনিষ্ঠদের মতে, পরিকল্পনা করে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল।

নির্মল মাজির সামনেই প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে চিকিৎসক পড়ুয়ারা। ফাইল চিত্র

নির্মল মাজির সামনেই প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে চিকিৎসক পড়ুয়ারা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৩৫
Share: Save:

সরস্বতী পুজোর পরিবেশের সঙ্গে মানানসই সব উপাদান রয়েছে হাসপাতাল চত্বর জুড়ে। সেই সঙ্গে রয়েছেন নির্মল মাজিও। প্রতিষ্ঠা দিবসে তাঁকে ঘিরে চিকিৎসক ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের সূত্রে বুধবারও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (সিএমসি) প্রাসঙ্গিক ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান।

এ দিন সিএমসি চত্বরে সরস্বতী পুজোয় প্রসাদ বিতরণ এবং খিচুড়ি ভোগের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই আয়োজনের ফাঁকে ছোট ছোট জটলায় দাপুটে চিকিৎসক-নেতার বিরুদ্ধে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়। বিক্ষোভ কেন হল, সেটাই ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু। নির্মল-ঘনিষ্ঠদের মতে, পরিকল্পনা করে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। তাতে ছাত্রদের পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশেরও ‘প্রশ্রয়’ রয়েছে বলে মত তাঁদের।

যদিও সেই বক্তব্য মানতে নারাজ চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। চিকিৎসক-পড়ুয়াদের বিক্ষোভ যে ভিত্তিহীন, তা বোঝাতে তাঁর আমলে সিএমসি-র কী কী উন্নয়ন হয়েছে, মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠা দিবসের বক্তৃতায় সবিস্তার জানিয়েছিলেন নির্মল। এ দিন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘নির্মলবাবু রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হওয়ার পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অনেক নতুন ভবন তৈরি হয়েছে, এ কথা অস্বীকার করছি না। কিন্তু সব কিছু হাসপাতাল প্রশাসনের উপরে চাপিয়ে দিলে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবেই। প্রতিষ্ঠা দিবসে সেটাই হয়েছে।’’

সেই বক্তব্যকে সমর্থন করে চিকিৎসকদের একাংশের মত, হাসপাতালের কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকা, অনুষ্ঠান কী ভাবে পরিচালনা হবে, মঞ্চে কারা থাকবেন— সব বিষয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের ‘নির্মল উপস্থিতি’ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। প্রতিষ্ঠা দিবসে ‘মিসেস ইউনিভার্স’ পরিচয়ে এক জন অতিথি-তালিকায় ছিলেন। ‘মিসেস ইউনিভার্স’ কেন মঞ্চে, তা-ও ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভের একটি কারণ।

এ দিন থেকে সিএমসি-র প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন উৎসব শুরু হয়েছে। সেখানেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নির্মল। এক প্রাক্তনীর কথায়, ‘‘সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছাত্রদের। সেটি পরিচালনা করার অধিকারও যে তাঁদের, তা ভুললে চলবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা? বিরোধিতা তো অনেক পরের বিষয়। আপত্তি জানালেও জোটে দুর্ব্যবহার। বদলির হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।’’

চিকিৎসক পড়ুয়াদের বক্তব্য, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কোথায় কোন বিভাগ রয়েছে তা রোগীদের জানানোর জন্য ২০১৮ সালে তাঁরা হাসপাতালের রাস্তায় রং দিয়ে তির চিহ্ন এঁকেছিলেন। ঋতায়ন রায় নামে এক চিকিৎসক পড়ুয়া বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিভাগের জন্য পৃথক রং দেওয়া হয়েছিল। গন্তব্য অনুযায়ী তির চিহ্ন ধরে হাঁটলে রোগী যেখানে যেতে চান পৌঁছে যেতে পারতেন।’’ ওই কাজে খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। কম খরচে দিক্‌-নির্দেশের সেই কাজকে পাকা রূপ দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন চিকিৎসক ছাত্রেরা। ঋতায়ন বলেন, ‘‘ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে এমন সাইনবোর্ড বানানো হয়েছে যা চোখে দেখা যায় না। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সময়ে যিনি ইন্টার্নদের পাশে দাঁড়াননি, পড়ুয়াদের ভাবনাকে মর্যাদা দেননি, তাঁর হাত থেকে সম্মান নিতে যাব কেন?’’

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার নির্মলের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘সারা দেশে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ২৪ নম্বরে। বাংলায় এক নম্বরে। এটাকে যদি রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যর্থতা বলা হয়, মানতে পারছি না।’’ এ দিন প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে শাসক দলের চিকিৎসক-নেতা ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব আসেনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy