Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Tea Stall

বাবা ছিলেন ‘টি টেস্টার’, ছেলে আপ্পা কলকাতার রাস্তায় চায়ের সঙ্গে কাপও খাওয়ান ক্রেতাদের

কলকাতায় চায়ের দোকান তো অলিতে গলিতে। তেমনই এক চায়ের দোকানের গায়ে লেখা এখানে কাপও খেতে হবে। উত্তর কলকাতার সেই দোকানের কাহিনিতে রয়েছে বিষাদ। রয়েছে স্বপ্ন ছোঁয়ার ইচ্ছাও।

দোকান সামলাচ্ছেন আপ্পা।

দোকান সামলাচ্ছেন আপ্পা। — নিজস্ব চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০১
Share: Save:

চা পাতার গন্ধ শুঁকে বলে দিতেন সেটি কেমন মানের। কিন্তু সেই কাজই তিলে তিলে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয় উত্তর কলকাতার বাসিন্দা ভোলানাথ রায়চৌধুরীর। ছেড়ে দিতে হয় নামী বেসরকারি সংস্থার ‘টি টেস্টার’-এর পদ। সংসার টানতে এক সময়ে তাঁকে পাড়ায় টেবিল পেতে চা বিক্রি করতে হত। এখন সেই দিন গিয়েছে। ছেলে শুভজিৎ রায়চৌধুরী একই জায়গায় ‘টি স্টল’ চালাচ্ছেন অভিনব কায়দায়। শুভজিৎকে অবশ্য সবাই ‘আপ্পা’ নামেই চেনে। পাড়া ছাড়িয়ে দূরের ক্রেতারাও জানেন, ‘আপ্পাস টি স্টলে’ চা খেয়ে কাপ ফেলে দিতে হয় না। খেয়ে নিতে হয়। সেই কাপেরও আবার নানান স্বাদ।

বাবার অসুস্থতার সময় থেকে সংসারে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। ভাই-বোনেদের লেখাপড়ার কথাও ভাবতে হয় কলেজ পড়ুয়া আপ্পাকে। স্নাতক হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা আর সম্ভব হয়নি। মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয় সিটি কলেজের কমার্সের ছাত্র আপ্পাকে। রোজগারের জন্য নানা কিছু করার পরে বাবার চায়ের দোকানটিকে অন্য ভাবে চালানোর পরিকল্পনা করেন। ওঁর বাড়ি উত্তর কলকাতার বৃন্দাবন লেনে। সরু গলির মতো রাস্তাটা যেখানে এসে বাগবাজার স্ট্রিটে মিশেছে, সেখানেই এখন আপ্পার চায়ের দোকান। সেখানে নানা স্বাদের চায়ের মতো চায়ের কাপও পাওয়া যায়। তবে বেশি পছন্দ নতুন প্রজন্মের ক্রেতাদের বলেই জানান আপ্পা।

আকর্ষণ বাড়ছে আপ্পার চায়ের।

আকর্ষণ বাড়ছে আপ্পার চায়ের। — নিজস্ব চিত্র।

অভিনব কাপ বানানোর কথা বলতে গিয়ে আপ্পা শুরু করলেন গোড়ার দিনের কাহিনি দিয়ে। বলেন, ‘‘আমার বাবা টি টেস্টার হিসাবে ২০ বছরের মতো চাকরি করেন। তখন সংসার নিয়ে কোনও চিন্তাই ছিল না। এখন তো নানা রকম যন্ত্র এসে গিয়েছে, কিন্তু বাবাকে নাকে শুঁকেই চা পরীক্ষা করতে হত। ধুলো চলে যেত পেটে। একটা কিডনি খারাপ হয়ে যায়।’’ আপ্পা জানান, কিডনি খারাপ হওয়ায় আরও নানা অসুখ দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি তখন ছোট। বাবার অসুখের পরে পাড়ায় চায়ের দোকান দেন। তখন থেকেই আমি পড়াশোনার ফাঁকে সাহায্য করতাম। এখন বাবা যেমন আমাকে সাহায্য করেন।’’

আপ্পার দোকানের বিশেষ কাপ।

আপ্পার দোকানের বিশেষ কাপ। — নিজস্ব চিত্র।

যে চা তাঁদের সংসারে অভিশাপ ডেকে এনেছিল, সেই চায়ের উপরেই ভরসা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন আপ্পার। বললেন, ‘‘এখানে অনেক চায়ের দোকান। খুবই প্রতিযোগিতা। আমি তাই নতুন কিছু করার কথা ভাবি। প্রথমে নানা স্বাদের চা এবং কফি শুরু করি। এখন সব মিলিয়ে ২০ রকমের পানীয় পাবেন আমার কাছে। গরমের সময় সস্তায় কোল্ড কফিও বিক্রি করি।’’ দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভাই এখনও স্কুলে পড়ে। বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব দায়িত্ব সামলাতে রাস্তার ধারে চায়ের দোকানের উপরে ভরসা আপ্পার।

সন্ধ্যাবেলার ভিড় সামলাতে সামলাতেই আপ্পা বলেন, ‘‘নতুন কিছু করেই আমি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চাই। ক্রেতাদের পছন্দ মতো নানা স্বাদের চা, কফি বানাই। লেবু থেকে মধু— সব দিয়ে চা বানাই। এর পরে গত মার্চ মাসে কাপ বানানোর পরিকল্পনা করি। বিস্কুট দিয়ে তৈরি এই কাপ খেতেও খুব ভাল। যন্ত্রপাতি কিনে নিজেই বাড়িতে বানাই।’’ আপ্পার দোকানে চার রকমের বিস্কুটের কাপ থাকে। চকোলেট, স্ট্রবেরি, ম্যাঙ্গো এবং পেস্তা স্বাদের। এই কাপে চা, কফি দুই-ই পাওয়া যায়। তবে আপ্পার দোকানে চায়ের আসল সঙ্গী মাটির ভাঁড়ও রয়েছে। তার চাহিদাও অনেক বেশি। আপ্পা বলেন, ‘‘যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, তার সঙ্গে লড়াই কি সহজ নাকি! আর আমার কাপেরা ভাঁড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেই। এর মধ্যেই যা ভালবাসা মিলেছে, সেটাই অনেক বড় পাওয়া।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tea
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy