Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Airport

Kolkata Airport: অঙ্ক বইয়ে ধুলো, টফি বিক্রির হিসেব কষেই দিন কাটছে বালকের

বিমানবন্দরের এক নম্বর গেট সংলগ্ন বাসস্টপ ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে টফি বিক্রি করে দেবনাথ।

নষ্ট শৈশব: বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেট বাসস্টপে দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র

নষ্ট শৈশব: বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেট বাসস্টপে দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১ ০৭:১২
Share: Save:

এ যেন অনেকটা সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতার সেই দু’টি লাইনের মতো পরিস্থিতি— ‘ঘরেতে অভাব, পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া/ পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া’!

বিমানবন্দরের এক নম্বর গেট বাসস্টপের কাছে কাচের বয়ামে টফি বিক্রি করছে বছর দশেকের দেবনাথ দাস। টফি তার খুব প্রিয়। কিন্তু যতই প্রিয় হোক না কেন, ওই টফিতে হাত দেওয়া যাবে না। কারণ, সেগুলি বিক্রি করতে হবে। সারা দিনে ওই রকম এক বয়াম টফি বিক্রি করতে পারলে সে পাবে ৩০০ টাকা। লাভ থাকবে ২০০ টাকার মতো। ওই ৩০০ টাকা থেকে ১০০ টাকা চলে যাবে টফি কিনতে, যা পরের দিন বিক্রি করবে সে। বাকি ২০০ টাকা বাবার হাতে তুলে দিতে হবে।

বিমানবন্দরের এক নম্বর গেট সংলগ্ন বাসস্টপ ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে টফি বিক্রি করে দেবনাথ। পেট্রল পাম্পে যাঁরা তেল নিতে আসেন, তাঁদের বলে, ‘‘কাকু, টফি নেবেন?’’

বারাসতের বামনগাছি এলাকার ভোলানাথ প্রাইমারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে দেবনাথ। তার কথায়, “স্কুল তো বন্ধ। বাড়িতে মোবাইল ফোনও নেই যে, অনলাইন ক্লাস করব। বাবা রিকশা চালান। দাদা হোটেলে কাজ করত। হোটেল বন্ধ বলে দাদার কাজ নেই। বাড়িতেই আছে। তাই গত কয়েক মাস ধরে বাড়িতে বসে না থেকে সকালে টফি বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়ছি। বাবাকে কিছুটা সাহায্য করা হয়।”

একসঙ্গে চারটে করে টফি প্লাস্টিকে মুড়ে বিক্রি করে দেবনাথ। দাম দশ টাকা। টফি বিক্রির ফাঁকেই সে বলে, “পুরো এক বয়াম টফি বিক্রি করতে পারলে তবেই ছুটি। অনেক সকালে বামনগাছি থেকে চলে আসি। সারা দিনে এক বয়াম বিক্রি হয়ে যায়। বিকেলে বাড়ি ফিরতে পারলে মাঠে ফুটবল খেলতে যাই।”

আর পড়াশোনা? প্রশ্ন শুনে দেবনাথের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘পড়াশোনা এখন কী ভাবে হবে? স্কুলই তো বন্ধ। বাড়িতে ফোন নেই। পাড়ার এক দাদা টিউশন দেন ঠিকই, কিন্তু সেখানে পড়ার সামর্থ্য নেই।’’ এখন স্কুলে মিড-ডে মিল দিচ্ছে। তার বাবা সেই সামগ্রী আনতে স্কুলে যান। মিড-ডে মিলের সঙ্গে কিছু পড়াও দেন স্যরেরা। পড়াশোনা বলতে ওটুকুই।

মুখে মাস্ক পরে টফির বয়াম হাতে নিয়ে ঘুরতে থাকা ওই বালককে এক নম্বর গেট বাসস্টপ এলাকার অনেকেই চিনে গিয়েছেন। কেউ কেউ সহানুভূতি থেকেও রোজ ওর টফি কেনেন। এমনই এক অফিসযাত্রী অরুণ মজুমদার বললেন, “করোনার জন্য এমনিতেই বাস কম। বাসস্টপে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। দেবনাথ এলে ওর থেকে চারটে টফি রোজ কিনি। নিজে খাই, অফিসের বন্ধুদেরও খাওয়াই। মনে হয়, কোনও ভাবে সাহায্য করলাম।”

এ ভাবে গত কয়েক মাসে এক নম্বর গেট এলাকার পরিচিত মুখ হয়ে যাওয়ায় দেবনাথের টফির ব্যবসা ভালই চলছে। সাত দিনে কত টফি বেচে কতটা লাভ থাকল, দ্রুত অঙ্ক কষে সেই হিসেব বলে দিতে পারে দেবনাথ। তার কথায়, “অঙ্ক কষতে খুব ভাল লাগত আমার। কিন্তু এখন আর অঙ্ক বই উল্টেপাল্টে দেখা হয় না বেশি। বাবা, মা অবশ্য পড়তে বলেন। তবে টফি বিক্রি করতে করতেই তো দিন কেটে যায়। ভালই লাগছে এই কাজ করতে।”

স্কুল আবার খুললে সে কি ফিরে যাবে ক্লাসে, না কি এই ভাবে টফিই বিক্রি করে যাবে?

উত্তরটা জানা নেই দেবনাথেরও।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Airport Teenage Boy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy