প্রতীকী ছবি।
করোনার সুরক্ষা-বিধি মানার বিষয়ে পড়ুয়াদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও সচেতন করেছে শিক্ষা দফতর। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, করোনা-বিধি সত্যিই কতটা মানছেন শিক্ষকেরা? সম্প্রতি কসবার চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলে প্রথমে এক শিক্ষিকা কোভিডে আক্রান্ত হন। তার পরে ওই স্কুলের আরও দু’জন শিক্ষিকার করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে বলে খবর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যে সব পড়ুয়া ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংস্পর্শে এসেছিল, তাদের প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। তবে রিপোর্ট এখনও আসেনি। প্রশ্ন উঠেছে, পড়ুয়াদের উপরে যাঁরা নজরদারি চালান, সেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেরাই কি করোনা-বিধি ঠিকমতো মানছেন? শহরের শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, শুধু চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলই নয়, আরও দু’-একটি স্কুল থেকে শিক্ষকদের অসুস্থতার খবর পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সব খবর প্রকাশ্যে আসছে না। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা দফতরের কর্তারা মনে করছেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে।
ওই কর্তাদের মতে, পড়ুয়াদের থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেক বেশি বাইরে বেরোতে হয়। অনেকেই কয়েক বার বাস বা ট্রেন পাল্টে স্কুলে আসেন। নিজেদের প্রয়োজনে হাটেবাজারেও যেতে হয় তাঁদের। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “শিক্ষকদের সব সময়ে মনে রাখা উচিত, স্কুলে পড়ুয়াদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটান তাঁরা। তাই আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে তাঁদের।”
শুধু পারিবারিক নানা কাজেই নয়, শিক্ষকদের একাংশকে এখন ভোটের প্রশিক্ষণ নিতেও যেতে হচ্ছে। সেখানে আবার একসঙ্গে অনেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাই প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া শিক্ষকদের আরও বেশি করে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।
স্কুলে পড়ুয়াদের দূরত্ব-বিধি মেনে বসতে বলেছে শিক্ষা দফতর। সেই সঙ্গে টিচার্স রুমে শিক্ষকদেরও দূরত্ব-বিধি মানতে বলা হয়েছে। তবে সেই নির্দেশ শিক্ষকেরা মানছেন কি না বা সব স্কুলে সেই বিধি মানার মতো পরিসর আছে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বা বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারীর দাবি, তাঁদের স্কুলে শিক্ষকদের বসার জায়গা অনেকটাই বড় এবং এখন যে হেতু শিক্ষকেরা সকলে স্কুলে আসছেন না, তাই তাঁদের দূরত্ব-বিধি মেনে বসার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু এ শহরে এমন বহু ছোট স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষকদের বসার ঘরও খুব ছোট।
ওই সমস্ত স্কুলে শিক্ষকদের বসার জন্য একাধিক ঘর বরাদ্দ করার কথা বলেছেন শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁদের মতে, এখন যে হেতু সব ক্লাস হচ্ছে না, তাই বন্ধ থাকা কোনও ক্লাসরুমেও দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষকেরা বসতে পারেন।
বেশির ভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষই পড়ুয়াদের জন্য টিফিনের বিরতি রাখেননি। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বললেন, “এখন লম্বা সময় ধরে ক্লাস হচ্ছে না। পড়ুয়ারা টানা তিন-চার ঘণ্টা ক্লাস করে চলে যাচ্ছে। তাই টিফিনের বিরতি রাখা হয়নি।” পড়ুয়ারা না আনলেও শিক্ষকেরা অবশ্য টিফিন আনছেন। তাঁদেরই একাংশের অভিযোগ, টিফিন খাওয়ার সময়ে শিক্ষকেরা অনেকেই বিধি মানছেন না। দু’তিন জন শিক্ষক একসঙ্গে একে অপরের টিফিন ভাগ করে খাচ্ছেন, এমনটাও দেখা গিয়েছে। এমনকি, বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে একসঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এই ধরনের অভ্যাস বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছে শিক্ষা দফতর।
শুধু তা-ই নয়, স্কুলে পড়ুয়াদের ধাতব কিছু পরে আসতেও বারণ করা হয়েছে। এক অভিভাবক বললেন, “ওই নিষেধাজ্ঞার পরে আমি আমার
মেয়েকে কানের দুল ও ঘড়ি না পরিয়ে স্কুলে পাঠিয়েছি। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকারা কি নিয়ম মানছেন?
তাঁরা তো অনেকেই গয়না পরে স্কুলে আসছেন।’’ যদিও শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি মানতেই তাঁদের একাংশ কিছু গয়না পরেন। সেগুলো বাদ দিয়ে অন্য কিছু পরে আসতে তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়া— সবাইকেই করোনা-বিধি কঠোর ভাবে মানতে হবে। স্কুল শিক্ষা দফতর যে সমস্ত নিয়ম মানার কথা বলেছে, তা পালন করতে হবে সবাইকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy