ভিক্টোরিয়ার ঘটনাকে ইস্যু করে অস্বস্তি আড়াল করছে বিজেপি। —ফাইল চিত্র
গত শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ছিল পুরোপুরিই ‘পরিকল্পিত’। প্রকাশ্যে ওই ঘটনা নিয়ে ‘আক্রমণাত্মক’ ভূমিকা নিলেও একান্ত আলোচনায় অনেকেই স্বীকার করে নিচ্ছেন, ওই ঘটনায় সামগ্রিক ভাবে দলের ক্ষতিই হয়েছে। ঘটনার দিনই দলের একাধিক নেতা দলের অন্দরে জানিয়েছিলেন, কিছু নেতা-কর্মীর ‘অবিমৃশ্যকারিতা’র জন্য তাঁদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
তার পর থেকেই খোঁজখবর শুরু হয় ওই ঘটনা নিয়ে। ময়নাতদন্তে জানা যায়, ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ নয়, ওই ঘটনা ছিল পুরোপুরি ‘পরিকল্পিত’। কারা ওই পরিকল্পনা করেছিলেন, সে বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে উঠে আসে রাজ্য যুবমোর্চার দুই নেতা সৌমিত্র খাঁ এবং শঙ্কুদেব পণ্ডার নাম।
ওই দিনের ঘটনা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে গোটা দেশে। যে ভাবে মমতা ওই ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তৃতা না দিয়ে পোডিয়াম ছেড়েছেন, তাতে ঘটনাটি ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আধঘণ্টারও বেশি সময়ের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই ঘটনা নিয়ে কোনও শব্দ ব্যয় করেননি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রচারের হাতিয়ার করাই ছিল রাজ্য বিজেপি-র লক্ষ্য। কিন্তু উল্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে অনুষ্ঠানের সেই অংশটি, যেখানে মমতা তাঁর প্রতিবাদ জানিয়ে পোডিয়াম ছাড়ছেন। যদিও তার পর সৌজন্য দেখিয়ে সারাক্ষণই তিনি মঞ্চে বসেছিলেন।
রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরিকল্পনা করেছিল দলের যুবশাখা। সাংসদ সৌমিত্র এবং শঙ্কুই নাকি একদল কর্মীকে‘ সংগঠিত’ করেছিলেন অনুষ্ঠানে ওই স্লোগান দেওয়ার জন্য। যা নাকি জানাই ছিল না রাজ্য নেতৃত্বের! সোমবার বিজেপি যুবমোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্রকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। সংগঠনের সহ-সভাপতি শঙ্কুদেবের প্রত্যাশিত ভাবেই দাবি, ওই ঘটনা ‘সংগঠিত’ ছিল না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাংলায় বা ভারতে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি কি নিষিদ্ধ নাকি?’’ এটা কি ঠিক যে, সে দিন যুবমোর্চার কর্মীরাই ওই ধ্বনি তুলেছিলেন? রাজ্য বিজেপি-র একাংশ যা বলছে? শঙ্কুদেবের জবাব, ‘‘কে ধ্বনি দিয়েছিল জানি না। কেউ আলাদা করে যুবমোর্চার কথা বলে থাকলে সেটা অপপ্রচার। এর পিছনে কোনও সাংগঠনিক চিন্তাভাবনা ছিল না। আর ‘জয় শ্রীরাম’ বলা তো কোনও পাপ নয়!’’
তবে শনিবার ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানে হাজির থাকা এক বিজেপি নেতার বক্তব্য,‘‘মঞ্চের একেবারে সামনের দিকে যাঁরা বসেছিলেন, তাঁরা ওই ধ্বনি তোলেননি। মাঝামাঝি জায়গা থেকেই ‘জয় শ্রীরাম’ বলে চিৎকার শুরু হয়।’’ ওই ঘটনাকে ভাল চোখে দেখছে না রাজ্যের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) নেতৃত্বও। সঙ্ঘের বক্তব্য, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়া অন্যায় নয় ঠিকই। কিন্তু সে দিনের অনুষ্ঠানের যে গুরুত্ব এবং গাম্ভীর্য ছিল, সেখানে কোনও ধ্বনি দেওয়াই কাম্য ছিল না। সঙ্ঘের এক কর্তার দাবি, ‘‘যাঁরা এটা করেছেন, তাঁরা আদতে সংগঠনেরই ক্ষতি করছেন। মানুষের কাছে হিন্দুত্ববাদীদের সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে।’’
তবে দলের ভিতরে এবং সঙ্ঘ পরিবারে এমন প্রশ্ন উঠলেও বিজেপি নেতারা ওই বিষয়ে মমতাকে আক্রমণের নীতি নিয়েছেন। ঘটনার দিনই রাজ্য দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ওই ধ্বনি তোলার বিরোধিতা করলেও পরে তাঁকে কার্যত চুপ করিয়ে পাল্টা বক্তব্য জানাতে শুরু করে দেন দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা। রবিবার কৃষ্ণনগরে দিলীপ বলেন, ‘‘আমায় প্রতি দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কালো পতাকা দেখায়। কিন্তু আমি কোনও দিন তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিইনি। আমি বলি, তোমাদের এর থেকে বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই।’’ সেদিনই ওই মর্মে টুইট করেছিলেন কৈলাসও।
মুখে এ সব বললেও রাজ্যনেতৃত্বের একটা চিন্তা রয়েই গিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টাকে কী ভাবে নেবেন! এক রাজ্যনেতার কথায়, ‘‘নেতাজি জয়ন্তী পালনের কমিটি গঠন থেকে ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠান— সবেতেই মোদী’জি সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুর কেটে যায় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে। ওটাই দুধে চোনা ঢেলে দিয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, সামনেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর রাজ্য সফর। তখন তিনি রাজ্যনেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠকও করবেন। সেখানে এই প্রসঙ্গে তিনি কী বলবেন, তা নিয়েও চিন্তা এবং জল্পনা শুরু হয়েছে বিজেপি শিবিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy