Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Accident

মেশিনে কেটে যাওয়া দু’হাত জুড়ল পিজি

সরস্বতী প্রেসে দীর্ঘদিন কাজ করছেন শঙ্কর। গত মঙ্গলবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টের গেজেট ছাপানোর কাজ করছিলেন।

হাত জোড়া দেওয়ার পরে সোমবার এসএসকেএমে শঙ্কর সাহা। নিজস্ব চিত্র

হাত জোড়া দেওয়ার পরে সোমবার এসএসকেএমে শঙ্কর সাহা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:৫৬
Share: Save:

ছাপাখানার যন্ত্রে সবে কাগজ ঢুকিয়েছিলেন বছর ঊনচল্লিশের যুবকটি। আচমকাই কাগজ কাটার ছুরি এসে পড়ে তাঁর দু’হাতের কব্জির উপরে। হাতের দিকে তাকিয়ে বেলঘরিয়ার বাসিন্দা শঙ্কর সাহা দেখেন, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। চোখের সামনে পড়ে রয়েছে কব্জির জোড় থেকে কাটা অংশ। হাত জোড়া লাগবে, ভাবেননি তিনি। সেটাই সম্ভব করল এসএসকেএম হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ।

সরস্বতী প্রেসে দীর্ঘদিন কাজ করছেন শঙ্কর। গত মঙ্গলবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টের গেজেট ছাপানোর কাজ করছিলেন। ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘটে দুর্ঘটনা। হাসপাতালে শঙ্কর বলেন, ‘‘ওই সময়ে মনের অবস্থা কী ছিল, বোঝাতে পারব না। সামনে কাটা হাত দুটো পড়ে রয়েছে। রক্তে চারপাশ ভেসে যাচ্ছে। হাত জোড়া না লাগলে তো কিছু করার নেই, এই ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম।’’ শঙ্করের আর্তনাদ শুনে তড়িঘড়ি ছুটে আসেন ছাপাখানার অন্য কর্মীরা। হাতের অবস্থা দেখে প্রথমে তাঁরাও ঘাবড়ে যান। বিজন দাস নামে এক কর্মী সোমবার জানান, খানিক ধাতস্থ হওয়ার পরে শঙ্করকে প্রথমে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কাটা অঙ্গ প্লাস্টিকে মুড়ে নিয়ে গেলে যে জোড়া লাগানো যায়, তা বিভিন্ন সময়ে খবরের মাধ্যমে জেনেছিলেন তাঁরা। তাই ওই যুবকের কাটা দুই হাত প্লাস্টিকে মুড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কামারহাটি ইএসআই থেকে আর জি কর হয়ে শঙ্করকে পাঠানো হয় এসএসকেএমে। সেখানে পৌঁছনো মাত্র তাঁকে ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করানো হয়। দ্রুত চলে আসেন প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা।

প্লাস্টিক সার্জন, অ্যানাস্থেটিস্ট মিলিয়ে ১৩ সদস্যের একটি চিকিৎসক-দল গড়া হয়। চিকিৎসক সৌভিক অধিকারীর নেতৃত্বে যুবকের ডান হাতের অস্ত্রোপচারে ছিলেন সৌম্য গায়েন, দেবরাজ সাহা, মেহরাজ শেখ ও জয়া লিমা। বাঁ হাতের অস্ত্রোপচারে চিকিৎসক কল্যাণ দাসের নেতৃত্বে ছিলেন সৌরভ শেঠিয়া, শ্বেতা, অজয় পাঠক এবং অনির্বাণ বসু। অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেটিস্টের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক শর্বরী সোয়াইকার নেতৃত্বে সেই দায়িত্ব পালন করেন নীলোৎপল সরকার এবং সায়ন্তন বসু।

এ দিন প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান গৌতম গুহ জানান, রোগীর একটি হাত দুর্ঘটনায় কাটা পড়েছে বা আঙুল বাদ গিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে দু’টি হাত কেটে যাওয়ার বিষয়টি সচরাচর শোনা যায় না। এই ধরনের অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, দু’টি হাতের জন্য চিকিৎসকদের পৃথক দল গড়ে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেওয়া সহজ নয়। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘কব্জির যে অংশে আঘাত লেগেছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ধমনী, শিরা রয়েছে। ধমনীর সঙ্গে ধমনী, শিরার সঙ্গে শিরা জোড়ার পাশাপাশি স্নায়ু এবং হাতের জোড়ও নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন।’’

২০১৬ সালে ওড়িশায় এ ধরনের একটি ঘটনার নজির রয়েছে। কিন্তু এই রাজ্যে এমন ঘটনার কথা স্মরণ করতে পারছেন না এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘এটা হাসপাতালের দলগত সাফল্য। অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ প্রত্যেক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ভাবা যায় না।’’

একই সঙ্গে যে ভাবে পদ্ধতি মেনে কাটা হাত হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তার তারিফও করছেন চিকিৎসকেরা। এসএসকেএম সূত্রের খবর, সম্প্রতি প্লাস্টিকে মুড়ে কাটা হাত নিয়ে বহির্বিভাগে এসেছিলেন এক রোগী। কিন্তু প্লাস্টিকে ফুটো থাকায় কাটা অংশটি জলের সংস্পর্শে চলে আসে। ফলে সেটি আর জোড়া লাগানো যায়নি।

এ দিন হাসপাতালে শুয়ে শঙ্কর বলেন, ‘‘আঙুলগুলো নাড়াতে পারছি। বেকার হয়ে গেলে মেয়েকে কী ভাবে মানুষ করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। এখন আর সেই চিন্তা নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Health SSKM Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy