Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Giant Encephalocele

SSKM: জটিল অস্ত্রোপচারে শিশুকে ভারমুক্ত করল পিজি

চওড়ায় ১৫ সেন্টিমিটার ও লম্বায় ৮ সেন্টিমিটার আয়তনের ওই থলিটির ওজন ছিল প্রায় এক কেজি।

অস্ত্রোপচারের পরে মায়ের কোলে ছোট্ট বাবলি। এসএসকেএমে।

অস্ত্রোপচারের পরে মায়ের কোলে ছোট্ট বাবলি। এসএসকেএমে। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২১ ০৭:০৩
Share: Save:

একরত্তির মাথার উপরে যেন আরও একটি ‘মাথা’! সদ্যোজাত মেয়েকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন বাবা। মেয়েকে কোলে নিয়ে মা ভাবতেন, ‘এমন হল কী করে!’ কোলে তুলে খাওয়ানোরও উপায় ছিল না। মাথার নীচে হাত দিলেই প্রবল কাঁদত শিশুটি। অনেকেই বলতেন, ‘এ বাচ্চা বাঁচবে না।’ সম্প্রতি আড়াই মাসের ওই শিশুর মস্তিষ্কে প্রায় চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করে তাকেই স্বাভাবিক জীবন দিল এসএসকেএম হাসপাতাল।

গত ২৪ এপ্রিল প্রথম সন্তান জন্মালেও বাসন্তীর নফরগঞ্জের বাসিন্দা, মণ্ডল দম্পতির সংসারে খুশির বদলে এসেছিল আশঙ্কা। চিন্তায় রাতে চোখের পাতা বন্ধ করতে পারতেন না গাড়িচালক বাবলু মণ্ডল। ‘মেয়ে সুস্থ হবেই’ বলে স্ত্রী উমাকে সব সময়ে সান্ত্বনা দিতেন বাবলু। টিউমারের মতো দেখতে সেই বিশাল মাংসের থলিতে এক দিন ‘ঘা’ দেখা দিল। শ্বশুরবাড়ির লোকের কথায় মেয়েকে এসএসকেএমে নিয়ে এসেছিলেন বাবলু। সেখানে চিকিৎসা শুরুর মুখেই ঘটল আর এক বিপত্তি। পরীক্ষায় জানা গেল, শিশুটি করোনায় আক্রান্ত।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টানা ১৫ দিন করোনার সঙ্গে লড়াই করে বাড়ি ফেরে সেই ছোট্ট বাবলি। কিন্তু ওই মাংসের থলির ভারে ওঠানো যেত না তাকে। এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুটি ‘জায়ান্ট এনসেফ্যালোসিল’-এ আক্রান্ত ছিল। অর্থাৎ, গর্ভস্থ শিশুর মাথার খুলি ফুটো হয়ে সেখান দিয়ে মস্তিষ্কের ‘প্যারাইটাল লোব’-এর (এটি হাত-পা নাড়তে সাহায্য করে) একটি অংশ ওই মাংসের থলির মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছিল। সময়ের সঙ্গেই বেড়েছে থলির বহর। চওড়ায় ১৫ সেন্টিমিটার ও লম্বায় ৮ সেন্টিমিটার আয়তনের ওই থলিটির ওজন ছিল প্রায় এক কেজি। পিজি-তে বাবলির অস্ত্রোপচার করা শিশু স্নায়ু-শল্য চিকিৎসক কৌশিক শীলের কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত বিশ্বে ১০০টির মতো জায়ান্ট এনসেফ্যালোসিলের ঘটনা জানা গিয়েছে। দ্রুত সেটি বাদ না দিলে শিশুটির জীবন বিপন্ন হত।’’

বাবলু বলেন, ‘‘উমা যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন ইউএসজি করে সমস্যা কিছুটা বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা যে প্রায় আর একটি মাথা, তা কেউ বুঝতে পারেননি। তখন শুধু বলা হয়েছিল, মস্তিষ্কে একটা সমস্যা রয়েছে।’’ তাই জন্মের পরে মেয়েকে দেখে চমকে উঠেছিলেন ওই যুবক। নবজাতিকার শল্য চিকিৎসক সুমনকুমার দাসের কথায়, ‘‘ওঁদের আকুতি উপেক্ষা করতে না পেরে ছুটির দিনেও চলে এসেছিলাম হাসপাতালে। শিশুটিকে পরীক্ষা করে জানাই, অস্ত্রোপচার করে থলি বাদ দিতে হবে। শয্যা খালি হতেই ওঁদের ফোন করে ডেকে নিই। কিন্তু বাদ সাধে কোভিড।’’

জুলাইয়ের প্রথমে পিজিতে ভর্তি হয় বাবলি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, শরীরের তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার মতো ঝুঁকি কাটিয়ে ৬ জুলাই নবজাতক শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক দীপঙ্কর রায়, স্নায়ু-শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শুভাশিস ঘোষের তত্ত্বাবধানে কৌশিকবাবু ও সুমনবাবু-সহ অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক প্রবীর দাস, অমৃতা রায়, হিমালয় দত্ত শিশুটির অস্ত্রোপচার করেন। কৌশিকবাবু ও সুমনবাবু জানাচ্ছেন, বেরিয়ে আসা প্যারাইটাল লোবের যে অংশ ঠিক রয়েছে, সেটিকে মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে, খারাপ অংশটা (ডিসজেনেটিক) বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরে শরীরের অন্য জায়গা থেকে চামড়া নিয়ে মাথার কাটা অংশ বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, এ জন্য পরবর্তী কালে শিশুটির মস্তিষ্কের বিকাশে কোনও সমস্যা হবে না।

একরত্তি এখন সুস্থ। কোলে নিলে আর কাঁদে না বাবলি। মেয়েকে কোলে নিয়ে উমা জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী রে, এ বার বাড়ি যাবি তো।’

অন্য বিষয়গুলি:

Surgery baby SSKM Giant Encephalocele
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy