—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আরও একটা দুর্গাপুজো চলে এল। এ বারও পুজোয় উৎসবে ফেরা হল না এসএসসি ২০১৬ নবম থেকে দ্বাদশের মেধা তালিকাভুক্ত অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থীদের। রবিবার ছিল তাঁদের প্রতীক্ষার ১২৯৭ তম দিন। চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, আর জি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে চিকিৎসকদের প্রতীক্ষা পেরিয়েছে ৫০ দিনের কিছু বেশি। আর তাঁদের প্রতীক্ষার ১২৯৭ দিন অতিক্রান্ত। জুনিয়র চিকিৎসকদের মতো তাঁদেরও প্রশ্ন, আর কত দিন? গত তিনটি দুর্গাপুজো তাঁদের বিষাদে কেটেছে। এ বার পুজোয়ও তার থেকে মুক্তি পেলেন না তাঁরা।
নবম থেকে দ্বাদশের ওই চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, প্রথমে ২০১৯ সালে প্রেস ক্লাবে ২৯ দিন অবস্থান ও অনশনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসে সেই অবস্থান উঠে যায়। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এর পরে তাঁরা সল্টলেকের করুণাময়ীতে অবস্থান বিক্ষোভে ছিলেন ১৮৭ দিন। হাই কোর্টের অর্ডার নিয়ে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তাঁরা বসেন। সেই থেকে টানা প্রতীক্ষা চলছেই। চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, এখন হয়তো আগের মতো ধর্না মঞ্চে ভিড় হয় না। কোনও দিন হয়তো কেউ আসেন না ধর্নামঞ্চে। তবে তাঁদের প্রতীক্ষার যে অবসান হয়ে যাচ্ছে, এমনটা নয়।
চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ফল বেরিয়েছিল ২০১৭ সালে। নবম থেকে দ্বাদশের এক চাকরিপ্রার্থী অভিষেক সেন বলেন, ‘‘নিয়োগ প্যানেলে এবং ওয়েটিং লিস্টে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা আদালতকে জানিয়েছে সিবিআই। সাদা খাতা জমা দেওয়া, র্যাঙ্ক টপকানোর মতো বহুমুখী দুর্নীতি হওয়াতেই আমরা যাঁরা ওয়েটিং লিস্টে আছি, তাঁদের নিয়োগ হল না। নবম থেকে দ্বাদশ মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজারের মতো চাকরিপ্রার্থী এখনও অপেক্ষা করছি নিয়োগের। আমাদের দাবি ওয়েটিং লিস্টে থাকা সবাইকে নিয়োগ দিতে হবে। কারণ দুর্নীতি না হলে তো আমরা সবাই চাকরি পেতাম।’’ যেমন অভিষেক জানাচ্ছেন, তাঁর একাদশ-দ্বাদশে ইতিহাসে র্যাঙ্ক ৩৩। তিনি আরটিআই করে জেনেছেন, ৫৪ তম র্যাঙ্কে থাকা ব্যক্তি চাকরি পেয়েছেন।
গত কয়েক বছরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বিকাশ ভবনে বৈঠকে বসেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ক্যামাক স্ট্রিটেও বৈঠক হয়েছে তাঁদের। নানা প্রতিশ্রুতি পেলেও কাজ কিছুই হয়নি। এক সময়ে সরকার থেকে ‘সুপার নিউমেরিক পোস্টে’ নিয়োগ করতে চাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে কিছু অনিয়ম রয়েছে বুঝে সেই প্রস্তাব বাতিল করে দেয় হাই কোর্ট। গত কয়েক বছরে আদালতের নির্দেশে শুধু ৬৩ জনের মতো নিয়োগ হয়েছে।
তনয়া বিশ্বাস নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘পুজো নিয়ে আলাদা করে আর কোনও আনন্দ হয় না। স্বামী বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। আমার চাকরি হলে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসত। পুজোর কেনাকাটা, ছেলের জন্য কিছু কিনে দেওয়া আর হয়ে ওঠে না।’’ তাঁর মতে, গত ১০ বছর নবম থেকে দ্বাদশে কোনও নিয়োগ নেই। অথচ শিক্ষকেরা অবসর নিচ্ছেন প্রতি বছর। স্কুলে পড়াশোনার পরিকাঠামো ক্রমেই যে খারাপ হচ্ছে, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের।
তাঁদের আক্ষেপ, মানুষ যখন উৎসবের আয়োজন করছেন, তখন তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভের ১৩০০ দিনের উদ্যাপনের। অভিষেক বলেন, ‘‘ক’দিনের মধ্যেই আমাদের অবস্থানের ১৩০০ দিন হবে। কী ভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, তার পরিকল্পনা করছি।’’
অবস্থানের সহস্রতম দিনে চাকরিপ্রার্থীদের জীবনযন্ত্রণা বোঝাতে নিজের চুল কেটে ফেলেছিলেন এক প্রার্থী রাসমণি পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা কি হচ্ছে? একের পর এক পুজো চলে যাচ্ছে। কিন্তু পথেই বসে আছি। আমরা চাই, সরকার সুপ্রিম কোর্টে দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy