Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Road repair

Road repair: শারদ ‘উপহার’-এ তাপ্পি মারা রাস্তার ঐতিহ্য আর কত বছর

রাস্তায় তাপ্পি মারার পরম্পরা আর কত দিন? রাস্তা সারাইয়ে এই ‘আসছে বছর আবার হবে’-র রীতি কত বছর চলবে?

বেহাল: এমনই খন্দে ভরে রয়েছে মা উড়ালপুলের নীচের রাস্তা। মঙ্গলবার, পার্ক সার্কাসে।

বেহাল: এমনই খন্দে ভরে রয়েছে মা উড়ালপুলের নীচের রাস্তা। মঙ্গলবার, পার্ক সার্কাসে। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:০০
Share: Save:

প্রতি পুজোর আগে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ শহরবাসীকে শারদীয়ার উপহার দেন। তা হল খানাখন্দময়, বেহাল পথকে তাপ্পি মেরে চলাচলযোগ্য করে দেওয়া। চলতি বছরেও পুজোর আগে সমস্ত বেহাল রাস্তায় তাপ্পি দেওয়ার (প্যাচওয়ার্ক) কাজ হবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।

যার প্রেক্ষিতে অনেকের প্রশ্ন, রাস্তায় তাপ্পি মারার পরম্পরা আর কত দিন? রাস্তা সারাইয়ে এই ‘আসছে বছর আবার হবে’-র রীতি কত বছর চলবে?

বছর তিনেক আগে এক মামলার প্রসঙ্গে দেশের খানাখন্দ ভরা রাস্তার কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাখ্যা দিয়েছিল ‘ভয়ানক’! এও বলেছিল,—‘রাস্তার মেরামতির বিষয়টি বিভিন্ন রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেনে বিস্মিত হচ্ছি।’

এক ট্র্যাফিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘সাময়িক ভিত্তিতে রাস্তা সারাই করে চলাচলযোগ্য করা যায় ঠিকই। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অন্তর সারাইয়ে এই যে খরচ, হিসেব করলে দেখা যাবে দীর্ঘস্থায়ী মেরামতির খরচের থেকে তা অনেক বেশি।’’ তবে কলকাতায় মূল রাস্তার নীচ দিয়ে পানীয় জল ও নিকাশির পাইপলাইন যাওয়ায় দীর্ঘস্থায়ী রাস্তা মেরামতিতে পরিকাঠামোগত সমস্যার কথাও মেনে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, জলের পাইপলাইনে ফাটল হলে জল বেরিয়ে রাস্তার নীচের অংশের ক্ষতি করে। সেই ক্ষতিই রাস্তার অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক প্রীতম আইচের কথায়, ‘‘রাস্তা খারাপ হয় নীচ থেকে। তাই সারাইও করতে হয় নীচ থেকে। তবে সেটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। তাড়াহুড়ো করে হয় না।’’

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহা সড়ক মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল, এই সময়ে শুধুমাত্র পথে গর্ত থাকার কারণে বছরপিছু গড়ে ২৭০০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন এর দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।’’ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে খানাখন্দের কারণে দুর্ঘটনা ১.৯ শতাংশ কমলেও এর জেরে মৃত্যু ৬.২ শতাংশ বেড়েছে। এই কারণে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে যথাক্রমে ২০১৫ এবং ২১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

যদিও এই তথ্য নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। তাঁদের বক্তব্য, দুর্ঘটনার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষেত্রে গাড়িচালক, যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত গতি, যান্ত্রিক ত্রুটি বা পথচারীদের অসাবধানতাকে দায়ী করা হয়। এমনকি, ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’-র ট্র্যাফিক দুর্ঘটনা সম্পর্কিত রিপোর্টেও তারই প্রতিফলন দেখা যায়। যেমন, ২০১৯ সালে দেশে পথ দুর্ঘটনার জন্য যানবাহনের বেলাগাম গতিকে দায়ী করা হয়েছে ৫৫.৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। রেষারেষি বা চালকের অসাবধানতার কারণে ২৭.৫ শতাংশ, আবহাওয়া ৩.২ শতাংশ, মাদকাসক্ত বা মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য ১.৯ শতাংশ এবং যানবাহনের ত্রুটিকে ১.৩ শতাংশ পথ দুর্ঘটনায় দায়ী করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, খারাপ রাস্তার বিষয় আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তা দুর্ঘটনার অন্য কারণ বা ‘আদার কজ়’-এ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’-এর অধীনস্থ ‘সেন্ট্রাল রোড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা তথা বর্তমানে ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল রোড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর ‘ইন্ডিয়াআরএপি’-র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শুভময় গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, রাস্তার উপরিভাগের (রোড সারফেস) কারণে যত দুর্ঘটনা হয়, সে তথ্যের ক্ষেত্রে খামতি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সিংহভাগ দুর্ঘটনায় গাড়িচালক বা গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটিকে দায়ী করা হয়। এটা বিশ্লেষণ করে দেখা হয় না, সংশ্লিষ্ট রাস্তার নকশায় কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না, অথবা পথচারীদের হাঁটার জন্য ফুটপাতে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, না কি তাঁদের গাড়ির রাস্তায় নেমে
আসতে হয়েছে।’’

পুরসভার রাস্তা দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাস্তা খারাপের আরও একটি কারণ, বিভিন্ন পরিষেবার কাজের জন্য ক্রমাগত রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি। এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘খোঁড়া রাস্তা মেরামতি করলে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা তার উপর দিয়ে গাড়ি না চলা বাঞ্ছনীয়। অথচ সারাইয়ের ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই সেখান দিয়ে যানবাহন চলতে থাকে। ফলে রাস্তা দ্রুত খারাপ হয়।’’

কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, শহরের খারাপ রাস্তা সম্পর্কে তথ্য আদানপ্রদানের জন্য পুলিশ-পুরসভার একটি যৌথ দল রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর খারাপ রাস্তার তালিকা পুরসভাকে দেওয়া হয়। ওই কর্তার কথায়, ‘‘তবে কোথায় রাস্তা খারাপ, কোন রাস্তায়
আলো লাগবে, সে ব্যাপারে প্রতি বছর পুজোর আগে একটা বিস্তারিত তালিকা পুরসভাকে দেওয়া হয়। সেই মতো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সে কাজ হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Road repair FirhadHakim Durga Puja 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy