প্রচারে নেই মাস্ক। স্থানীয়দের সঙ্গে খোশমেজাজে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী কানাইলাল পোদ্দার। নিজস্ব চিত্র।
কেউ বলছেন, জিতে এলে জোর দেবেন এলাকার নিকাশির সংস্কার এবং পানীয় জলের উন্নয়নে। কেউ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, বেকার সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন। অনেকে আবার গোটা ওয়ার্ডের হাল ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। কলকাতা পুর ভোট-যুদ্ধ এ হেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসে সরগরম থাকছে দিনভর। কিন্তু এরই মধ্যে যে প্রশ্নটা উঠছে তা হল, ওমিক্রনের আতঙ্ক যখন ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কত জন প্রচারে করোনা সচেতনতার বিষয়টি তুলে ধরছেন?
বাস্তব চিত্র বলছে, ডান থেকে বাম, সব দলের কুশীলবেরাই তাঁদের ভবিষ্যতের ‘স্বপ্ন পূরণের’ কথা বলতে ব্যস্ত থাকছেন। সেখানে খানিকটা হলেও ব্রাত্য করোনা সচেতনতা। শহরবাসীর একাংশের এ-ও অভিযোগ, ‘‘প্রচারে তো প্রার্থীরাই কোভিড-বিধি মানছেন না। এর উপরে তাঁরা একে অপরকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত। সেখানে অন্যকে সচেতনতার পাঠ দেওয়ার সময় কোথায়?’’ যদিও ভোট-যুদ্ধের খেলোয়াড়েরা প্রায় সকলেই দাবি করছেন, তাঁরা করোনা-বিধি মানছেন। সচেতনতার প্রচারও করছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যে যে ভাবে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন প্রচারের সময়ে করোনা-বিধিকে আলাদা করে মাথায় রাখছেন না অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্বই।’’ অনির্বাণবাবু আরও বলেন, ‘‘বার বার বলা হচ্ছে, যে কোনও রকম ভিড় বা জমায়েত করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য আদর্শ। যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর আসছে, তাঁরা কোনও না কোনও অনুষ্ঠান অথবা ভিড়ে গিয়েছিলেন। তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের থেকে আর একটু সচেতনতা আশা করছি।’’ একই মত অন্য চিকিৎসকদেরও। কারণ বিধানসভা ভোটের সময়ে তাঁরা বার বার আবেদন করেছিলেন প্রচার এবং সভায় করোনা-বিধি মেনে চলতে ও ভোট প্রচারের অঙ্গ হিসাবে করোনা সচেতনতার কথা রাখতে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। যার ফল মিলেছিল দ্বিতীয় ঢেউয়ে।
মাস্ক না থাকলে কর্মী-সমর্থকদের প্রচারে আসতে তিনি বারণ করে দিচ্ছেন বলে দাবি করলেন ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিধায়ক দেবাশিস কুমার। তাঁর কথায়, ‘‘মাস্ক না পরলে প্রচারে আসার দরকার নেই বলে স্পষ্ট জানাচ্ছি। প্রচারে বেরিয়ে কাউকে মাস্ক ছাড়া দেখলে আগে তাঁকে সেটি পরতে বলছি। এক প্রবীণ মহিলা মাস্ক ছাড়া আমায় মালা পরাতে এসেছিলেন, আমি হাত জোড় করে তাঁকে অনুরোধ করেছি নিয়ম মানতে।’’ বেহালা (পশ্চিম)-এর ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী সিপিএম কোঅর্ডিনেটর তথা এ বারের প্রার্থী রত্না রায় মজুমদারও দাবি করলেন, তাঁর ওয়ার্ডে করোনা ও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি সচেতনতার প্রচারও করা হচ্ছে। রত্নাদেবী বলেন, ‘‘প্রার্থী হিসেবে আমি যেমন মাস্ক পরছি, দূরত্ব- বিধি মেনে চলছি, সাধারণ মানুষকেও একই কথা বলছি। আর কোভিড, ডেঙ্গি নিয়ে পুর স্বাস্থ্য দফতরের কাজ তো চলছেই।’’
তবে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঘিঞ্জি এলাকায় প্রচারে সব সময়ে যে কোভিড-বিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। তিনি বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাই সরু গলি। সেখানে প্রচারে ভিড় হচ্ছে। তাতে সব সময়ে করোনা-বিধি মানা যাচ্ছে না। বিধি মানার কথা বললেও, সকলে যে সেটা মানছেন তেমনও নয়।’’ অতিমারিতে দূরত্ব-বিধিকে মান্যতা দিতে তিনি এখনও পর্যন্ত একটি পথসভাও করেননি বলেই দাবি করছেন ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী রাজীব সাহা। বলছেন, ‘‘আপাতত পথসভা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। প্রার্থী হয়েছি বলে নয়, রাস্তায় কেউ থুতু ফেললে, মাস্ক না-পরলে তাঁকে নিয়ম মানতে অনুরোধ করার কাজ আগেও করেছি। এখন প্রচারে বেরিয়েও করছি।’’
শল্য-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হিসাবে থাকেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। কিন্তু মানুষ যদি দেখেন তাঁর পছন্দের জনপ্রতিনিধি মাস্ক পরছেন না, দূরত্ব-বিধি মানছেন না, তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে সাধারণের উপরে। তা থেকে অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, করোনা বোধহয় চলেই গিয়েছে। তাই শুধু নিজের সুরক্ষা নয়, সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে এক জন জনপ্রতিনিধিকে আগে সচেতন হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy