পাশাপাশি: বাড়ছে সংক্রমণ। তবে দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের ফুড কোর্টের ভিড়ে দূরত্ব-বিধি মেনে চলার বালাই নেই। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
সামান্য অক্সিজেন বললে কম বলা হবে! রীতিমতো ভ্যাকসিন। ‘পুজো-ভ্যাকসিন’! আর তাতে চাঙ্গা হয়েই যেন সাহস তুঙ্গে। অন্যান্য বার (কোভিড-পূর্ববর্তী স্বাভাবিক সময়ে) পুজোর শেষে দশমী থেকে কালীপুজো পর্যন্ত রেস্তরাঁ ব্যবসায় ঢিমে গতি থাকত। ২০২১-এ সেই শ্লথতাও তত জোরালো নয়।
অথচ, খাতায়-কলমে কোভিডের ঢেউ মিলিয়ে যাওয়ার নামগন্ধ নেই। পুজোর ক’দিন জন-বিস্ফোরণের পরে বরং আশঙ্কা অনুযায়ী সংক্রমণ বাড়ছে। তাতে স্রেফ লেক টাউনের বুর্জ খলিফা গোছের দ্রষ্টব্যের অবদানই সব নয়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আঙুল উঠবে রেস্তরাঁর ভিড়ের দিকেও। পূর্ব ভারতের হোটেল, রেস্তরাঁ সমিতির কর্তা সুদেশ পোদ্দার বলছেন, “অতিমারির জোর ধাক্কার পরে পুজোয় রেস্তরাঁ কারবার অস্বাভাবিক রকমের ভাল ব্যবসা করেছে। ২০১৯-এর পুজোয় (যখন কোভিড ছিল না) যা ব্যবসা হয়েছিল, তার ২৫ শতাংশ বেশি ব্যবসা হয়েছে। ২০২০-র পুজোর সঙ্গে তুলনা করলে তা দ্বিগুণেরও বেশি।” আপাতত সমস্যা পুজোর পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে। কোভিড ফের বাড়তে থাকায় রাজ্য সরকার ২০ অক্টোবরের পর থেকে রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে রেস্তরাঁ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে, পুজোর সময়ের মতো মধ্যরাত বা আরও বেশি ক্ষণ পর্যন্ত রেস্তরাঁ খোলা রাখার ছাড় থাকছে না। সেই সঙ্গে ৫০ শতাংশের মতো টেবিল খালি রাখারও নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
কিন্তু বাস্তবে তা কত দূর মেনে চলা হচ্ছে? ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, বাইপাসের ধারের কয়েকটি পানশালা, রেস্তরাঁ সময় মতো বন্ধ করা হচ্ছে না। সাউথ সিটি মলের জেনারেল ম্যানেজার দীপনারায়ণ বিশ্বাস বলছেন, “এই মলের কয়েকটি সর্বভারতীয় ও বহুজাতিক রেস্তরাঁ চেন থেকে ফুডকোর্ট, পানশালা বা লাউঞ্জ— আশাতীত ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে ঝাঁপ বন্ধে আমরা সজাগ। হিসাব করেই শেষ অর্ডার নেওয়া বা লোক ঢোকানো চলছে।” কিন্তু অর্ধেক টেবিল খালি রাখার বিষয়টি নিয়ে থাকছে ধন্দও। দীপনারায়ণবাবু বলছেন, “নিয়ম সর্বত্র ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কি না, তা আগামী সপ্তাহান্তেই বোঝা যাবে। সপ্তাহের কেজো দিনে ফুডকোর্টে ভিড় হলেও সর্বত্র তত ভিড় হয় না।’’
দেশে-বিদেশে প্রথম সারির একাধিক রেস্তরাঁ চেনের কর্ণধার অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “ভদ্র ভাবে ‘না’ বলতেও জানতে হয়। পুজোর কলকাতা এ বার বাইরে বেরিয়ে ভালমন্দ খেতে বা বাড়ির চৌহদ্দি থেকে বেরোতে অস্বাভাবিক আকুতি দেখেছে। উপায় নেই দেখে তখন অনেককে ফিরিয়েছি। লোকজন পর পর তিন দিন ধরেও মেনল্যান্ড চায়নায় খেতে এসেছেন। এখন আবার অন্য কারণে না বলতে হচ্ছে।” তিনি বলছেন, “শেষ অর্ডার তাড়াতাড়ি নিতে হচ্ছে বলে দুপুরের বিরতির পরে সন্ধ্যায় রেস্তরাঁ খোলার সময় এগিয়ে আনা হচ্ছে। কিন্তু কোভিড-বিধি মানছি। দু’টি ডোজ়ের পরে লোকে অকুতোভয় হলেও আমরা বোঝাচ্ছি, অর্ধেকের বেশি টেবিলে কাউকে বসানো যাবে না।’’ পার্ক স্ট্রিটের ‘বার্বিকিউ’-এর রাজীব কোঠারিও বলছেন, “আমাদের রেস্তরাঁ সারা সপ্তাহ সন্ধ্যায় ভর্তি থাকে। কিন্তু সব নিয়ম মানা হচ্ছে।”
‘অলিপাব’-এর কর্মচারীরা কিন্তু জানালেন, সম্প্রতি পুলিশ এসে বুঝিয়ে গিয়েছে, কখন ঝাঁপ বন্ধ করতে হবে। তবে অর্ধেক টেবিল খালি রাখার বিষয়ে জানেন না তাঁরা! তপসিয়া এবং সল্টলেকের দু’টি পানশালা-লাউঞ্জেও টেবিল খালি রাখা নিয়ে বিভ্রান্তি। বদ্ধ রেস্তরাঁয় খাওয়ার সময়ে ওয়েটার মাস্ক পরলেও যে কোভিড ছড়াতে পারে, সেই বিষয়টি বুঝতে হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তারেরা। চিনা খাবারের চেন ‘চাউম্যান’ এবং বিরিয়ানি চেন ‘অউধ ১৫৯০’-এর দুই কর্ণধার, শিলাদিত্য ও দেবাদিত্য চৌধুরীরাও কোভিড-বিধি অক্ষরে অক্ষরে মানার পক্ষে। তাঁরা আশাবাদী, ‘‘এখন ‘টেক-অ্যাওয়ে’ সংস্কৃতিও খুব জনপ্রিয়। এর জন্যও পুজোর পরে মন্দার প্রভাব কম। এটা মাথায় রেখেই আমরা পরিকাঠামো সাজিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy