স্মরণ: সোনিকার ২৭তম জন্মদিনে সোনিকার বাবা-মায়ের সঙ্গে সাহেব ভট্টাচার্য। দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাবে, বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
জীবনের ২৭টি বসন্ত পার করার সন্ধ্যায় হয়তো কেক কেটে বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে দেদার মজা করতেন তিনি। তার বদলে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ফোটোর ফ্রেমে ঢুকে পড়েছেন।
সেই সোনিকা সিংহ চৌহানের জন্মদিনেই উঠে এল দায়িত্বশীল ভাবে গাড়ি চালানোর নয়া অঙ্গীকার। দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাবের অনুষ্ঠানে বুধবার এই সচেতনতা-অভিযানের ডাক দিয়েছে সদ্য প্রয়াত মডেলের নামে গড়ে ওঠা ‘সোনিকা সিংহ চৌহান ২৭ ফাউন্ডেশন’। শহরের প্রথম সারির আটটি অভিজাত ক্লাব তাতে সামিল হয়েছে। সোনিকার নামের ব্যাজ ক্লাবে ক্লাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে এ বার। যাঁরা পরবেন, তাঁরা হবেন ওই রাতের ‘ডেজিগনেটেড ড্রাইভার’। দল বেঁধে ক্লাবে পানাহারের আড্ডায় বসলেও এই ব্যাজধারী স্বেচ্ছাসেবীরা সেই রাতে এক ফোঁটা মদও ছোঁবেন না। নিজেরা স্টিয়ারিংয়ে বসে সঙ্গী-বন্ধুদের বাড়ি পৌঁছনোর দায়িত্ব নেবেন তাঁরাই।
২৯ এপ্রিল রাতে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গাড়িতে নাইট ক্লাব থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান সোনিকা। ঘটনায় ক’দিন আগেই বিক্রম গ্রেফতার হয়েছে। সোনিকার বাবা বিজয় সিংহ ও মা শ্যারন সিংহ চৌহান মনে করেন, এই গ্রেফতারি সুবিচারের পথে জরুরি ধাপ। এটুকু ছা়ড়া কন্যাহারা দম্পতির একটাই ইচ্ছে ছিল, সোনিকার পরিণতি মাথায় রেখে এ শহরে উঠে আসুক দায়িত্বশীল গাড়ি চালানোর সংস্কৃতি। ‘ডেজিগনেটেড ড্রাইভার’ উদ্যোগটি তারই অঙ্গ বলে অনেকে দেখছেন।
আরও পড়ুন: বিক্রম ফিরলেন বাছা খাবার আর শারীরচর্চায়
লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘নাগরিকদের থেকে উঠে আসা এই সচেতনতার বিকল্প নেই।’’ বস্তুত, সোনিকার মৃত্যুর পরে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো রুখতে পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে। ব্রেথ অ্যানালাইজার যন্ত্র হাতে নিয়ে শহরের কয়েকটি মোড়ে রেস্তোরাঁ-পানশালা ফেরত পথচারীদের পরীক্ষা করা শুরু হয়। পানশালা-রেস্তোরাঁগুলিও সচেতনতার প্রচারে নানা পরিকল্পনা করছে। এই পটভূমিতে, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করতে প্রথম সুসংহত উদ্যোগটি এল সোনিকার পরিজনদের তরফেই। হু-র বিধি অনুযায়ী, রক্তে ৩০ মিলিগ্রাম অ্যালকোহল মিশলেই তিনি গাড়ি চালানোর উপযুক্ত নন। কতটা মদ খেলে রক্তে অ্যালকোহল বিপদসীমা ছাড়াবে, তা বোঝা মুশকিল। এই অবস্থায় ঠিক হয়েছে, ‘ডেজিগনেটেড ড্রাইভার’-এর ব্যাজ যিনি পরবেন, ওই সন্ধ্যায় মদ ছোঁবেন না তিনি।
সোনিকার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেন বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা। আর আয়োজনের পুরোভাগে থেকে সব সামলালেন সোনিকার মা-বাবাই। মেয়ের মৃত্যুর পরে নানা চোরাস্রোতের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ধৈর্য রেখেছেন বিজয় সিংহ ও শ্যারন সিংহ চৌহান। তদন্তের প্রাথমিক পর্বে পুলিশের ঢিলেমি নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পুলিশ কমিশনারকে তাঁরা চিঠি লিখেছেন। সঙ্গে মেয়ের স্মৃতির উদ্যোগটি সফল করতেও লেগে থেকেছেন। এ দিনও বিজয়-শ্যারনই কান্না গিলে মেয়ের জন্মদিনের কেক কাটলেন। অডিও-ভিস্যুয়াল উপস্থাপনায় সোনিকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন, তাঁর প্রিয় বন্ধু-আত্মীয়েরা এবং মা-বাবা। সুপারমডেল নয়নিকা চট্টোপাধ্যায়কে ঢুকতে দেখে স্বাগত জানালেন সোনিকার কাছের বন্ধু, অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য। ইন্ডিয়ান কবাডি লিগ-এর টিভি শোয়ে সোনিকার সঙ্গে যিনি ‘হোস্ট’ ছিলেন, সেই শচীন কুম্ভার বলছিলেন, সোনুর মতো উচ্ছল মেয়ে নির্ঘাত স্বর্গেও সক্কলকে মাতিয়ে রেখেছে এখন!’’
শ্যারন-বিজয় জানালেন, সোনিকার স্মৃতিতে শহরের দুঃস্থ মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজও চলবে। ক্লাবে ক্লাবে ‘ডেজিগনেটেড ড্রাইভার’ অঙ্গীকারের ব্যাজ ও গাড়ির স্টিকারও বিলি হবে।
মা-বাবার এই অঙ্গীকারেই শহর কলকাতার মনে বেঁচে থাকবেন চির তরুণী সোনিকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy