Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Road Accident

Kolkata Accident: ক্ষতিপূরণ মেলেনি ছ’মাস পরেও, কোনও মতে দিন চলছে দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারের

দুর্ঘটনায় তাঁকে হারিয়ে টানাটানির সংসারে কোনও মতে দিন গুজরান করছেন মৃত টমাস সোমি কর্মকারের পরিজনেরা।

দুর্ঘটনা: যাদবপুরে এই জায়গাতেই ধাক্কা মারে গাড়িটি।

দুর্ঘটনা: যাদবপুরে এই জায়গাতেই ধাক্কা মারে গাড়িটি। ফাইল চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২২ ০৭:৫৪
Share: Save:

পার্লারে কাজ করে আয় বলতে মাসে হাজার ছয়েক। তারই মধ্যে দুই মেয়ের পড়াশোনা থেকে শুরু করে সংসারের খরচ। আড়াই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের দু’লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছ’মাস পরেও তা মেলেনি। ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন ধৃত গাড়িচালকও। দুর্ঘটনায় তাঁকে হারিয়ে টানাটানির সংসারে কোনও মতে দিন গুজরান করছেন মৃত টমাস সোমি কর্মকারের পরিজনেরা। রবিবার বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় ষষ্ঠী দাস নামে এক মহিলার মৃত্যুর পরে পথ নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

গত ২২ জানুয়ারি অন্যান্য দিনের মতোই কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বছর পঞ্চাশের টমাস। যাদবপুরের সুলেখা মোড়ের কাছে রাস্তার পাশে চা খেতে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। আচমকাই বিলাসবহুল একটি গাড়ি তীব্র গতিতে এসে কয়েক বার পাল্টি খেয়ে ফুটপাতের ওই চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। গাড়ির ধাক্কায় আহত হন সাত জন। তাঁদের উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে টমাস সোমি কর্মকারকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনায় গাড়িচালককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন বলেও জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। তদন্তের পাশাপাশি মাস দুই-আড়াইয়ের মধ্যে টমাসের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণের টাকা মেলেনি। কোনও মতে দিন গুজরান করছে টমাসের পরিবার।

ওই ঘটনার পর থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে আর বাঘা যতীনে থাকেন না মৃতের স্ত্রী সুনীতা কর্মকার। এখন পাটুলিতে দাদাদের সঙ্গে থাকেন তিনি। নাকতলার কাছে একটি বিউটি পার্লারে কাজ নিয়েছেন। সেখান থেকে মাসে ছ’হাজার টাকা মেলে। তবে পরিবারের বাকিরা সাহায্য করায় কোনও মতে চলছে সংসার। টমাসের দিদি রুবি কর্মকার বললেন, ‘‘সেই সময়ে বলা হয়েছিল, দু’মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ মিলবে। কাগজপত্রও নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এত দিন পরেও সেই ক্ষতিপূরণ মেলেনি।’’ রুবি জানান, ভাইয়ের দুই মেয়েই পড়াশোনা করছে। আত্মীয়েরা সবাই পাশে থাকায় কোনও মতে সংসারটা চলছে। রবিবার বিকেলে বালিগঞ্জ থানা এলাকায় দুর্ঘটনায় এক পথচারীর মৃত্যুর খবর শুনে ফের টমাসের সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবারের। রুবি বলেন, ‘‘এত নাকা-তল্লাশি, এত ক্যামেরা, এত পুলিশের পরেও এই দুর্ঘটনা কেন?’’ তাঁর কথায়, ‘‘কিছু মানুষের আনন্দের জন্য ভুগতে হয় গোটা পরিবারকে।’’

রবিবার বিকেলের দুর্ঘটনা মনে করাচ্ছে বছর তিনেক আগের এক দুর্ঘটনাকেও। ২০১৯ সালের ১৮ অগস্ট রাতে শেক্সপিয়র সরণি এবং লাউডন স্ট্রিটের সংযোগস্থলে এমনই একটি বিলাসবহুল গাড়ি পিষে দিয়েছিল চিকিৎসার জন্য এ দেশে আসা দুই বাংলাদেশি পথচারীকে। সেই ঘটনায় ওই গাড়ির চালকের আসনে কে ছিলেন, তা নিয়েও রহস্য তৈরি হয়। পরে শহরের একটি নামী রেস্তরাঁ-চেনের মালিকের ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিল তাঁর পরিবার। প্রথম বার আবেদন নামঞ্জুর হলেও পরে জামিনে মুক্ত হন সেই যুবক। তবে এত কিছুর পরেও বেপরোয়া গাড়ির দাপট যে কমেনি, তা ফের প্রমাণ করল রবিবারের দুর্ঘটনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy