আবার ফেসবুক পোস্ট করলেন কবীর সুমন। ফাইল চিত্র।
বিতর্ক থেমেও যেন থামছে না। ফোনালাপ নিয়ে রবিবার সকালেই ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করেন সুমন। তখন তিনি কিছুটা ‘ব্যাকফুটে’ চলে গিয়েছেন বলে মনে করা হলেও আবার তিনি ‘ফ্রন্টফুটে’ এসে পড়লেন। রবিবারের দ্বিতীয় পোস্টে কবীর সুমন লিখলেন, তাঁর কথা রেকর্ড করা হবে, এটা ওই সাংবাদিক তাঁকে জানাননি। অথচ যে ফোনালাপ নিয়ে বিতর্ক, সেখানে যে ব্যক্তির কণ্ঠস্বরের সঙ্গে কবীর সুমনের কণ্ঠস্বর মেলে, ছাপার অযোগ্য ভাষায় কিছু গালি দেওয়ার পর সেই ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘যা ব্রডকাস্ট কর’। অর্থাৎ, তিনি চেয়েছিলেন ওই ফোনালাপ সর্বসমক্ষে আসুক। এক রকম ভাবে ওই সাংবাদিককে ‘আদেশ’-এর ভঙ্গিতেই কথাগুলো বলা হয়েছিল। যদিও রবিবারের দ্বিতীয় পোস্ট অবশ্য বলছে অন্য কথা।
সুমন রবিবার দ্বিতীয় পোস্টে লেখেন, ‘একটি বিশেষ চ্যানেলের এক প্রতিনিধি যখন আমায় ফোন করেন তিনি কিন্তু আমাদের দুজনের কথাবার্তা রেকর্ড করার কথা আমায় বলেননি, আমার অনুমতি নেননি।’
এর পর সুমন যোগ করেন, ‘যে দলের এক নেতা, বর্তমানে বিধায়ক, মুখ্যমন্ত্রীকে, যিনি একজন মহিলা, সমানে ‘বেগম’ বলে যান, নন্দীগ্রামকে বলে যান ‘মিনি পাকিস্তান’ তাঁর দলকে মুখের কথায় আক্রমণ করতে পারব না আমি। তখন বিরোধীকে বলতে দিতে হবে।’
সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘পয়েন্ট ধরে ধরে আরও বলা যায়, কিন্তু আমি তা চাইছি না। সুযোগ বুঝে এক কমিউনিস্ট পার্টির নেতাও উপদেশ দিচ্ছেন। অর্থাৎ আমার বিরুদ্ধে ডান বাম ঐক্যবদ্ধ। ‘মেলাবেন তিনি মেলাবেন’ লিখেছিলেন কবি অমিয় চক্রবর্তী। ‘তিনি’ স্তরের নই আমি। কিন্তু, যা দেখছি, আমিও পারলাম।’
তবে তিনি যে উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে তা-ও উল্লেখ করেন সুমন। লেখেন, ‘যাই হোক, উত্তেজনা বাড়ানো নয়, প্রশমন। তাই দোষ কবুল। অন্য পক্ষকে কিছু করতে হবে না। ধরে নিন খুব ভয় পেয়ে গেছি। খুব। আমি বুড়ো মানুষ। এক ধাক্কাতেই কাৎ। তাই - না, বাবু, মারবেন না, ছেড়ে দিন।’
পরে লেখেন, ‘লুকিয়ে রেকর্ড করা একটি অডিও ক্লিপ যেমন অনেকে শুনেছেন। শুনে যাঁরা দুঃখ পেয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এই অধম। ইচ্ছে - তাঁদের নেমন্তন্ন করে খাওয়াই। বেশি না। পরিমিত। এই করোনার ঝামেলা মিটলে। আশা করি অধমকে সে সুযোগ দেবেন।’
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সুমন। লেখেন, তিনি যা করেছেন, তা দরকার হলেই আবার করবেন। পাশাপাশি লিখেছিলেন, ‘ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে স্বাভাবিক ভাবেই আমি আক্রান্ত। এটাই হওয়ার কথা। আরও হবে। আমার যায়-আসে না। যা করেছি তা, দরকার হলেই, আবার করব।’ সুমনের শনিবারের ফেসবুক পোস্ট বলছে, ফোনের ওই কণ্ঠ তাঁরই ছিল। যদিও সুমন ফোনালাপের প্রসঙ্গ তাঁর পোস্টে লেখেননি। পোস্টটি ‘পাবলিক’ও করা হয়নি। করা হয় ফেসবুকের ‘ওনলি ফ্রেন্ডস’ বিভাগে। অর্থাৎ, যাঁরা সুমনের বন্ধুর তালিকায় রয়েছেন, তাঁরাই ওই পোস্টটি দেখতে পাবেন।
শনিবারের এই পোস্টের পর তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ লেখেন, ‘জনপ্রিয় গায়ক বা প্রতিভাধর বুদ্ধিজীবী হলেই এ সব বলা যাবে, এটা হতে পারে না।’ শনিবারই এই ফোনালাপ নিয়ে তৎপর হয় রাজ্য বিজেপি-ও।
শিল্পী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। গেরুয়া শিবিরের দাবি, সুমনের মন্তব্য সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে ক্ষতিকর। এখানেই শেষ নয়, সজলের অভিযোগ, ধর্ষণের হুমকি এবং হিন্দুদের অপমান করেছেন সুমন। সুমনের শনিবারের ফেসবুক পোস্ট উল্লেখ করে আনন্দবাজার অনলাইন যে খবর পরিবেশন করে, তার স্ক্রিনশট-সহ একটি টুইট করেন বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রমুখের নজরেও আনতে চান অগ্নিমিত্রা। সেই সঙ্গে টুইটে লেখেন, ‘বাংলার মাকে ধর্ষণের মন্তব্য করা সুমনের থেকে রাজ্য সরকারের দেওয়া সমস্ত সম্মান ফিরিয়ে নেওয়া হোক।’
এর পরই রবিবার প্রথমে ক্ষমা চেয়ে প্রথম পোস্ট করেন সুমন। তার পর আসে তাঁর দ্বিতীয় পোস্ট। তার পর আবারও সুমনকে কটাক্ষ করে পোস্ট করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। যেখানে তিনি লেখেন, যে শব্দ ব্যবহার হয়েছে, তা নিন্দার। প্রতিবাদের। কবিতা ও গানের শব্দের জাদুকর সুমন ওই শব্দ ব্যবহারে ক্ষমা চেয়ে বিতর্ক শেষ করুন।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy