অনুপ সর্দার।
ডাক্তারের পরিবর্তে গুনিনকে ডেকে এনে চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষমেশ মারাই গেলেন দেগঙ্গার হরেকৃষ্ণ কোঙার কলোনির বাসিন্দা অনুপ সর্দার (৪০)।
জ্বরে আক্রান্ত ওই আদিবাসী যুবককে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। কিন্তু অনুপের পরিবার তাঁকে কলকাতায় না নিয়ে গিয়ে বাড়িতে এক গুনিনকে ডেকে আনেন। সেই গুনিন ‘জিন’ তাড়ানোর জন্য ঝাড়ফুঁক করেন। সেই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বৃহস্পতিবার ওই বাড়িতে যান প্রশাসন, পঞ্চায়েত ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। কিন্তু অনুপকে ফের হাসপাতালে নিতে রাজি হয়নি তাঁর পরিবার ও পরিজনেরা। উল্টে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আরও দুই গুনিনের কাছে। এর পরে শুক্রবার বাড়িতেই মারা যান ওই যুবক।
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন বলেন, ‘‘এই ঘটনায় ১০০ বছর পিছিয়ে গেলাম আমরা। কুসংস্কার আজও সমাজের কিছু মানুষকে গ্রাস করে রেখেছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’’
কিন্তু তার জন্য কী করছে প্রশাসন? স্বাস্থ্য দফতরই বা কী বলছে?
ঝাড়ফুঁকের খবর প্রকাশ্যে আসতেই বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আসে দেগঙ্গার বিডিও-র কাছে। সেই মতো অনুপের বাড়ি যান বিডিও সুব্রত মল্লিক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিন্টু সাহাজি-সহ কর্তা-ব্যক্তিরা। তাঁদের দাবি, অনুপের পরিবার ও প্রতিবেশীদের বুঝিয়েও ডাক্তার দেখানোর ব্যাপারে রাজি করানো যায়নি। অগত্যা তাঁরা ফিরে আসেন।
এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার বলেন, ‘‘নানা ভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ওঁদের রাজি করানো যায়নি। আমি নিজে দু’বার অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ওই বাড়িতে যাই। ওঁরা লিখে দিতে বলেন যে, রোগী মারা গেলে দায় আমাদের। সংসারের দায়ও নিতে হবে। কিছুতেই বুঝিয়ে ওঁদের রাজি করানো যায়নি।’’
এ দিন অনুপের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বামীর মৃতদেহের পাশে তিন বছরের মেয়ে ও ১১ বছরের ছেলেকে নিয়ে বসে স্ত্রী আঙুরবালা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। বললেন, ‘‘ওর শরীরে ভর করে থাকা শয়তানের দৃষ্টি কাটাতে তিন গুনিনের কাছে নিয়ে গেলাম। কিন্তু বাঁচল না।’’ পরে অবশ্য স্বীকার করেন, ‘‘ডাক্তারের কাছে না নিয়ে গিয়ে ভুল করেছি। এই ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাব, ভেবে পাচ্ছি না।’’
এ দিন দেগঙ্গা বাজার এলাকার ওই গুনিনদের এক জনের কাছে দেখা গেল জ্বরে আক্রান্তদের ভিড়। কাসেদ আলি নামে ওই গুনিন বলেন, ‘‘মানুষ বিশ্বাস করে আমার কাছে আসে। আমি সারানোর চেষ্টা করি। তবে অনুপের বাড়িতে গিয়ে দু’বার ঝাড়ফুঁক করা সত্ত্বেও ও সুস্থ না হওয়ায় আমি ওদের অন্যত্র নিয়ে যেতে বলি।’’
এ দিন দেগঙ্গায় আসে ‘পশ্চিমবঙ্গ অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদ’-এর ছয় সদস্যের দল। তাঁরা কথা বলেন বিডিও-র সঙ্গে। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খোকন সর্দার বলেন, ‘‘আদিবাসী সম্প্রদায় ও পরিবারটিকে বুঝিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেই আমরা এসেছিলাম। কিন্তু তার আগেই ওই যুবকের মৃত্যু হওয়ায় কিছুই করতে পারলাম না।’’ ওই এলাকায় এমন কুসংস্কার কাটাতে সচেতনতা শিবির করা হবে বলে জানিয়েছে পরিষদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy