কাউন্সিলর শান্তনু সেন। ফাইল চিত্র।
নীতি নির্ধারণ কমিটির (এথিক্যাল কমিটি) ছাড়পত্র নেই। অথচ পিএইচডি, এমফিল, ফেলোশিপ—সব কিছুই হয়। সেই বিভাগেই এমফিলে ভর্তি হয়ে দু’বছর ধরে স্টাইপেন্ড বা জলপানির টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসকদলের এক চিকিৎসক-বিধায়ক এবং রাজ্যসভার এক চিকিৎসক-সাংসদের বিরুদ্ধে। অবশ্য ঘটনার সময়ে ওই সাংসদ কাউন্সিলর ছিলেন।
ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই মতভেদ ও বিরোধ তুঙ্গে। চলতি বছরের মার্চে ওই বিভাগে জলপানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। চিঠি-চাপাটি চলে ওই প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের মধ্যে। অভিযোগ, কিছু দিনের মধ্যেই ফের তা চালু হয়।
প্রতিষ্ঠানের নাম ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’ বা এসটিএম। বিতর্কিত বিভাগটি হল—‘রিজেনারেটিভ মেডিসিন অ্যান্ড ট্রান্সলেশন্যাল সায়েন্সেস।’ এসটিএমের প্রায় ৫-৬টি বিভাগে পিএইচডি বা এমফিল চললেও রিজেনারেটিভ মেডিসিন বিভাগ ছাড়া কোথাও স্টাইপেন্ড চালু নেই। এর কারণ স্বাস্থ্যকর্তারা ব্যাখ্যা করতে পারেননি।
এই বিভাগেই ২০১৬-’১৮ শিক্ষাবর্ষে এমফিল করতে ভর্তি হন ২৩ জন। সেই তালিকায় ছিলেন চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি এবং চিকিৎসক-কাউন্সিলর শান্তনু সেন। নির্মলবাবু যোগ দেন ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ। শান্তনুবাবুর যোগদানের তারিখ ২০১৭ সালেরই ২০ মার্চ। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর একটি সরকারি নির্দেশিকা জারি করে (অর্ডার নম্বর-HF/O/MERT/1438/W-65/2018) এই দু’জন-সহ মোট ২৩ জনের নামে জলপানি অনুমোদিত হয়। জলপানির পরিমাণ, প্রতি মাসে ৩৮,৪০০ টাকা।
জলপানি অনুমোদিত হওয়া সেই অর্ডার। নিজস্ব চিত্র
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নির্মলবাবু দু’বছরের এমফিল শেষ করায় দু’ বছরের জলপানি পেয়েছেন। আর শান্তনুবাবু এক বছর পরে ছেড়ে দেওয়ায় এক বছরের টাকা পান।
তাই প্রশ্ন উঠেছে, জনপ্রতিনিধিরা কী করে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে জলপানি বা ভাতা নিতে পারেন?
রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর উত্তর, ‘‘এটা ওই বিভাগের প্রধান নিরঞ্জন ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসা করুন।’’ নিরঞ্জনবাবুর উত্তর, ‘‘ওঁরা ছাত্র হিসেবে নিয়েছেন, তাতে অসুবিধার কী আছে।’’
এমনিতে বিভিন্ন ভাতা মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের এক জন বিধায়ক মাসে ৮০-৮১ হাজার টাকার মতো পান। এর বাইরে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের বেতন, ভাতা বা জলপানি নেওয়ার কথা নয়। তা হলে এক জন টানা দু’বছর, অন্য জন এক বছর জলপানি নিলেন কী করে?
নির্মলবাবুর জবাব, ‘‘ওই সব টাকা তো আমি পড়াশোনার কাজে খরচ করেছি। এমফিলের জন্য ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বই কিনতে হত। অনেক বই আবার ফটোকপি করতে হত। তাতেই বেশির ভাগ টাকা ব্যয় হত। এমফিলে ভাল ফল করেছি। সেই সব বই ছাত্রছাত্রীদের দান করে এসেছি।’’
শান্তনুবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি সেই সময়ে শুধু কাউন্সিলর ছিলাম। সেই পদ লোকাল সেল্ফ গভর্নমেন্ট-এর আওতায়। ভাতা ছিল ৪৩০০ টাকা। কাউন্সিলরেরা স্টাইপেন্ড নিতে পারেন। আমি সেটা এমফিলে ঢোকার আগে জেনেই নিয়েছিলাম।’’
কেন এসটিএমের অন্য বিভাগের পিএইচডি বা এমফিলের ছাত্রছাত্রীরা জলপানি পান না?
নিরঞ্জনবাবুর জবাব, ‘‘ওখানে সব এমডি-র ছাত্রছাত্রীরা পড়েন। ওঁরা এমডি করার টাকা পান। তা ছাড়া, আমাদের মতো অসাধারণ কাজ অন্য কেউ তো করছেন না।’’ এর পাল্টা অবশ্য অভিযোগ উঠেছে, এসটিএমে সপ্তাহে তিন দিন বিকেলে এক ঘণ্টা করে একই ঘরে রিজেনারেটিভ মেডিসিনের পিএইচডি, ফেলোশিপ ও এমফিলের বিভিন্ন বর্ষের সব ছাত্রছাত্রীকে একসঙ্গে বসিয়ে ক্লাস হয়! গত জানুয়ারি থেকে সেটাও বন্ধ রয়েছে।
এসটিএমের চিকিৎসক-গবেষকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের অন্য বিভাগগুলিতে এমডি-র ইন-সার্ভিস প্রার্থীরা এমফিল বা পিএইচডি করে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে পরিষেবা দিয়েও জলপানি পান না। অথচ, রিজেনারেটিভ মেডিসিন বিভাগে মূলত বাইরে থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা (যাঁদের মধ্যে বিধায়ক, কাউন্সিলর ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকেরাও রয়েছেন), যাঁরা স্বাস্থ্য দফতরে কার্যত পরিষেবাই দেন না, তাঁরা জলপানি পাচ্ছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy