বিয়ের মরসুম মানেই কেটারিং ব্যবসার রমরমা। আর তারই
আড়ালে চলছিল অবাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারের কালোবাজারি। দরিদ্র মহিলাদের টাকার টোপ দিয়ে বাড়িতে ব্যবহার্য সেই সব গ্যাস সিলিন্ডার কিনে নিয়ে সেগুলি
বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছিল বিভিন্ন কেটারিং সংস্থাকে। অভিযোগ পেয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের নিউ টাউন থানার পুলিশ তাদের এলাকা থেকে এমন একশোরও বেশি
সিলিন্ডার আটক করেছে। সেগুলি আপাতত ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে নিউ টাউন থানাতেই। সিলিন্ডার ফেরত নেওয়ার জন্য গ্যাস সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হলেও সেগুলি এখনও পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই সংক্রান্ত চারটি মামলায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জরুরি পণ্যের কালোবাজারির অভিযোগে মামলাও রুজু হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, সিলিন্ডার যাঁরা সরবরাহ করেন, সেই কর্মীদের একাংশের সঙ্গে
যোগসাজশেই কালোবাজারির এই ব্যবসা চলছিল। এক বছরের মধ্যে এই ধরনের চারটি ঘটনা ঘটার পরে বিধাননগরের পুলিশ মনে করছে, এমন কারবার অনেক
জায়গাতেই চোরাগোপ্তা ভাবে চলছে। ফলে, এ নিয়ে তাঁরাও সতর্ক
রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় ঝাঁ-চকচকে নিউ টাউনের
আশপাশে তুলনায় অনুন্নত এলাকাও রয়েছে। যেখানে বহু নিম্নবিত্ত পরিবারের বসবাস। বহু পরিবারেরই দু’টি করে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। সেই সব পরিবারের মহিলাদের টোপ দিয়েই হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছিল
সিলিন্ডার। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ওই সব সিলিন্ডার গৃহস্থ বাড়ি থেকে কিনে এনে তা দিয়ে কাটা গ্যাসের কারবারও চালানো হচ্ছিল। বড় সিলিন্ডার থেকে গ্যাস
ছোট ছোট সিলিন্ডারে ভরেও বিক্রি করা হত। তদন্তকারীরা জানান, বিপজ্জনক বিষয় হল, অবৈধ
ভাবে আবাসিক এলাকার ভিতরেই ওই সব চোরাই সিলিন্ডার মজুত রাখা হত। স্থানীয় লোকজন
মারফত খবর পেয়েই সেই অবৈধ গুদামে হানা দিয়ে সিলিন্ডারগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই সব এলাকায়
এক জন মহিলার কাছে নগদ দু’তিনশো টাকা চলে আসা মানে সেটাও বড় ব্যাপার। ১১০০–১২০০ টাকা দিয়ে সিলিন্ডার গৃহস্থ বাড়ি থেকে কিনে নেওয়া হত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিয়ের মরসুমে
সেগুলি বিক্রি করা হত কেটারিং সংস্থাগুলিকে। কারণ, বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম অনেক বেশি। এ ভাবেই ঘুরপথে কম দামে গার্হস্থ্য গ্যাসের সিলিন্ডার অনেক কেটারিং সংস্থাই কিনে নেয়।’’ এর
পাশাপাশি, নিউ টাউন এলাকায় রাস্তায় এমন বহু খাবারের দোকান রয়েছে, যেখানে রান্না হয় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে। সেই সব ছোট দোকানিরাও
বাণিজ্যিক সিলিন্ডার কতটা কেনেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিশের মনে। চোরাই সিলিন্ডারের কারবারিরা রাস্তার দোকানেও সিলিন্ডার সরবরাহ করত বলে পুলিশের
ধারণা। তারা জানাচ্ছে, কোনও ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই
যে ভাবে সিলিন্ডার মজুত রাখা হত, তাতে যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)