অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট (এবিসি) আইডি-র কাজ করা নিয়ে তৈরি করা হবে ১২ জন অধ্যক্ষের বিশেষ কমিটি। মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাসের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজগুলির প্রায় ১৩৮ জন অধ্যক্ষ। সেখানেই প্রস্তাবিত হয় এবিসি আইডি তৈরি করার জন্য ১২ জন সদস্য মিলে এক কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটির দ্বারা এবিসি আইডি তৈরির সমস্ত কাজ এগোবে।
আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ মানস কবি বলেন, ‘‘মূলত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এবিসি আইডি সংক্রান্ত সমস্ত কাজই হয়ে গিয়েছে। সমস্যা হচ্ছিল ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়াদের এবিসি আইডি তৈরি করা নিয়ে। তবে আজকের বৈঠকের পর কমিটি তৈরি করা হলে কাজ দ্রুত এগোবে বলেই মনে হয়।’’
উল্লেখ্য, পড়ুয়াদের তথ্য সংরক্ষিত রাখতে ডিজিলকার ব্যবহারে জোর দিতে চাইছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই জন্য চলতি মাসের ১৩ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ সব কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন রেজিস্ট্রার-সহ অন্য আধিকারিকেরা। তবে অনলাইন বৈঠকে যোগ দিয়েও নিজেদের বক্তব্য পেশ করে বেরিয়ে এসেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজের ৯০ জন অধ্যক্ষ। এর পর মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সমস্ত কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই মতোই ১৮ মার্চ বৈঠক হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘কমিটি গঠন হলে আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করব। চাপের কারণে নতিস্বীকার করা হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ ভুল বার্তা। যাতে ভাল ভাবে কাজ এগোয়ে তার জন্যই এই কমিটি গঠন করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।’’
যে ১২ জন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়ে কমিটি তৈরি হবে, তাঁরা হলেন— দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, আশুতোষ কলেজের মানস কবি, নিউ আলিপুর কলেজের জয়দীপ ষড়ঙ্গী, গোয়েন্কা কলেজ অফ কমার্সের অভিজিৎ দত্ত, বেহালা কলজের শর্মিলা মিত্র, বিধানচন্দ্র কলেজের রমেশ কর, উমেশচন্দ্র কলেজের তোফাজ্জল হক, কেকে দাস কলেজের অধ্যক্ষ রামকৃষ্ণপ্রসাদ চক্রবর্তী, সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজের অপর্ণা দে, বিদ্যাসাগর কলেজের নাতাশা দাশগুপ্ত, বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজের রুমা ভট্টাচার্য এবং শিরাকোল মহাবিদ্যালয়ের সমীরণ মণ্ডল।
আরও পড়ুন:
নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘এই কমিটি তৈরি করার খুব প্রয়োজন । এই কমিটি গঠনের পর একটা প্রস্তাব পেশ করবে প্রথমে। তারপর সেই অনুযায়ী কাজ এগোবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করে এই কমিটি কাজ করবে।’’
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে অধ্যক্ষ মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে অধ্যক্ষরা ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক এবং অতিথি শিক্ষকেরা স্নাতকোত্তর স্তরের পরিদর্শন, পরীক্ষা মূল্যায়ন-সহ কোনও কাজই করতে পারবেন না— এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। যার জেরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে যে ক’জন অধ্যক্ষ সদস্য রয়েছেন তাঁদের মধ্যে চার জন পদত্যাগও করেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছিল তাঁরা এই সিদ্ধান্ত সংশোধন করা হবে। এর পর পড়ুয়াদের জন্য অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট (এবিসি) আইডি তৈরি করা, ডিজিলকার ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে অধ্যক্ষদের অনলাইনে বৈঠক ডেকেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। কিন্তু পুরনো সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে অধ্যক্ষ সংগঠনের তরফে বৈঠকের আগেই চিঠি দেওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে। চিঠিতে একাধিক দাবির উল্লেখ ছিল। তাই অধ্যক্ষেরা সেই অনলাইন বৈঠকে যোগ দিয়েও নিজেদের বক্তব্য পেশ করে বেরিয়ে এসেছিলেন। অধ্যক্ষদের দাবি ছিল সরাসরি বৈঠক করার। সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের সরাসরি বৈঠকে এবিসি আইডি তৈরি করার জন্য কমিটি গঠনের প্রস্তাব গ্রহণের পাশাপাশি পুরনো দাবি নিয়েও শীঘ্রই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্তর সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলেও জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার।