প্রতীকী ছবি।
কারও বয়স পাঁচ বা তার আশপাশে। তাতে কী! ওই খুদেরাই এখন বিশেষ ভাবে সক্ষম ৫৬টি শিশুর ‘দিদিমণি’। যে পদের পোশাকি নাম ‘ইন্টিগ্রেটর’। আর তাই প্রাপ্তি, মৌনী, সংযুক্তা, শ্রীময়ীদের বন্ধুত্বে বদলে যাচ্ছে সোহিনী, দিগন্ত, কোয়েল, সৌম্যদীপেরা। এমন দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিণত হচ্ছেন বড়রাও।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত বেহালার সখেরবাজারের এই স্কুল একটু একটু করে ভাঙছে সমাজের কিছু পুরনো ধারণা। সংস্থার কর্ণধার আরতি দে জানান, বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের সঙ্গে সুস্থ শিশুদের রাখলে কতটা পরিণত হয় ওরা, সেই ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ। বিশেষ প্রশিক্ষকদের সাহায্যে সেই শিক্ষা এখানে দেওয়া হয়। বেড়া ভাঙার উদ্দেশ্যে এখানে ইন্টিগ্রেটরদের নিজস্ব নাম দিয়েছে স্কুল। যেমন, প্রাপ্তির নাম সিন্ডারেলা, দেবাংশী ঘড়ুইয়ের নাম প্রিন্সেস, মৌনীর নাম এঞ্জেল এমনই সব।
শৈশবের এই স্কুলে কোনও বেড়া নেই। মৌনী, সংযুক্তাদের মতো শিশুদের বাবা-মায়েরা চাকরি করেন। তাই অভিভাবকেরা কাজের জায়গা থেকে না ফেরা পর্যন্ত স্কুলের শেষে ওদের ঠিকানা হয় এখানে। স্কুলে শেখানো ছড়া, আদব-কায়দা, অক্ষরজ্ঞান দাদা-দিদিদের শেখাতে থাকে সংযুক্তা-মৌনীরা।
অটিজ়মে আক্রান্ত সোহিনী সিংহের মা মৌসুমী মুখোপাধ্যায় এক জন সিঙ্গল মাদার। মহেশতলার বাসিন্দা মৌসুমী ছোট ছোট বিষয়ে মেয়ের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার কথা বলছিলেন। প্রতিদিন কর্মস্থলে যাওয়ার আগে মেয়েকে সখেরবাজারের স্কুলে দিয়ে যান তিনি। মৌসুমী বলেন, “ক’দিন আগে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে অসুস্থ বোধ করছিলাম। তাই মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসি। জানেন, ঘরে ফিরে ওই আমাকে গ্লুকোজ বানিয়ে দিল! ওখানে বাচ্চাদের থেকে গান, আঁকা, কম্পিউটার শেখে। আমার মেয়েটা যে কোনও দিন স্তোত্র পাঠ করবে, এমন ভাবিইনি। এখন তা-ও করে।”
এক মাকে এই অনুভূতি দেওয়ার জন্য অন্য মায়েদের ভূমিকাও কিছু কম নয়। দ্বিধা সংশয় যে কাজ করেনি তা নয়। তবে শৈশব সেই সবই নিজের মতো করে ভেঙেচুরে দিয়েছে। মৌনীর মা মিঠু কয়ারের বক্তব্যে তা স্পষ্ট। মিঠু বলেন, বিশেষ ভাবে সক্ষম বাচ্চাদের সঙ্গে মেয়েকে রেখেছি জেনে পরিচিত অনেকে আপত্তি করেছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, আমার মেয়ে ওদের মত হয়ে যাবে। এখন বলতে পারি, আমার পাঁচ বছরের সন্তান যে ভাবে মানুষকে ভালবাসতে শিখছে তাতে আমি গর্বিত।”
এই স্কুলের প্রথম ইন্টিগ্রেটর ময়ূখের মা সুপর্ণা রায় বলেন, আমার ছেলে এখন নবম শ্রেণির ছাত্র। বিশেষ ভাবে সক্ষম বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের সমাজে ভুল ধারণা রয়েছে যেগুলি ভাঙা জরুরি।
এই ভুল ভাঙার অন্যতম কারিগর আরতিদেবী বলেন, “বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মূল স্রোতের বাচ্চাদের সঙ্গে রাখলে অনেক বেশি সুফল পাওয়া যায়। আমরা বড়রা সঙ্কীর্ণ মনে ভাবি। শৈশবের কাছে সত্যিই সে সবের কোন মূল্য নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy