ফাইল চিত্র।
শহরের রাস্তা প্রাতর্ভ্রমণকারীদের জন্য কতটা নিরাপদ? কখনও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই প্রশ্নটা ওঠে। তবে, বুধবার রেড রোডে দুই প্রাতর্ভ্রমণকারীকে কাটারি ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লুট এবং আর এক প্রাতর্ভ্রমণকারীর ফোন ছিনিয়ে নিতে কাটারি দিয়ে তাঁকে কোপানোর মতো ঘটনার পরে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রক্তাক্ত ওই যুবকের ছবি দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, শহরের প্রাণকেন্দ্র ময়দান সংলগ্ন এলাকায় এমন ঘটনা যখন ঘটছিল, তখন পুলিশ কী করছিল? তা হলে কি ভোরের শহরে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না পুলিশ?
এই প্রশ্ন আরও জল-বাতাস পেয়েছে পুলিশেরই পরিসংখ্যানে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এ বছর ও গত বছরের অনেকটা সময় লকডাউন চললেও অনেকেই ভোরের শহরে পথে বেরিয়ে বিপদে পড়েছেন বলে পুলিশে অভিযোগ করেছেন। গত দু’বছরে ভোরবেলা শহরের পথে ছিনতাইয়ের অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ১৮২টি। এর মধ্যে ১২০টিই ঘটেছে বয়স্কদের সঙ্গে। ভোরের শহরে ইভটিজ়িং এবং যৌন হেনস্থার অভিযোগ জমা পড়েছে দেড়শোর কাছাকাছি। দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভোরের শহরে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যাও কিন্তু বেশি। অন্তত সাড়ে তিনশোটি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন গাড়িচালক বা পথচারী। কলকাতা পুলিশেরই একটি অংশের বক্তব্য, ভোরের দিকে নজরদারি যে কিছুটা কম থাকে, তা ঠিক। কারণ, ওই সময়ে বহু পুলিশ এলাকায় ডিউটি বদল হয়। রাতের ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীরাও সাধারণত ওই সময়েই থানায় ফিরতে শুরু করেন। এর সঙ্গেই থাকে ক্লান্ত শরীরে স্টিয়ারিংয়ে বসার বিপদ। তবে, অতীতের তুলনায় ভোরের শহরের নিরাপত্তা এখন বাড়ানো হয়েছে বলেই দাবি পুলিশের।
লালবাজার জানিয়েছে, বুধবার ভোরের ঘটনার পরে ময়দান ও সংলগ্ন এলাকায় কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ ডিভিশনের তরফে বৃহস্পতিবার থেকেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে চার জায়গায় পুলিশ পিকেট বসেছে। যার একটি থাকছে রেড রোড এবং মেয়ো রোডের সংযোগস্থলে, একটি উট্রাম রোডে, একটি ফোর্ট উইলিয়ামের দক্ষিণ গেটের সামনে এবং আর একটি কে পি ওভালের কাছে। এক জন অফিসারের নেতৃত্বে দু’জন করে কনস্টেবল থাকছেন ওই পিকেটগুলিতে। ময়দান এলাকায় আসা গাড়ি এবং মোটরবাইকগুলি পরীক্ষা করবে পিকেটের পুলিশ। এর পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে ওই এলাকায় পুলিশের মোটরবাইকে নজরদারিও। কলকাতা পুলিশে ময়দানই একমাত্র থানা, যার অধীনে কোনও নাগরিক বসবাস করেন না। ময়দানের নিরাপত্তা জোরদার করতে ২০০০ সালে এই থানা তৈরি হয়। তার আগে পর্যন্ত এই এলাকা থেকে প্রায়ই মৃতদেহ উদ্ধার হত। একাধিক ধর্ষণের অভিযোগও সামনে এসেছে ওই এলাকা থেকে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) আকাশ মাগারিয়া বলেন, “একাধিক অভিযোগ আসছিল। তাই ভোরে তো বটেই, সন্ধ্যার পরেও ময়দান এলাকার নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।”
প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অনেকেরই অবশ্য প্রশ্ন, ময়দানের নিরাপত্তা না-হয় বাড়ানো হল। কিন্তু শহরের বাকি অংশের কী হবে? অভিযোগ, ময়দানের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাতর্ভ্রমণের জন্য পরিচিত জায়গাগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা চোখে পড়েনি এ দিনও। রবীন্দ্র সরোবরে প্রতিদিন প্রাতর্ভ্রমণে যাওয়া কলেজশিক্ষক অরুণ মাইতি বললেন, “এখানেও কম ঘটনা ঘটেনি। ময়দানের ঘটনা শুনে বেরোতে ভয় করছিল। তবু এলাম, নিরাপত্তার কিছু কড়াকড়ি হল কি না দেখতে। সে ভাবে কিছুই চোখে পড়ল না।” একই দাবি দেশপ্রিয় পার্কে হাঁটতে যাওয়া সুমন দত্তগুপ্তের। তিনি বললেন, “পুলিশ তো ভোরে থাকেই না। এ দিনও তেমনই অবস্থা ছিল। কিছু ঘটে গেলে তার পরে সকলের হুঁশ ফেরে। পুলিশ আসতে আসতে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরতে পারলে হয়।” উত্তর কলকাতার সুভাষ সরোবরের প্রাতর্ভ্রমণকারী লীনা সরকারের মন্তব্য, “এ দিনও দেখলাম এখানকার অবস্থার কোনও বদল ঘটেনি। দিন আর রাতের ডিউটি চার্টে ভোরের সময়টাকেও গুরুত্ব দিক পুলিশ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy