কোনও একটি দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে, দিনের বেলায় তাপমাত্রা কত ডিগ্রি ছুঁতে পারে, আর্দ্রতা কেমন থাকবে, বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে কিনা— এমন নানা তথ্য তো আবহাওয়া দফতরের ওয়েবসাইট থেকেই পাওয়া যায়। কিন্তু এর বদলে একটু অন্য পথে হেঁটে যদি
স্কুলেই তৈরি করা যায় ছোটখাটো আবহাওয়া দফতর, বিষয়টা হয় একটু অভিনব। আর ঠিক এই কাজই শুরু করেছে শহরের বেশ কিছু স্কুলের পড়ুয়ারা। তারা তাদের স্কুলে ভূগোলের প্র্যাক্টিক্যাল রুমে তৈরি করে ফেলেছে ছোটখাটো আবহাওয়া দফতর।
স্কুল চলাকালীন ওই পড়ুয়ারা আশপাশের তাপমাত্রা মাপছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে কিনা, তারও আভাস দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই কাজে তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ। ওই বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক পুনর্বসু চৌধুরী বলেন, ‘‘এই ধরনের হাতেকলমে কাজের মাধ্যমে স্কুলপড়ুয়াদের আবহাওয়া বিজ্ঞান পড়া সম্পর্কে উৎসাহিত করা যাবে। পাশাপাশি, কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আবহাওয়ার তারতম্য কত, সেটাও বোঝা যাবে।’’
যেমন, সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা এমন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পেরে খুব খুশি। প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পরে ইতিমধ্যেই তারা দিনের আবহাওয়া পরিমাপ করতে শুরু করে দিয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সর্বাণী সেন বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের দুই পড়ুয়া-গবেষক দীপাঞ্জন মিশ্র এবং দেবাঙ্গনা রায়চৌধুরীর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজটা শুরু হয়। অষ্টম শ্রেণির ৩০ জন পড়ুয়া দিনের আবহাওয়া পরিমাপ করে অন্য পড়ুয়াদের জানাচ্ছে।’’ তিনি জানান, প্রতিদিন প্রার্থনার আগে ওই পড়ুয়ারা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অন্য পড়ুয়াদের দিনের আবহাওয়া সম্পর্কে পূর্বাভাস দিচ্ছে। যা থেকে সকলেই একটা প্রাথমিক ধারণা করতে পারছেন।
সরশুনার চিলড্রেন’স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন হাই স্কুল ফর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা শর্বরী সেনগুপ্ত জানান, তাঁদের স্কুলেও পড়ুয়ারা তৈরি করছে ছোট আবহাওয়া দফতর। তিনি বলেন, ‘‘আবহাওয়া নিয়ে চর্চা করলে ছাত্রীরা বুঝতে পারবে কোনও দিন কতটা গরম থাকবে, বৃষ্টি হবে কিনা। সেই অনুযায়ী সতর্ক হতে পারবে তারা। সেই সঙ্গে আবহাওয়া চর্চার মাধ্যমে ভূগোল, পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার উৎসাহও বাড়বে।’’
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে রয়েছে ক্লাইমেট ক্লক। দিনের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পড়ুয়ারা ক্লাইমেট ক্লক দেখে তা জানতে পারে।’’ শিয়ালদহের টাকি হাউজ় গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী জানান, ২৩ মার্চ ছিল ‘ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল ডে’। ওই দিন স্কুলের ছাত্রীরা আলিপুর আবহাওয়া দফতরের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। সারা দিনব্যাপী ওই কর্মশালায় তারা প্রাথমিক ভাবে শিখেছে, তাপমাত্রা কী ভাবে পরিমাপ করা হয়, কী ভাবেই বা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে।
পুনর্বসু বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া মেটিয়োরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি) তো তাদের মতো করে কলকাতা শহরের আবহাওয়া মাপছেই। কিন্তু স্কুলপড়ুয়ারাও হাতেকলমে এই কাজ করায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আবহাওয়া কেমন থাকছে, তার একটা সমান্তরাল রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।’’ তাঁর মতে, আইএমডি, কলকাতা শুধু আলিপুর এলাকার আবহাওয়া পরিমাপের কথা বলে। সেই সঙ্গে স্কুলপড়ুয়ারা যদি তাদের স্কুলের আশপাশের আবহাওয়া পরিমাপ করে, তা হলে বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আপেক্ষিক আর্দ্রতার একটা সারণি তৈরি করা যাবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)