চাকায় চাকায় প্রচার। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর মিছিল। বৃহস্পতিবার, শহরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
আগের রাতের তুমুল ঝড়বৃষ্টির বিপর্যয়, পরদিন সকাল থেকে রাখি উৎসব ও দুপুরে পথ-নিরাপত্তা নিয়ে মিছিলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এই ত্র্যহস্পর্শে বৃহস্পতিবার তালগোল পাকিয়ে গেল শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলির যান চলাচল।
দুপুর দুটোয় শুরু হওয়া কলকাতা পুলিশের এই মিছিল ছিল মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত। দুপুর ১২টা থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় লেনিন সরণি। গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও জওহরলাল নেহরু রোডে। ফলে ওই রাস্তাগুলিতে দুপুর থেকে ব্যাপক বেড়ে যায় গাড়ির চাপ। সিআইটি রোডে জমায়েত শুরু হতেই বন্ধ হয়ে যায় সেই রাস্তার যান চলাচলও। এর পরে মিছিল শিয়ালদহ উড়ালপুলের দিকে এগোলে বেলেঘাটা-শিয়ালদহ মোড়ে থমকে যায় যানবাহন। মহাত্মা গাঁধী রোডের দিকে মিছিল যাওয়ার সময়ে আটকে দেওয়া হয় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের শিয়ালদহমুখী গাড়িগুলিকে। মিছিল পৌঁছনোর আগেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা মোড়।
বিবেকানন্দ রোড, সিআইটি রোড, যশোর রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোড, বিধান সরণি, স্ট্র্যান্ড রোডের অবস্থা ছিল শোচনীয়। কাঁকুড়গাছি, মানিকতলা, শ্যামবাজার, কলেজ স্ট্রিেটর মতো বড় মোড়গুলি ছিল প্রায় স্তব্ধ। গিরিশ পার্ক থেকে কাঁকুড়গাছি, কুড়ি মিনিটের পথ পেরোতে লেগে যায় সওয়া এক ঘণ্টা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনভর হিমশিম খেল ট্রাফিক পুলিশ। তাদের বক্তব্য, শহরের যে কোনও অংশে বড় মিছিল থাকলেই এমন পরিস্থিতি হয়। কারণ মিছিলে পথ অবরুদ্ধ থাকায় অন্য দিকে ঘোরানো হয় গাড়ি। অথচ সেই অন্য পথে হয়তো আগে থেকেই গাড়ির চাপ চলছে। যার জেরে মিছিল-জনসভার এলাকা তো বটেই, জট পাকিয়ে যায় গোটা শহরের ট্রাফিকে। এই অবস্থা এড়ানোর বিকল্প কোনও পথ নেই। এ দিনও ঠিক এমনটাই হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। তার উপরে আগের দিনের ঝড়-বৃষ্টির জেরে শহরের বহু জায়গায় গাছ উপড়ে গিয়েছিল। এ দিন সেই গাছ সরানোর কাজের জেরেও বহু জায়গায় আটকে থাকে ট্রাফিক।
মিছিলের প্রস্তুতি অবশ্য ছিল আগে থেকেই। কয়েক দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা পথ দুর্ঘটনা কমাতে উদ্যোগী হয়েছেন। হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানো বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই কড়া পদক্ষেপ করেছেন তিনি। তাঁর নির্দেশেই এ দিন ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ শীর্ষক পদযাত্রা করে কলকাতা পুলিশ। পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। প্রথামাফিক এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ধর্মতলা না গিয়ে শিয়ালদহ, মহাত্মা গাঁধী রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা হয়ে মেয়ো রোডে ঘোড়সওয়ার পুলিশের মাঠের কাছে পৌঁছোন।
কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসার জানান, মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলের জেরে এমনিতেই কিছুটা অবিন্যস্ত ছিল শহরের যান চলাচল। এ ছাড়াও সকাল থেকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে রাখিবন্ধনে সামিল হয়েছেন বহু মানুষ, তাতেও আংশিক ভাবে থমকেছে ট্রাফিক। যাত্রাপথে ধর্মতলায় বিধান মার্কেটের কাছে মুখ্যমন্ত্রীও দু’জন সাফাইকর্মীকে রাখি পরান। পদযাত্রার শেষে ঘোড়সওয়ার পুলিশের মাঠের সামনে নব রূপে সজ্জিত মনোহর দাস তড়াগের উদ্বোধন করেন তিনি। মাঠে তখন ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের এই কাজটা পুরোপুরি আন্তরিকরতা দিয়ে করতে হবে। যাঁরা এই পদযাত্রায় হেঁটেছেন, সকলকে অনেক ধন্যবাদ। আমাদের উন্নয়নবদ্ধ, শপথবদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ, সংস্কৃতিবদ্ধ জীবন কাটাতে হবে।’’
এ দিন যাত্রার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, এই কর্মসূচি দলের নয়, সরকারের, বিশেষত পুলিশ দফতরের। সুতরাং, সেখানে নিয়ম মানতে হবে। দলের নেতা এবং কাউন্সিলরদের পদযাত্রার একেবারে পিছনের দিকে চলে যাওয়ার নির্দেশে দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, তাঁর সঙ্গে মঞ্চে উঠবেন শুধু স্থানীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্থানীয় বিধায়ক তথা সুদীপবাবুর স্ত্রী নয়না। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং সুদীপবাবু ও নয়নাকে পাশে নিয়ে পতাকা নেড়ে যাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, দলের নেতা মুকুল রায়, চলচ্চিত্র জগতের মুখ দেব, সোহম, অরিন্দম শীল, জুন মাল্য প্রমুখ এ দিনের কর্মসূচিতে যোগ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy