ওই পরিবার সূত্রের খবর, এ দিন দেবারতি জানিয়েছেন, ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে কেউ তাঁদের কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। শোনা যাচ্ছে, দূতাবাসের কর্মীরা কিভ ছেড়ে কয়েক দিন আগেই নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়েছেন। এই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কী, ভেবে পাচ্ছেন না ইউক্রেনে আটকে থাকা কয়েক হাজার ভারতীয় পড়ুয়া ও তাঁদের পরিবার।
দেবারতি দাস।
ফেরার সব পথই প্রায় বন্ধ। খারকিভ মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলের বাঙ্কার থেকে বেরোনোর উপায় নেই। সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ ক্রমাগত কমে আসছে। আর ক’দিন চলবে কেউ জানেন না। দিনরাত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে শহরটা। এ দিকে আর এক আন্তর্জাতিক রাজনীতির বলি হচ্ছেন এই পড়ুয়ারা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে ভারত বিরত থাকায় ইউক্রেনের সহযোগিতা মিলছে না বলে জানাচ্ছেন সে দেশে ভারতীয় পড়ুয়াদের একটি অংশ।
এই পরিস্থিতিতে খারকিভের বাঙ্কারে আটকে থাকা মেয়েকে সোমবার ভিডিয়ো কলে ভেঙে পড়তে দেখলেন হাওড়ার ইছাপুরের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক-দম্পতি নন্দলাল দাস ও রূপালি দাস। যুদ্ধের প্রথম দিন অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার থেকে মেয়ে দেবারতি দাসের সঙ্গে একাধিক বার ভিডিয়ো কলে কথা বলেছেন বাবা-মা। তখন মেয়েকে ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি। কিন্তু সোমবার সকালে সেই মেয়ের চোখে জল দেখে নিজেদের আর সামলাতে পারেননি তাঁরা। মঙ্গলবার ইছাপুরের বাড়িতে বসে নন্দলালবাবু বলেন, ‘‘প্রথম বার মেয়েকে কাঁদতে দেখলাম। মনটা ভাল নেই। ওর মা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কথা বলার ইচ্ছেটুকুও চলে যাচ্ছে।’’
২০২০ সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেনের খারকিভ ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়তে যান দেবারতি। বৃহস্পতিবারের পর থেকে হস্টেলের ‘বম্ব শেল্টারে’র বাইরে রাত কাটানোর নিয়ম নেই। নিজেদের ঘরে যাওয়ার অনুমতি মিলছে শুধু সকাল হলেই। দেবারতি জানিয়েছেন, তাও তাঁদের ন’তলার ঘরে নয়, অনুমতি মিলেছে একতলায় যাওয়ার। নন্দলালবাবু জানান, এ দিন দেবারতি তাঁদের জানিয়েছেন, দিনভর থেকে থেকে শেল আর রকেটের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে খারকিভের হস্টেল বাড়ি। চার দিকে আগুন আর ধোঁয়া। নন্দলালবাবু বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আরও এক সমস্যা, কমে যাচ্ছে বাঙ্কারে অক্সিজেনের সরবরাহ। এর পরে বেরোনো ছাড়া পথ থাকবে না।’’ কথাগুলো শেষ করে চশমা খুলে চোখ মুছলেন ইংরেজির প্রবীণ শিক্ষক। নিজেকে সামলে ফের বলেন, ‘‘এর মধ্যেও মেয়েকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছি। যে ভারতীয় শিক্ষক ওঁদের দেখভাল করছেন, তিনি বলেছেন যাঁরা সীমান্ত পেরোতে ইচ্ছুক তাঁদের ট্রেনে তুলে দেওয়ার কাজটুকু তিনি করতে পারেন। এর পরের দায়িত্ব তাঁর নয়। মেয়েকে বলেছি, এ ভাবে আসলে পথে বিপদে পড়তে পারে। তাই বাঙ্কার থেকে এখনই না বেরোতে।’’
ওই পরিবার সূত্রের খবর, এ দিন দেবারতি জানিয়েছেন, ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে কেউ তাঁদের কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। শোনা যাচ্ছে, দূতাবাসের কর্মীরা কিভ ছেড়ে কয়েক দিন আগেই নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়েছেন। এই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কী, ভেবে পাচ্ছেন না ইউক্রেনে আটকে থাকা কয়েক হাজার ভারতীয় পড়ুয়া ও তাঁদের পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy