প্রতীকী ছবি।
আশ্বাস মিললেও ঘর মেলেনি। তাই শীতের রাতে মাথায় শুধুমাত্র ত্রিপল খাটিয়েই বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে রাত কাটাতে হল হাওড়ার ঊনসানি ষষ্ঠীতলার গৃহহীন ভাড়াটেদের। তবে পুলিশ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে গৃহহীন পরিবারগুলির ৩০ জন সদস্যের জন্য দু’বেলা খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করায় অন্তত অভুক্ত থাকতে হয়নি কাউকে। যদিও শুক্রবার রাতের সেই আতঙ্ক এখনও পিছু ছাড়েনি তাঁদের। পুলিশ পাহারা দিলেও সারা রাত প্রায় না ঘুমিয়েই কাটিয়েছেন তাঁরা।
শুক্রবার গভীর রাতে ৪০-৫০ জন দুষ্কৃতীর একটি দল বুলডোজার চালিয়ে দিয়েছিল ঘুমন্ত পাঁচ পরিবারের উপরে। তীব্র শব্দে ঘুম ভেঙে কোন ওরকমে তাঁরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও সেই রাতেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁদের ইট, টালি, দরমার বাড়ি। অভিযোগ, এর পরে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ভাইয়ের নেতৃত্বে এলাকা জুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরে ওই তৃণমূল নেতা তৌবুর রহমান ও তাঁর ভাই, মূল অভিযুক্ত সফিউল্লা দর্জি পালিয়ে গিয়েছেন। মোবাইল ফোনও বন্ধ। তবে তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ষষ্ঠীতলার চার কাঠা একটি জায়গায় ভাড়া দেওয়া পরিবারগুলি সমেত জমিটিতে প্রোমোটিংয়ের জন্য সফিউল্লাকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দিয়েছিলেন জমির মালিক হাজি শেখ বাবুলের ছেলেরা। পাঁচ বছর মামলা চলার পরে আদালত ভাড়াটে উচ্ছেদ করার বিরুদ্ধে রায় দেয়। এর পরে ওই রাতে বুলডোজ়ার নিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁদের ঘরবাড়ি।
রবিবার ওই ভেঙে দেওয়া বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, ভেঙে পড়া ইটের দেওয়ালের নীচ থেকে আবর্জনা সরিয়ে তন্নতন্ন করে জিনিসপত্র খুঁজে চলেছেন গৃহহীন মানুষগুলি। তার পাশেই একটি বাঁধানো চাতালে ত্রিপলের নীচে অস্থায়ী সংসার পেতেছেন তাঁরা। সেখানেই চলছে রান্নাবান্না। পুলিশি পাহরা থাকলেও এলাকার পরিস্থিতি থমথমে।
‘‘সারা রাত পুলিশ পাহারা দিলেও ঘুমোতে পারিনি। মনে হচ্ছিল আবার আক্রমণ করবে। তবে আজ সকালে তৃণমূল নেতারা এসে খোঁজ নিয়েছেন, দাঁড়িয়ে থেকে সব পরিষ্কার করিয়েছেন। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি করে দিলে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে বেঁচে যাই।’’— বলছেন গৃহহীন এক বাসিন্দা কৃষ্ণা দাস। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমরা অধিকাংশই পরিচারিকার কাজ করি, অনেকে দিনমজুরের কাজও করেন। অনেক কষ্ট করে সাইকেল আর আলমারি কিনেছিলাম। সব ভেঙে গিয়েছে। আর কি করতে পারব?’’
যে পাঁচটি পরিবারের বাড়ি বুলডোজ়ার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে তাঁদের আস্তানা বলতে ওই চাতালটুকু। সেখানেই দিন গুজরান হচ্ছে তিন থেকে ১২ বছরের পাঁচটি শিশুরও। কিন্তু সকলেরই প্রশ্ন, এ ভাবে কত দিন?
দক্ষিণ হাওড়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে অপরাধীদের ধরতে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পুলিশকে।’’ তাঁর দাবি, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে গৃহহারাদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় সিপিএম কর্মীরাও ত্রিপল, খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আক্রান্তদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে। তারা সকলেই মোবাইল বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে। তবে তারা ধরা পড়বেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy