অনশনে জুনিয়র ডাক্তারেরা। —ফাইল চিত্র।
ধর্মতলার অনশন মঞ্চে শনিবার ভরদুপুরে কী ঘটছে, সেই খবর তাঁরা পাচ্ছিলেন মেটিয়াবুরুজের বাঁধাবটতলায় বসেই। গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ নাগরিকবৃন্দের প্রকাশ্য অনশন মঞ্চে বসে আলপনা দত্ত বা সুজাউদ্দিন মোল্লারা বললেন, “ছেলেমেয়েগুলোর দাবি না-মেনে ওদের চরম বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যা মেনে নেওয়া যায় না!”
ধর্মতলার অনশন মঞ্চে ডাক্তারদের আন্দোলন তাঁদেরই আন্দোলন— এই বার্তা দিয়ে এ দিন ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে শামিল হয়েছিলেন গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দাদের একটি নাগরিক মঞ্চের সদস্যদের একাংশ। এই কর্মসূচিও যেন মিলিয়ে দিল সমাজের নানা শ্রেণির মানুষকে।
অনশনকারীদের মধ্যে বয়সে প্রবীণতম, ৬৭ বছরের আলপনা দত্ত। বছর চারেক আগে একমাত্র কন্যা রায়াকে হারিয়েছেন তিনি। এখন এলাকায় রায়ার নামে নিখরচার একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে (রায়া দেবনাথ ফ্রি মেডিক্যাল সেন্টার) পরিষেবা দেওয়ার কর্মকাণ্ড নিয়েই মেতে থাকেন আলপনা ও স্বামী কুশল। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা আলপনা বলছিলেন, “আমার মেয়ে থাকলেও এখন অনশনকারী ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়েই মেতে থাকত! শাসকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিনে মেয়ের না-থাকাটা বড় বেশি বাজছে! ও থাকলে যা করত, আমরাও তা-ই করছি! রাজ্য সরকার ন্যায্য দাবি মেনে না-নিলে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে।” অনশনরত ডাক্তারদের কারও কারও সঙ্গে রায়া দেবনাথ ফ্রি মেডিক্যাল সেন্টারের কাজের যোগ রয়েছে। সেই সূত্রে কুশল, আলপনার সঙ্গেও তাঁদের অনেকের পরিচয়।
সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে ছিলেন ডাক্তার, সমাজকর্মী, গৃহবধূ, গৃহ-পরিচারিকা থেকে তরুণ ছাত্রছাত্রীরা। পেশায় দর্জি তথা তৈরি পোশাকের কারবারি সুজাউদ্দিন মোল্লার মেটিয়াবুরুজে ছোট কারখানা রয়েছে। তিনি বললেন, “পুজোর পরে কালীপুজো, দিওয়ালির আগে এই সময়টা আমাদের কাজের চাপ ভালই। অর্ডারমাফিক তৈরি করা অনেক পোশাকই মুম্বই, দিল্লিতে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের দাবিতে আন্দোলন তো যে কোনও সময়েই হয়ে থাকে। ডাক্তার ছেলেমেয়েরা আমাদের সন্তানদের মতোই। পথে নামতে হতই!”
পেশায় গৃহ-পরিচারিকা ডলি বণিক সকালে কাজের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিকেলে ছুটি নিয়ে অনশন করছেন তিনি। তোর্শা জায়েদকা হরিণঘাটার একটি কলেজ থেকে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে সবে স্নাতক হয়েছেন। তিনিও অনশন করছেন। রেহানা বিবি গৃহবধূ। রাত ১০টা পর্যন্ত জলও খাননি তিনি। চিকিৎসক স্বরূপকুমার দাস, নিমাই চৌধুরী, রুকসানা ওয়ারশি, শামিম আখতার, নাজিমুল বাগানি, তন্দ্রা কাঁড়ার প্রমুখ মোট ১৬ জন অনশনে শামিল। আলপনা বললেন, “আমাদের ছেলেমেয়ের মতো যাঁরা, তাঁরা অনশন চালিয়ে গেলে আমাদেরও কষ্ট নেই। আমরা ওই ডাক্তারদের নেতৃত্বেই লড়ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy