বিপজ্জনক বাড়ি। —ফাইল চিত্র।
জরাজীর্ণ তেতলা বাড়ির ছাদ-সহ দেওয়ালের বিভিন্ন অংশ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে উঠে গিয়েছে আস্ত বটগাছ। গোটা বাড়ি ঘিরে রেখেছে বটের শিকড়। দেওয়াল ফাটিয়ে ঢুকে পড়েছে ঘরের অন্দরেও। যত্রতত্র খসে পড়ছে চুন-সুরকি। কোথাও ভেঙে পড়ছে চাঙড়। নিয়ম মেনে বাড়ির দেওয়ালে পুরসভা ঝুলিয়েছে ‘বিপজ্জনক’ সাইনবোর্ড। তা সত্ত্বেও ওই বাড়িতেই চলছে কয়েকটি পরিবারের বসবাস।
ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’র আতঙ্কের মধ্যেও অনড় বিডন স্ট্রিটের এই তেতলা বাড়ির বাসিন্দারা। বাড়ির নীচে থাকা চায়ের দোকানের মালিক জানালেন, গোটা পাঁচ-ছয় পরিবার এই বাড়িতে বসবাস করে। সকলেই ভাড়াটে। তাঁর কথায়, ‘‘এরআগেও একাধিক ঝড়ের আগে প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরা এ বাড়িতে এসেছেন। কিন্তু ভাড়াটেদের সরিয়ে বাড়ি খালি করা তো দূর, কাউকেএক পা-ও নড়াতে পারেননি তাঁরা।’’ ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’ আতঙ্ক যতইজোরালো হচ্ছে, বিডন স্ট্রিটের এই পুরনো বাড়ির মতো শহরেরএকাধিক বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে ততই চিন্তা বাড়ছে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের।
দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপটি আপাতত পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে অবস্থান করছে। পরে তা পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালের মধ্যে নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। যা তার পরে ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিয়ে ক্রমশ ভূখণ্ডের দিকে এগিয়েযাবে। ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ড-ফল’ বা কলকাতার উপরে সেটির প্রভাব নিয়ে আবহবিদেরা এখনও নিশ্চিত ভাবে কিছু বলেননি। তবে, ওই ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ছে পুরনো বাড়ি এবং সেগুলির বাসিন্দাদের ঘিরে।
এ শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা চার হাজারের আশপাশে। যার মধ্যে একশোটির বেশি বাড়ি অতি বিপজ্জনক বলে জানা যাচ্ছে সরকারি তথ্য থেকে। এমন অনেক বাড়িতেই বাসিন্দারা রয়েছেন। অতীতেরএকাধিক ঘটনার কথা মাথায় রেখে দুর্যোগের আগে এই ধরনের বাড়ি খালি করতে তৎপর হয়েছে স্থানীয়প্রশাসন। কিন্তু এই সমস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের সকলকে কি নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে?এক পুরকর্তা বলছেন, ‘‘প্রতি বছরই ঝড়ের আগে বার বার আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হয়। বাড়ি দখল হওয়ার ভয়ে ভাড়াটেদের অনেকেই ছাড়তে চান না। বিপদ মাথায় নিয়ে থেকে যান তাঁরা বিপজ্জনক বাড়িতেই।’’
এ দিন আমহার্স্ট স্ট্রিট, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট, বিডন স্ট্রিট-সহ শহরের একাধিক এলাকার বিপজ্জনক বাড়িগুলি ঘুরে দেখা গেল, কোথাও তেতলা বাড়ির দোতলায় বাসিন্দারা রয়েছেন। আর নীচে পর পর দোকান। কোথাও আবার বাড়ির উপরতল খালি করে দেওয়া হলেও নীচ থেকে দোকান সরানো যায়নি। শ্যামবাজার সংলগ্ন রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের মোড়ে রয়েছে একটি তেতলা বিপজ্জনক বাড়ি।নীচে দোকান।
এক দোকানি জানালেন, ইতিমধ্যেই সেখানে এসে প্রশাসনের তরফে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা দোকান বন্ধ করবেন কিনা, সে নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁর কথায়, ‘‘সারা বছর কিছু না কিছু দুর্যোগ তো ঘটতেই থাকে। অথচ, রুজিরুটি নির্ভরকরছে এই সব দোকানের উপরে। ফলে সতর্ক করে গেলেও কি সব সময়ে বন্ধ করা যায়?’’মালিক-ভাড়াটে বিবাদের মধ্যেই গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন বিপজ্জনক বাড়িতে বসবাস করছে বেশ কয়েকটি পরিবার। ঝড়ের কথা বলতেই এক ভাড়াটে সুজয় দুয়ারি বললেন, ‘‘বাড়ি ছেড়ে যে যাব, ফিরে এলে আবার কি ঢুকতে পারব? সেই নিশ্চয়তা কোথায়? তা ছাড়া, ঝড়টা এখন কোথায়, তারও তো ঠিক নেই। আগে থেকে এত সব ভেবে কী করব?’’
গত কয়েক বছরে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট এবং ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটে জরাজীর্ণ বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নতুন করে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সংবাদ সেই পুরনো আশঙ্কাকেই আরও জোরালো করছে। যদিও কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক পদস্থ কর্তা আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘‘ঝড়ের সময়ে বাড়ি ছাড়লে বাসস্থান হারানোর কোনও আশঙ্কা থাকে না।ইতিমধ্যে আবাসিকদের সরানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বরোর কমিউনিটি হল, স্কুল প্রস্তুত রাখা হচ্ছে তাঁদের আশ্রয় দিতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy