দগ্ধ: পুড়ে যাওয়ার জিনিসের খোঁজে বস্তিবাসীরা। রবিবার, কামারহাটির প্রান্তিকনগরে। নিজস্ব চিত্র
ওঁদের সকলেরই ‘দিন আনি, দিন খাই’ অবস্থা। কেউ পরিচারিকার কাজ করেন, কেউ আবার ঠিকা শ্রমিকের। বিপদে কিংবা উৎসবের সময়ে যাতে হাত খালি না থাকে, তার জন্য নিজেরাই তৈরি করেছিলেন তহবিল।
কামারহাটির প্রান্তিকনগরের বস্তিবাসীদের তৈরি করা সেই তহবিল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে শনিবার। বস্তির ১২টি ঘরের সঙ্গে পুড়ে গিয়েছে তহবিলে থাকা সাড়ে চার লক্ষ টাকা। আর তাতেই মাথায় হাত পড়েছে বস্তিবাসীর।
রবিবার পোড়া ঘরের সামনে মনমরা হয়ে বসেছিলেন বৃদ্ধা নুরজাহান। স্থানীয় প্লাস্টিক কারখানায় দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেও মাসে অল্প করে টাকা পাড়ার তহবিলে জমিয়ে ছিলেন ওই বিধবা মহিলা। বললেন, ‘‘সামনেই রমজান। ভেবেছিলাম তহবিল থেকে টাকা তুলে নিয়ে নাতি-নাতনিদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দেব। কিন্তু আগুন তো মাথার ছাদ, জমানো টাকা সবই কেড়ে নিল।’’
নুরজাহানের মতোই আক্ষেপ পল্টু মল্লিকের। হোলির পরেই যে তাঁর বোন সোনিয়ার বিয়ে। হবু জামাইয়ের জন্য কেনা সোনার চেন যেমন পুড়ে গিয়েছে, তেমনি জমানো টাকার পুরোটাই শেষ। অগত্যা সোনিয়ার বিয়ের কেনাকাটা থেকে অন্য খরচ কোথা থেকে আসবে তা নিয়েই চিন্তিত দিনমজুর পল্টু। বললেন, ‘‘গরিব মানুষ কোথায় এখন টাকা পাব, জানিনা।’’
যেমন কী ভাবে ৯৭ জন সদস্যের জমানো টাকা ফেরত হবে তা ভেবে কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না বস্তির যুবক শফিক শেখ। তাঁর কাছেই থাকত প্রতিবেশীদের তৈরি তহবিলের টাকা। এ দিন শফিক জানান, সকল সদস্যই দৈনিক বা মাসের হিসেবে যেমন খুশি অঙ্কের টাকা জমা রাখতেন কয়েক বছর ধরে চলা ওই তহবিলে। যুবক বলেন, ‘‘আমরা সকলেই গরিব মানুষ। ঘরে টাকা থাকলেই খরচের ভয়। তাই সকলে মিলে ওই তহবিল তৈরি করি। যাতে রাতে-দিনে সব সময়ে দরকার মতো টাকা পেয়ে যান ওই সদস্যেরা।’’ তিনি আরও জানান, অনেক সময়ে অনেক বাসিন্দা প্রয়োজনে ওই তহবিল থেকে টাকা ধারও নিতেন।
‘‘রমজান ও অন্য উৎসবের সময়ে জমানো ওই টাকা আমাদের খুব কাজে লাগত। এ বার তো আর কিছুই করার নেই’’, বললেন ওই তহবিলের আর এক সদস্য শাহজাহান ঢালি।
ঘটনাস্থলে দেখা গেল, জমানো টাকা পুড়ে যাওয়ায় যখন পরিবারের বয়স্করা চিন্তায়, তখন ছাইয়ের গাদায় বই খুঁজে বার করার চেষ্টা চালাচ্ছে আসমিরা মল্লিকের মতো খুদে পড়ুয়ারা। আধপোড়া পাঠ্য বইটা কুড়িয়ে আনার সময়ে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া আসমিরা বলে, ‘‘এই বইটা পড়তে আমার খুব ভাল লাগত। পুড়ে গেছে বইটা। বাবার কাছেও টাকা নেই। কে কিনে দেবে বই?’’ কামারহাটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের অসংখ্য শিশু গদাধর প্রকল্পে স্থানীয় রামকৃষ্ণ মিশন কলকাতা বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করে।
এ দিন রামকৃষ্ণ মিশনের বেলঘরিয়ার ওই আশ্রম থেকে পোড়া বস্তি দেখতে আসেন স্বামী বলদেবানন্দ। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের বই, খাতা দেওয়ার পাশাপাশি এখানকার বাসিন্দাদের পাশে আরও কী ভাবে থাকা যায় তা দেখা হচ্ছে।’’ এ দিন ওই বস্তিতে যান সাংসদ সৌগত রায় ও চেয়ারম্যান পারিষদ বিমল সাহা। পরে বিমল বলেন, ‘‘তহবিলের টাকা তো আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব না। তবে কারও বিয়ে যেন এর জন্য আটকে না যায় তার ব্যবস্থা করব। পুনর্বাসনের বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ত্রাণসামগ্রীও তুলে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy