অসহায়: খাবার নেওয়ার লাইনে ঘরছাড়ারা। শনিবার দুপুরে, টালা সেতুর নীচে। নিজস্ব চিত্র
চার পাশে উৎসবের পরিবেশ। তা সত্ত্বেও এ বার পুজোটা ওঁদের কাছে বড্ড ফিকে।
অন্যান্য বছর মহালয়ার দিন ভোরে বাগবাজারে গঙ্গার ঘাটে স্নান করে পিতৃতর্পণের জন্য পুজো দিতেন
টালা সেতুর নীচে থাকা দেবাশিস মণ্ডল, অজয় হাজরা, অরুণ দাসেরা। এ বার মহালয়ার ভোরে গঙ্গার ঘাটেই আর পা দেননি ওঁরা। টালা সেতুর ভগ্নদশার জন্য তার নীচে থাকা বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। সেতুর কাছাকাছি দু’জায়গায় সরকারি তরফে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলেও তা নিয়ে ক্ষুব্ধ ঘরছাড়ারা।
বাগবাজার খালের ধারে ২৫টি এবং ৬বি, বি টি রোডে ২৬টি প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে রাখা হয়েছে ওঁদের। অভিযোগ, ঘুপচি ছাউনিতে একসঙ্গে ছয়-সাত জন সদস্য
মিলে থাকতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে তাঁদের। শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, প্লাস্টিকের ফুটো দিয়ে বেশির ভাগ ছাউনিতে বৃষ্টির জল পড়ছে।
বৃষ্টির জল এড়াতে কেউ বালতি, কেউ বা বড় পাত্র রেখেছেন। প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে বাগবাজার ঘাটে বাবার স্মৃতিতে পুজো দেন দেবাশিস মণ্ডল। ছাউনির মধ্যে বৃষ্টির জল পড়া সামলাতে সামলাতে দেবাশিস বলছিলেন, ‘‘সরকার আমাদের পুনর্বাসন দিলেও তার ব্যবস্থা একেবারেই ভাল নয়। প্লাস্টিক দিয়ে জল গড়াচ্ছে। বেশি বৃষ্টি হলেই তা উপচে ছাউনির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। ছাউনি বড় হলেও শৌচাগার নেই।’’ টালা সেতুর নীচেই জন্ম অজয় হাজরার। বাবা বছর কয়েক আগে মারা গিয়েছেন। অজয়ের কথায়, ‘‘এ বার দুর্গাপুজোটা খুব খারাপ যাবে। অন্যান্য বছর আমরা পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতাম। এখন তো আমাদের মাথার ছাদটাই চলে গেল!’’ টালা সেতুর নীচে থাকা অধিকাংশ মহিলাই পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের স্বামীরা কেউ দিনমজুর, কেউ বা পেশায় গাড়িচালক। টালার একটি বাড়িতে কাজ করা সুলেখা মণ্ডলের কথায়, ‘‘গত তিন দিন ধরে কাজে যেতে পারিনি। সাধারণত মহালয়ার পরে বাড়ির মালিকদের কাছে পুজোর অগ্রিম পাই। ওই
টাকায় ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় কিনতাম। এই অবস্থায় এ বার টাকা পাব কি না, জানি না।’’
সেতুর নীচে থাকা বাসিন্দাদের ছেলেমেয়েদের বেশির ভাগই লেখাপড়া করে। কিন্তু এই অবস্থায় তাদের পড়াশোনাও বন্ধ। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শান্তনু মণ্ডলের কথায়, ‘‘মা পরিচারিকার কাজ করেও আমাকে কষ্ট করে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। কিন্তু ঘুপচি প্লাস্টিকের ছাউনিতে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। লেখাপড়ার জায়গাও নেই। প্লাস্টিক ফঁুড়ে বৃষ্টি পড়ছে। আগামী দিনে কী ভাবে লেখাপড়া চালাব বুঝতে পারছি না।’’ একই সমস্যার কথা শোনাল কাশিমবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির কৃতী ছাত্রী কোয়েল কর। কোয়েলের কথায়, ‘‘মাথার উপরে ছাদটাই আর নেই। পুলিশ বলছে, তিন মাস পরে উঠে যেতে হবে। মাননীয়া দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, আমাদের বিষয়টা দয়া করে ভেবে দেখুন।’’
টালা সেতু থেকে পুনর্বাসন হওয়া বাসিন্দাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল কাউন্সিলর তরুণ সাহা বলেন, ‘‘পনেরো দিন পরে সমস্ত ছাউনি টিনের তৈরি করা হবে।’’ পাশাপাশি তরুণবাবু আরও বলেন, ‘‘ওঁরা সেতুর নীচে বেআইনি ভাবে ঘর তৈরি করে বাস করছিলেন। সেতুর নীচের অংশটা ওঁরা ছাদ হিসেবে বছরের পর বছর ব্যবহার করেছেন। যার ফলে টালা সেতু আরও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছিল। দিন চারেক আগে রাইটস সেতুর ভগ্নদশার কথা জানাতে বিপদের আশঙ্কা করেই ওঁদের সরিয়ে দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy