আচমকাই নোটিশ গৌর দে লেনের বাসিন্দাদের হাতে। নিজস্ব ছবি
স্যাঁতসেঁতে ঘর। দিনের বেলায় ঘরের মধ্যে আলো খুব একটা ঢোকে না। ছোট-বড় ফাটল মাকড়সার জালের মতো যেন বিছিয়ে রয়েছে দেওয়ালের চার পাশে। তার উপরে লোহার বিম দিয়ে চারদিক ঠেকনা দেওয়া। ৫/১ গৌর দে লেনের ওই বাড়িতে ঢুকতেই গা ছমছম করে ওঠার জোগাড়! যে কোনও মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে যেতে পারে বাড়িটি।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ওই বাড়িতেই ছিলেন মালিক এবং ভাড়াটেরা। হঠাৎ কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশেন (কেএমআরসিএল) তাঁদের বাড়ি খালি করার জন্যে নোটিস ধরিয়ে দিয়ে গেলেন এ দিন। নোটিস পেয়ে যেন মাথায় বাজ ভেঙে পড়ার জোগাড় রুনা সিংহের। এ দিন স্বামীর সঙ্গে তিনি দাদার বাড়িতে এসেছিলেন। তখনও দাদা চিত্ততোষ দত্ত জানেন না, ওই বাড়ি ছেড়ে তাঁদের চলে যাতে হবে। প্রতি দিনের মতোই সকালে কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। অগ্যতা নোটিস হাতে দাদার বাড়ির জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে চলে যেতে হল রুনাদেবীকে।
আরও পড়ুন:মেট্রোর নোটিস পেয়ে বৌবাজারের বাড়ি ছাড়লেন মন্ত্রী তাপস রায়, পথ অবরোধ নারাজ বাসিন্দাদের
আরও পড়ুন:বৌবাজার কাণ্ডে আপাতত ৫ লক্ষই দিতে রাজি মেট্রো
গৌর দে লেনের অধিকাংশ বাসিন্দাদের এ দিন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর তাতেই ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়। শুধু ওই বাড়িটিই নয়, দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেন, গৌর দে লেন এবং হিদারাম ব্যানার্জি লেনের কয়েকশো বাড়িতে এখন মাকড়সার জালের মতো ফাটল গ্রাস করেছে। বৌবাজার এলাকার একের পর এক বাড়ি খালি হয়েছে যাচ্ছে। এ দিন রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়কেও বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। নিজের বাড়ি ছেড়ে হোটেলে উঠতে হয়েছে ওই এলাকার প্রায় ৪৫০ জন বাসিন্দাকে। প্রতি দিনই কোনও না কোনও বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে। যেন ‘তাসের দেশ’ হয়ে উঠছে বৌবাজার। হঠাৎ নোটিসে চোখের জলে ঘর ছাড়ছেন বাসিন্দারা। চিন্তা বাড়িয়েছে বৃষ্টিও। মাটি আলগা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
দেখুন ভিডিয়ো:
কেন কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ আগে থেকে বাসিন্দাদের সতর্ক করছেন না? কেন আধ ঘণ্টার নোটিসে চলে যেতে বলা হচ্ছে? তা নিয়ে পথ অবরোধ পর্যন্ত করেন সেখানকার নাগরিকরা। এ দিন সকালে ৩ নম্বর গৌর দে লেনের বস্তির বাসিন্দাদেরও ঘর ছাড়তে বলা হয়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভাড়াটে রয়েছেন। তেমনই এক ভাড়াতে মহাদেব সাউ বলেন, “মালিকদের ঘর ভেঙে গেলে তা হয়তো মেট্রো বানিয়ে দেবে। কিন্তু আমাদের উঠিয়ে দিলে কী হবে। মেট্রোর তরফে একটি সাদা কাগজে নাম লিখে স্ট্যাম্প লাগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি, মেট্রোর লেটার হেডে প্রত্যেকের নাম-ঠিকানা লিখে, কবে পুর্নবাসন দেওয়া হবে, তা জানাতে হবে। অন্যথা কেউ ঘর ছাড়বে না।”
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের সঙ্গেও বচসায় জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। মেট্রো কর্তা এবং পুলিশ কর্তারা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। প্রথম দিন থেকেই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সুরজিৎ দত্ত। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘যে ভাবে একের পর এক বাড়ি ভাঙছে, মানুষ যে ভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ছে, তা আগে কোনও দিন দেখিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy