শহরের ১৬টির মধ্যে ১০টি বরো বর্ষণে বিপর্যস্ত। ডুবে রয়েছে ৬০টি ওয়ার্ড। বাইপাস সংলগ্ন কয়েকটি ওয়ার্ডে বন্যার মতো পরিস্থিতি। ত্রাণও পাঠাতে হয়েছে পুর-প্রশাসনকে। শনিবার দুপুরে নবান্নে এমনই রিপোর্ট পাঠিয়েছে কলকাতা পুরসভা।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে বৃষ্টি হয়েছে মোটামুটি ১৫০ মিমি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভরা কোটাল। ফলে শহরের নিকাশি নালা থেকে জল বেরোতে পারেনি। বরং গঙ্গার জলসীমা বেড়ে উল্টে নালায় ঢুকেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শহরের নিকাশি পাম্পিং স্টেশনের লকগেট বন্ধ রাখতে হয়েছে। পুরসভার মতে, মূল কলকাতার ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। তা এমন ভাবে তৈরি হয়েছিল যে, ঘণ্টায় ৬ মিমি বৃষ্টি হলে সেই জল স্বাভাবিক নিয়মেই নেমে যাবে নিকাশির মাধ্যমে। তার বেশি বৃষ্টি হলে জল জমার প্রবণতা বাড়বে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন নিকাশি পাম্পিং স্টেশন বানানো হয়। যাতে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে সেই জল নিকাশির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়ার পরে তা টেনে নিতে পারে পাম্প মেশিন। শহরে এখন ৭২টি পাম্পিং স্টেশন। যাতে মোট পাম্পের সংখ্যা ৩৮৬। এর মধ্যে ৩৫টি পাম্প এখন খারাপ থাকায় চলছে না। তবে সেগুলি স্ট্যান্ডবাই হিসেবেই থাকে বলে পুর সূত্রে খবর।
এ দিন ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকা জলপ্লাবিত হওয়ায় ঘুম ছুটে যায় পুর-প্রশাসনের। লন্ডন থেকে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী এখন শহরে। পুরসভার চাপ তাই এ বার আরও বেশি। সারাক্ষণই চিন্তায় ছিলেন পুরকর্তারা। এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে আসানসোলে যেতে হয়েছিল মেয়রকে। এ দিন দুপুরের মধ্যে সেখান থেকে ফিরে তিনি সোজা ঢুকে পড়েন পুরভবনে। কয়েক দিন আগে একই ভাবে শহরে বৃষ্টি হওয়ায় জল জমে উত্তর থেকে দক্ষিণে। সে সময় কলকাতার বানভাসি চিত্রকে বাথরুমের সঙ্গে তুলনা করে মেয়র বলেছিলেন, ‘‘বেশি জল ফেললে তো বাথরুমেও জল জমে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি ছিল, শহরে এখন নিকাশি ব্যবস্থা জবরদস্ত। বৃষ্টির পরে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে জল বেরিয়ে যায়।
কিন্তু এ দিন শহরের চিত্র সে কথা বলেনি। রাতে মেয়র যখন দাবি করেন, শহরের জল জমায় প্রসিদ্ধ বিভিন্ন এলাকা থেকে জল নেমে গিয়েছে, তখনও গল্ফগ্রিন, গল্ফ গার্ডেন, বেহালা, তারাতলা, এমনকী থিয়েটার রোডের আশপাশে কিছু এলাকা হাঁটুসমান জলে ডোবা। ভরা কোটালে জল নামতে দেরি হওয়ার যে যুক্তি মেয়র দেন, তাকে খণ্ডন করে সিপিএম-এর প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, যে সব এলাকায় জল নামার ক্ষেত্রে গঙ্গার কোনও সম্পর্ক নেই, সেখানে রাত পর্যন্ত জল জমে থাকে কেন? পুরসভার একাধিক ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, ‘‘সংযোজিত কলকাতার অধিকাংশ ওয়ার্ডের নিকাশি মাটির উপরে নালার মধ্য দিয়ে হয়। পরে তা গিয়ে পড়ে টালিনালা, বেগরখাল, মণিখাল, চড়িয়াল ক্যানালের মধ্য দিয়ে। কিন্তু ওই সব খাল নিয়মিত পরিষ্কার হয় না বলেই সমস্যা বাড়ছে। বিশেষ করে বাইপাসের ধারে ১০৯, ১০৩, ১০৮, ১১০, বেহালার ১২৫ ও ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে জলে ডুবছে। মেয়রের পাল্টা যুক্তি, ‘‘আগে বেহালার কিছু এলাকায় ঘরে ঘরে নৌকা থাকত। বৃষ্টি হলেই তা বার করতে হত। এখন সেই দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন এলাকার মানুষ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের দ্বিতীয় দফার টাকায় ওই সব এলাকার নিকাশি উন্নয়নের কাজ হবে।’’
বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে নিকাশি ব্যবস্থাও তো সচল, তা হলে কেন বাড়ছে জমা জলের পরিমাণ? এ নিয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন রাজ্যেরই মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। বাগমারিতে তাঁর বাড়ির সামনে প্রায় হাঁটুর উপরে জল। পরে দেখা যায় সেখানে থাকা নিকাশি ব্যবস্থা কাজ না করায় ক্রমশই জমা জলের পরিমাণ বেড়েছে। পরে ব্যবস্থা নিতেই দ্রুত জল নেমেও যায়।
মন্ত্রী সাধনবাবুর কথায়, ‘শহর জুড়ে যে সব খাল-নালা রয়েছে, তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা দরকার।’’ তা হলে কি নিকাশির নালা পরিষ্কারের কাজ হয় না? মন্ত্রীর তুলে দেওয়া বিষয় নিয়ে একাধিক পুরকর্তার বক্তব্য, শহরের এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে ভূগর্ভস্থ নিকাশি কাজে যথেষ্ট ঢিলেমি রয়েছে। মাটির নীচে কতটা ময়লা বা পলি জমে রয়েছে, তা দেখভালে নজরদারির অভাব রয়েই গিয়েছে। মাটির নীচ বলে কতটা জঞ্জাল তোলা হল, তার হিসেব নেওয়াও ঠিক ভাবে হয় না। ফলত, বৃষ্টি হলে নিকাশি পরিকাঠামোর দুর্বলতায় জল সহজে বার হয় না বলে তাঁদের অভিমত। অথচ বছরের পর বছর ডি-সিল্টিংয়ের খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘সম্প্রতি দেখা গিয়েছে প্রায় ৩০টি ম্যানহোল ডি-সিল্টিং মেশিন তিন বছর থেকে কেনা হয়ে পড়ে ছিল। সদ্য তা কাজে লাগানো হয়েছে।’’ সাধনবাবু নিজেও জানান, রাজ্যেরই একাধিক অফিসার সম্প্রতি দিল্লিতে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (গ্যাপ) দফতরে গিয়ে শহরে নিকাশি হালের বিষয়ে জানিয়েছেন। গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করায় শহরের
নিকাশি হাল ফেরাতে কেন্দ্র টাকা দিতেও প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প রিপোর্টও পাঠাতে বলেছেন দিল্লি। তিনি বলেন, ‘‘উত্তর
কলকাতার অধিকাংশ খালের জল গিয়ে পড়ে বিদ্যাধরী নদীতে। সেই নদীর সংস্কারও প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy