কালীঘাটের ওই এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের জটলা। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
তাঁর ১৩ বছরের মেয়ে গণধর্ষিতা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। নাবালিকা হওয়ায় শারীরিক পরীক্ষার পরে সেই মেয়েকে হোমে পাঠানোর তোড়জোড় করছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে থানার বাইরে দাঁড়ানো সেই নাবালিকার মায়ের অবশ্য সে সবে নজর নেই। তাঁর একটাই চিন্তা। মেয়েকে পুলিশ ছাড়বে কখন? মহিলা বললেন, ‘‘আমি লোকের বাড়ি কাজ করি। তাতে আমাদের মা-মেয়ের চলে না। মেয়েটাকে তাই ভিক্ষা করতে হয়। পুলিশ ওকে রেখে দিলে আমাদের চলবে কী করে? এক বেলা বসে থাকলেও অনেক সমস্যা। অভিযোগ তো হয়ে গিয়েছে। এ বার ছেড়ে দিক!’’
পঞ্চসায়রে মৃগীরোগী ও মানসিক সমস্যায় ভোগা এক মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার তিন সপ্তাহের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ফের গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে শহরে। কালীঘাট এলাকার সেই ঘটনায় দুই নাবালিকাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে খবর। এসএসকেএম হাসপাতালে তাদের শারীরিক পরীক্ষায় প্রাথমিক ভাবে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশও। বৃহস্পতিবারই ওই ঘটনায় এক নাবালক-সহ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে কালীঘাট থানার পুলিশ। এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছে আরও এক নাবালক। তাকে অবশ্য শুক্রবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, দুই নাবালিকার এক জনের বয়স ১৩, অন্য জনের ১৫। দু’জনেই কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত। বছর পনেরোর মেয়েটির বাবা-মায়ের খোঁজ শুক্রবার রাত পর্যন্ত পায়নি পুলিশ।
তবে থানার বাইরে ঘুরতে থাকা বছর তেরোর মেয়েটির মা জানান, তাঁরা আগে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় থাকতেন। কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামী তাঁদের ছেড়ে অন্যত্র থাকতে শুরু করার পরে মেয়েকে নিয়ে তিনি কালীঘাট এলাকায় এক পরিচিতের কাছে চলে আসেন। সেখানেই ফুটপাতে তাঁদের মা-মেয়ের থাকার জায়গা হয়। প্রথমে মেয়েকে নিয়ে কালীঘাট মন্দির চত্বরে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন তিনি। মেয়ে একটু বড় হওয়ার পরে তাকে কালীঘাটেরই এক মহিলার কাছে দিয়ে নিজে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নেন। ওই মহিলার সঙ্গেই ভিক্ষা করত ওই নাবালিকা। সারা দিনে যা রোজগার হত, তার অর্ধেক নাবালিকার মায়ের হাতে তুলে দিতেন ওই মহিলা। ওই ভিক্ষাজীবীদের দলেই ছিল বছর পনেরোর মেয়েটি।
নাবালিকার মায়ের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযোগ দায়ের করার সময়ে তিনি পুলিশকে জানান যে, অভিযুক্তদের তিনি চেনেন। মন্দিরের জন্য আদিগঙ্গার মাটি কাটার কাজ করত তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাটি কাটা বাবদ ১০ টাকা পাবে জেনেই তাদের সঙ্গে গিয়েছিল তাঁর মেয়ে। সঙ্গী হয়েছিল অন্য নাবালিকাও। আদিগঙ্গার পাড়ে মত্ত অবস্থায় অভিযুক্তেরা ওই দুই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মহিলা বলেন, ‘‘আমি তো ওদের চিনি। আমাদের পাড়ারই ছেলে। ওরা এ রকম করতে পারে ভাবিনি। টাকার জন্য মেয়েটাকে কথা শোনাতাম দিনরাত। তাই হয়তো ১০ টাকা পাবে জেনেই গিয়েছিল।’’
কথায় কথায় মহিলা ফিরে যান পুলিশ কখন তাঁর মেয়েকে ছাড়বে, সেই কথায়। কালো সালোয়ারের ওড়নায় চোখ মুছে তিনি বলেন, ‘‘কাল সারা রাত ঘুম হয়নি। আজ কাজেও যেতে পারিনি। মেয়েটারও এত শরীর খারাপ যে, কাজ করতে পারছে না। পুলিশ নিয়ে গেলে ওকে ফেরাবে কবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy