Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Rabindra Sarobar

ছটের জট কাটিয়ে কলুষমুক্ত দুই সরোবর

সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা রামেশ্বর চট্টোপাধ্যায় প্রতিদিনই ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্র সরোবরে এসে সূর্যপ্রণাম করেন।

কড়া: শনিবার সকালেও রবীন্দ্র সরোবরে ছিল পুলিশি পাহারা। নিজস্ব চিত্র

কড়া: শনিবার সকালেও রবীন্দ্র সরোবরে ছিল পুলিশি পাহারা। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৩:২০
Share: Save:

রাতের অন্ধকার তখন সবে একটু ফিকে হয়েছে। চার দিক শুনশান। রবীন্দ্র সরোবর-এর সব ক’টি গেটের মুখে তখনও দাঁড়িয়ে অন্তত পাঁচ জন করে পুলিশকর্মী। এর মধ্যেই শনিবার ভোরের এক পশলা বৃষ্টিতে আরও ঝাপসা হয়ে এল চতুর্দিক। সরোবরের তিন নম্বর গেটে দাঁড়ানো পুলিশের এক আধিকারিককে এক প্রাতর্ভ্রমণকারী বললেন, “যেন একটা হাই ভোল্টেজ ম্যাচ জিতলাম মশাই! রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো বন্ধ নিয়ে গত কয়েক দিন যা উত্তজেনা, তা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের থেকে কম কিসে?” পুলিশ আধিকারিক হেসে বললেন, “সত্যিই তা-ই। তবে এখনও কিছুটা সময় বাকি। পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ার সময় আসেনি।’’ ছটের পুণ্যার্থী বনাম প্রশাসনের এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরাও।

আরও পড়ুন: ‘গো-মাতা’ নিয়ে তরজায় দুই দল

সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা রামেশ্বর চট্টোপাধ্যায় প্রতিদিনই ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্র সরোবরে এসে সূর্যপ্রণাম করেন। তার পরে বেশ কিছু ক্ষণ সেখানেই হাঁটেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সরোবর চত্বর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ভিতরে ঢুকতে পারেননি। তবে তাতে তাঁর বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। বরং সরোবরের পরিবেশ বাঁচানোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। এ দিন সকালে তাই সরোবর চত্বরের বাইরের ফুটপাতেই হেঁটেছেন রামেশ্বরবাবুর মতো প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। ভোরের আলো স্পষ্ট হতেই একে একে আসতে শুরু করেন তাঁরা।

রঞ্জন দাস নামে আর এক প্রাতর্ভ্রমণকারী বলেন, “ছটের জন্য টানা দু’দিন সরোবরে হাঁটতে পারলাম না। তাই রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছি। ছট বন্ধ হওয়ায় সরোবরে আসা পরিযায়ী পাখিরাও একটু শান্তি পাবে।’’

গেটে তখনও কড়া নিরাপত্তা। শুক্রবার পাঁচটি গেটই ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। শেষ লগ্নে এসে সমস্ত উদ্যোগ যাতে ভেস্তে না যায়, তার জন্য এ দিন সকালে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সব ক’টি গেটে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। বিশেষ করে, লেক গার্ডেন্স স্টেশনের লেভেল ক্রসিংয়ের পিছনের রাস্তায় আগের রাত থেকেই ব্যারিকেড বসানো হয়েছিল। বরজ রোডের দু’পাশে যে পাঁচটি গেট রয়েছে, তার সামনে দিয়ে বার বার টহল দিয়েছে পুলিশের সাদা ভ্যান। কাউকে দেখে ছটের পুণ্যার্থী বলে মনে হলেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, এ দিন সকালে পুণ্যার্থীরা আর গেটের সামনে আসেননি।

পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “শেষমেশ রবীন্দ্র সরোবর নিজের শরীর স্বাস্থ্য-বাঁচিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াল। এই জয় সরোবরের একান্ত নিজস্ব। আশা করি, আর কোনও দিনই সেখানে ছটপুজো হবে না।’’

এ দিন সকালে এক ছবি ছিল সুভাষ সরোবরেও। বেলেঘাটা থেকে শুরু করে কাঁকুড়গাছি, মানিকতলা-সহ যে সব রাস্তা দিয়ে সুভাষ সরোবরে সহজে পৌঁছনো যায়, সেখানেও সতর্ক ছিল পুলিশ। কোথাও কোথাও ব্যারিকেডও দেওয়া ছিল শুক্রবার থেকে।

কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার আগে থেকেই দুই সরোবরে ছটপুজো বন্ধ করতে সমস্ত রকম পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করা ছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় প্রচার অভিযান এ বার অনেক বেশি হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি।

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindra Sarobar Chhath Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy