Advertisement
১৮ অক্টোবর ২০২৪
Durga Puja Carnival And Protest Carnival

‘কার্নিভাল পাহারা’য় পুলিশ উপহাসের মুখে

রেড রোডের পুজো কার্নিভালের পাল্টা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সংগঠনের ডাকা ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর অনুমতি পুলিশ দেবে কি না, তা নিয়ে নানা মহলে সংশয় ছিলই।

বিদ্রোহ আজ: দ্রোহ কার্নিভাল থেকে আজ জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে উড়ল কালো বেলুন। ব্যারিকেডের অন্য পার থেকে সেই ছবি তুলতে ব্যস্ত পুলিশকর্মীরাও। মঙ্গলবার, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে।

বিদ্রোহ আজ: দ্রোহ কার্নিভাল থেকে আজ জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে উড়ল কালো বেলুন। ব্যারিকেডের অন্য পার থেকে সেই ছবি তুলতে ব্যস্ত পুলিশকর্মীরাও। মঙ্গলবার, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫৫
Share: Save:

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। আমূল বদলে গেল শরীরী ভাষা। যে পুলিশ দিনভর ঘিরে রেখেছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ তথা ধর্মতলায় চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চ সংলগ্ন রাস্তা, যে পুলিশ তালা ঝুলিয়েছিল গার্ডরেলের গায়ে, সেই পুলিশকেই দেখা গেল, আদালতের নির্দেশের পরেই তালা খুলে, গার্ডরেল সরিয়ে জায়গা করে দিতে আন্দোলনকারীদের। যার জেরে তীব্র উপহাসের মুখে তো পড়তে হলই, বহু জায়গায় পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভও দেখালেন আন্দোলনকারীরা। যার ফলে দিনের শেষে বাহিনীর অন্দরেও প্রশ্ন উঠেছে, বার বার কেন নিজেদের এই পরিস্থিতিতে ফেলছে পুলিশ? কেন কয়েক জনের কিছু সিদ্ধান্তের জন্য বাহিনীর কর্মীদের নিশানায় পড়তে হচ্ছে?

লালবাজারের তরফে যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাওয়া হয়নি। নগরপাল মনোজ বর্মা মঙ্গলবার শুধু বলেছেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা-ই করা হয়েছে।’’

রেড রোডের পুজো কার্নিভালের পাল্টা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সংগঠনের ডাকা ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর অনুমতি পুলিশ দেবে কি না, তা নিয়ে নানা মহলে সংশয় ছিলই। তার মধ্যেই নগরপাল একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেন, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ এবং সংলগ্ন ধর্মতলা চত্বরে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হচ্ছে। অর্থাৎ, পাঁচ বা তার বেশি জনের জমায়েত হলেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। এই নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসতেই নানা মহলে পুলিশের সমালোচনা শুরু হয়।

ওই সময়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছে দেখা যায়, রাস্তার তিনটি লেন মোট চারটি জ়োনে ভাগ করেছে পুলিশ। এক দিকের লেনে পরপর বেসরকারি বাস দাঁড় করানো রয়েছে। মাঝের দু’টি লেনের একেবারে সামনের অংশে গার্ডরেল দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে এক দল পুলিশকর্মীকে। তার পরের অংশে বসানো হয়েছে প্রায় সাত ফুট লম্বা লোহার ব্যারিকেড। সেই ব্যারিকেডে আবার লোহার মোটা চেন দিয়ে বেঁধে তাতে তালা ঝোলানো হয়েছে। সেই ব্যারিকেড পার করেও রাখা হয়েছে পুলিশের একটি দলকে। তারও পরে মূল ব্যারিকেড পাতা হয়েছে নেতাজির মূর্তির কাছে, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের শেষ অংশে। দেখা গেল, এলাকা পরিদর্শন করছেন যুগ্ম নগরপাল (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার। রাজভবন থেকে চৌরঙ্গি মোড়ের দিকের রাস্তায় রয়েছেন আরও দুই পুলিশ আধিকারিক, পুষ্পা ও ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। কেন গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকানো হচ্ছে? আন্দোলনকারীদের এই প্রশ্নের মুখে রূপেশ বলেন, ‘‘এমন কার্নিভালের কোনও অনুমতি নেই।’’

দুপুর ৩টে নাগাদ কলকাতা হাই কোর্ট দ্রোহের কার্নিভালের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরেই পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। তখনই পুলিশকে দেখা যায়, তড়িঘড়ি গার্ডরেল সরাতে। দ্রুত লোহার চেন খোলার জন্য লোক লাগিয়ে দস্তানা দিয়ে তাঁদের সাহায্য করতেও দেখা যায় পুলিশকে। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের উপরে রাখা বেসরকারি বাসের সারিও সরিয়ে নিতে দেখা যায় পুলিশকে। ওই সময়ে তীব্র উপহাসের মুখে পড়েন পুলিশকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের তরফে মোবাইলে পুলিশের চেন সরানোর ছবি তুলে রাখেন অনেকে। এক বেসরকারি বাসের চালক মন্তব্য করেন, ‘‘পুজোয় ডিউটি করার জন্য বাইরে থেকে আমাদের মতো বহু বাস ধরে এনেছিল পুলিশ। আগামী কাল ছাড়ার কথা। তার আগে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’’

আন্দোলনকারী এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘অনশন মঞ্চে চৌকি আনা থেকে জলের বন্দোবস্ত করতে বাধা দেওয়া, গত কয়েক দিন পুলিশ সব চেষ্টা করেছে। ডাক্তারদের লালবাজারে নিয়ে গিয়ে নগরপালের কাছে প্রতিবাদপত্র জমা করার সুযোগ দিতেই পুলিশ এক রাত সময় নিয়ে নিয়েছিল। এ দিন একটাই ভাল ব্যাপার, আদালতের নির্দেশ আসার পরেই দ্রুত গার্ডরেল খুলেছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE