আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের বাধার পরে প্রতিবাদীরা। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকে কেটে গিয়েছে আট দিন। চার দিন আগে তদন্ত তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। আরজি কর-কাণ্ডে তাও রহস্য কাটল না এখনও। স্পষ্ট জানা গেল না, অপরাধী এক জন, না একাধিক? এর মধ্যেই সিবিআই সূত্রে সামনে এল, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তাঁদের হাতে যাওয়া তথ্য-প্রমাণ ঘিরে একাধিক প্রশ্ন। এমনকি, এই তদন্তকারী সংস্থাও এখন মনে করছে, সুরতহাল তো বটেই, তরুণীর মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এত তাড়াহুড়ো?
কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল যদিও শুক্রবারই বলেছেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত করছে। তাদের তদন্তের উপরে বিশ্বাস রাখুন। যদি কলকাতা পুলিশের গাফিলতি থাকে, তা হলে তো তারা ছাড়বে না। সত্যি সামনে আসবেই।’’ সেই সঙ্গেই তারা দাবি করছে, সমস্ত তথ্য-প্রমাণ যথাযথ ভাবে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কী কী তথ্য-প্রমাণ তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে? সূত্রের খবর, এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তদন্তের অন্যতম বিষয় ঘটনাস্থলের কাছে একটি মাত্র সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। তার বেশ কয়েক ঘণ্টার ফুটেজ দেওয়া হয়েছে সিবিআই-কে। যদিও তাতে খুন বা ধর্ষণের কোনও সরাসরি ফুটেজ নেই। পুলিশ দিয়েছে, ঘটনার দিন এবং তার আগের কয়েক দিনের গোটা হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। যা লালবাজার খতিয়ে দেখা শুরু করেছিল। এই ঘটনায় একমাত্র ধৃত সঞ্জয় রায়ের হেডফোনও পুলিশ তুলে দিয়েছে সিবিআই গোয়েন্দাদের হাতে। যা মৃতদেহের পাশ থেকেই উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। সূত্রের খবর, যদিও এই হেডফোনকে এখনও পর্যন্ত তেমন ধর্তব্যের মধ্যে আনার ভাবনা নেই সিবিআই গোয়েন্দাদের। পুলিশ সিবিআই-কে দিয়েছে ঘটনার পুনর্নিমাণ সংক্রান্ত কয়েক জন বিশেষজ্ঞের মতামত লেখা রিপোর্ট। সূত্রের খবর, তাতে ওই বিশেষজ্ঞদের দাবি, এমন নারকীয় খুনের ঘটনা এক জনের পক্ষে অবশ্যই ঘটানো সম্ভব। সূত্রের খবর, এর পাশাপাশি পুলিশ দিয়েছে ঘটনার রাতে ওই হাসপাতালে কর্তব্যরত লোকজনের বয়ানের রেকর্ড। যদিও সিবিআই নিজের মতো করে বয়ান রেকর্ড এবং জেরার পর্ব শুরু করেছে। তবে কলকাতা পুলিশের এক কর্তার দাবি, এই ঘটনার সুরতহাল এবং ময়না-তদন্তের রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই রিপোর্টের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ মিলে যাচ্ছে বলে খবর। তবে এই পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের অন্যতম হল, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা নমুনার বায়োলজিক্যাল ফরেন্সিক পরীক্ষা। কিন্তু এই পরীক্ষার কোনও রিপোর্টই এখনও পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি। ফলে এখনও মূল প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে, ঘটনায় জড়িত কি এক জনই? নাকি অনেকে।
এর মধ্যেই একাধিক বিষয় সামনে আসছে। সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, তদন্তকারীরা মনে করছেন,অত্যন্ত দ্রুত সুরতহাল এবং ময়না-তদন্ত করে ফেলা হয়েছে এবংমৃতদেহ দাহ করা হয়েছে। সিবিআই সুত্রে দাবি, সুরতহাল ও ময়না-তদন্তের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধাপ, যা খুন এবং ধর্ষণের তদন্তে খুবইজরুরি, সেগুলি এখানে সম্ভবত মানা হয়নি। তার প্রমাণও গোয়েন্দারা পেয়েছেন বলে দাবি। মৃতদেহ দাহ করে ফেলায় তা আর এখন সম্ভব নয় বলেই সিবিআইয়ের বক্তব্য। গোয়েন্দা সূত্রে আরও দাবি, সুরতহাল এবং ময়না-তদন্তের সময়ে করা ভিডিয়োগ্রাফির যে ফুটেজ সিবিআই পেয়েছে,তার বহু অংশই নাকি অস্পষ্ট। ইচ্ছে করে তাড়াহুড়োয় এমন হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, মৃতদেহের বিভিন্নঅঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিস্তারিত বিবরণও উল্লেখ করা হয়নি ময়না-তদন্তের রিপোর্টে। মিলছে না সে রাতে হাসপাতালে থাকা সকলের বক্তব্য। আলাদা করে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু অসঙ্গতি।সে রাতে সেমিনার রুম এর চাবি কার কাছে ছিল এবং কী করে তরুণীর সেখানে থাকার খবর ধৃত সঞ্জয় এত সহজে জেনে গেল, এই সমস্তপ্রশ্নও ঘুরছে।
সূত্রের খবর, তরুণীকে জীবিত অবস্থায় শেষ কে দেখেছেন এবং মৃতদেহ কে প্রথম দেখলেন, সেই বক্তব্য ঘিরে ধোঁয়াশাও কাটেনি।সূত্রের খবর, মৃতদেহ প্রথম দেখা গিয়েছিল বেলা সাড়ে ন’টায়। হাসপাতাল থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল বেলা ১০টা ১০ মিনিটে। মাঝে প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় কী হল, সেটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। সিবিআই সূত্রে খবর, এই ৪০ মিনিট কী হয়েছে, সেটাই এখন মূল চিন্তা তাদের। এর মধ্যে তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে, নাকি যা তথ্য-প্রমাণ মিলেছে সেটাই যথেষ্ট ধরে নেওয়া হয়েছে, দেখছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy