ঠাসাঠাসি: পুজোর কেনাকাটার জন্য রবিবার উপচে পড়ল ভিড়। দূরত্ব-বিধি ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল অনেক ক্রেতাকে। (বাঁ দিকে) গড়িয়াহাট ও (ডান দিকে) নিউ মার্কেটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী ও নিজস্ব চিত্র
পুজোর আগে এর পরে হাতে রয়েছে মাত্র দু’টি রবিবার। এই পরিস্থিতিতে পুজোর মাসের প্রথম রবিবারে করোনা-বিধিকে কার্যত হেলায় উড়িয়ে ভিড় উপচে পড়ল শহরের বাজারগুলিতে। সেই ভিড় টেক্কা দিল গত কয়েক দিনের শপিং মলগুলির ভিড়কেও। যা দেখে প্রশ্ন উঠছে, কেনাকাটা করতেই এমন ভিড় হলে পুজোর চার দিন কী হবে।
ভিড় দেখে চিন্তিত কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক আধিকারিক হাতিবাগান বাজারে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘করোনার মধ্যে জ্বরের রোগীও সামলাতে হয়েছে আমাদের। এর পরে পুজোর ভিড় সামলাতে হবে। পুজো মিটলে আমাদের কী অবস্থা হবে জানি না।’’ কিন্তু এই কথায় যেন কান দেওয়ার সময় নেই পুজোর কেনাকাটায় মেতে ওঠা শহরবাসীর একাংশের।
বরং এ দিন দেখা গেল, কেনাকাটায় মশগুল অনেকেরই মাস্ক নেমে এসেছে থুতনিতে, কারও বা মাস্ক ঝুলছে কান থেকে। গড়িয়াহাট মোড়ে এমনই এক ক্রেতা বললেন, ‘‘পুজো এসে গিয়েছে। এখন আর সে ভাবে কেউ মাস্ক পরছেন না।’’ যেখানে দাঁড়িয়ে ওই কথা বলছেন তিনি, তার ৫০ ফুটের মধ্যে প্রায় দু’-তিনশো লোকের ভিড়।
আরও পড়ুন: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রা শুরু ফুলবাগান স্টেশন পর্যন্ত
কেনাকাটা করতে এ দিনের বেপরোয়া ভিড়ের বেশির ভাগটাই ছিল গড়িয়াহাটে। ভিড়ের নিরিখে এর পরে ছিল ধর্মতলা এবং হাতিবাগান। সন্ধ্যার দিকে হাতিবাগান মোড়ের পরিস্থিতি এমন হয় যে, বিধান সরণির একাংশে যান চলাচল প্রায় থমকে যায়। ছুটির দিনেও বাড়তি পুলিশ নামিয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করতে হয় শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ড এবং বড়তলা থানাকে।
আরও পড়ুন:কোভিড বর্জ্য সংগ্রহের বরাদ্দ বাড়াল রাজ্য
চার বছরের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে বারাসত থেকে হাতিবাগানে কেনাকাটা করতে আসা এক দম্পতি জানালেন, পরে আরও ভিড় হতে পারে ভেবেই এখন চলে এসেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে বারাসতের দোকানেই কেনাকাটা করলেন না কেন? স্বাতী বসু রায় নামে ওই মহিলা বললেন, ‘‘গাড়ির সমস্যা সামলেও আসতে হল। কারণ শ্বশুরবাড়ির দিকের ছোটরা কলকাতার জামা না হলে পরতে চায় না!’’ কিন্তু মেয়ের মুখে মাস্ক নেই কেন? স্বাতীর দাবি, ‘‘এখান থেকে ভাল মাস্ক কিনে নিয়ে যাব ভেবে আর ওকে পরাইনি।’’
আরও পড়ুন:মাটি ভাল, তাই নির্বিঘ্নে উড়ালপুল পেরোল ‘উর্বী’
ধর্মতলা চত্বরে আবার ভিড় সামলাতে এ দিনই উঁচু জায়গা থেকে নজরদারি চালানো শুরু করতে হয়েছে নিউ মার্কেট থানার পুলিশকে। নিউ মার্কেটে প্রবেশের মুখেই বাবা-মায়ের সঙ্গে হাজির দমদমের এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘সকাল ১০টায় বেরিয়েছি। প্রথমে নাগেরবাজারের একটা শপিং মলে গিয়েছিলাম। শাড়ির সঙ্গে পরার মতো কানের দুল কিনতে এত দূর আসতে হল।’’ পাশে দাঁড়ানো বাবার মন্তব্য, ‘‘করোনা বলে বাচ্চাদের পুজো তো বন্ধ হতে পারে না! এর পরে ভিড়ে আরও পারব না ভেবে আজই এলাম।’’
এ দিন কি ভিড় কম মনে হল? প্রশ্ন শুনে নিউ মার্কেট চত্বরের এক হকার বললেন, ‘‘ভিড় কোথায়? শুধু মাথা গুনলে হবে! দিনের শেষে তো হকারদের পকেটই ভরছে না!’’ বিক্রিবাটার পরিমাণ নিয়ে অবশ্য খানিক নিশ্চিন্ত গড়িয়াহাট মোড়ের ব্যাগ বিক্রেতা শ্যামল কর্মকার। ‘‘এ বার পুজো পুজো মনে হচ্ছে। করোনা যে পুজোর হুজুগকে বদলে দিতে পারেনি, সেটাই শান্তি।’’— বলছেন তিনি।
কিন্তু এমন বেপরোয়া ভিড় চলতে থাকলে পুজোর পরে এই স্বস্তি থাকবে তো? ভিড়ের নিরিখে যে শপিং মলগুলিকে টেক্কা দিয়েছে শহরের বাজারগুলি, সে প্রসঙ্গে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘চিন্তামুক্ত হতেই শপিং মলগুলিতে এত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব ধরনের বাজারে তা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy