নাট্যশিক্ষক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যয়ের নামে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরে নাট্যজগতে নিরাপদ পরিসরের দাবিতে প্রতিবাদ সভা। বক্তব্য রাখছেন নাট্যব্যক্তিত্ব অশোক মুখোপাধ্যায়। শনিবার রাণুচ্ছায়া মঞ্চে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
চোয়াল শক্ত করে দৃঢ় স্বরে প্রশ্ন করছেন গ্রুপথিয়েটার কর্মী এক তরুণী। আর এক তরুণী নাট্যকর্মী তাঁর হাতটি ধরে। নিগ্রহ উত্তীর্ণাদের গল্প বা ‘সারভাইভারস টেলস’ বলে ডাক দেওয়া প্রতিবাদ-সভার সুরটা এই ছবিই বেঁধে দিল।
ধর্ষণের অভিযোগে বাংলা নাট্যমঞ্চের এক প্রতিষ্ঠিত শিক্ষক-নির্দেশক গ্রেফতার হওয়ার পরের দিন, শনিবার বিকেলে রাণুচ্ছায়া মঞ্চের আসর নানা প্রশ্ন ছুড়ে দিল। কেন বাংলার নাট্যজগৎ তরুণ কুশীলবেদের নিরাপদ পরিসর দিতে ব্যর্থ হচ্ছে? কেন হেনস্থার শিকার হলে অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই? এবং এই প্রতিবাদ-সভায় কেন নাট্যজগতের অজস্র প্রতিষ্ঠিত মুখকে দেখা যাচ্ছে না?
অভিযুক্ত নাট্যশিক্ষক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়কে এ দিনই শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়েছিল। তাঁকে সোমবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সরকারি কৌঁসুলি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযুক্তের ডাক্তারি পরীক্ষা বাকি। আরও জিজ্ঞাসাবাদ দরকার। সুদীপ্তবাবু ছাত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন বলে ভাবার কারণ আছে।’’ ফুলবাগানে ধর্ষণের অভিযোগ ছাড়াও বেলেঘাটায় যৌন হেনস্থার অভিযোগও নথিবদ্ধ হয়েছে। এ দিনই বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন ধর্ষণের অভিযোগকারিণী।
নাট্যকর্মী তথা বৃহত্তর সমাজের প্রতিবাদের আসরে প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব অশোক মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আশা করব, নিরপেক্ষ বিচার হবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘থিয়েটার ঘিরে ইদানীং নানা ব্যবসায়িক উদ্যোগের ছড়াছড়ি। অজস্র কর্মশালা। এর মধ্যে নাটক শেখানোর নামে নানা দমনপীড়ন, শোষণের ঘটনাও বাড়ছে। বিষয়টা উদ্বেগের।’’ প্রয়াত অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্য কয়েক জন মহারথীর সঙ্গে কাজ করার প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রবীণ অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘তখনও নাটকে বহু শরীরি মেলামেশা বা ধর্ষণের দৃশ্য অভিনীত হয়েছে। অভিনয় শেখাতে অঙ্গস্পর্শ করার দরকার পড়েনি।’’ সমসময়ের বিভিন্ন অভিনেত্রীরা আবার বলেছেন, ‘‘থিয়েটারে অনেক সময়েই শরীরকে একটি হাতিয়ার (টুল) হিসেবে দেখা হয়। অনেকেই চোখ বুজে নাট্যগুরুর কথা শোনেন। কিন্তু গুরু বিশ্বাস ভঙ্গ করার আঘাত মারাত্মক।’’
নানা ক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য লড়াইয়ের অন্যতম মুখ রঞ্জিতা সিংহ, সমাজকর্মী সোমা মারিক প্রমুখও শামিল হন প্রতিবাদে। আবার পরিচিত নাট্যকর্মী অনেককে দেখাও যায়নি। ব্যস্ততার জন্য থাকতে পারেননি কৌশিক সেন। তবে তিনি বলেন, ‘‘নাটক শেখানোর জন্য এমন ব্যবহারের অভিযোগ, মানা যায় না। আমি চাই, অভিযোগের ঠিকঠাক বিচার হোক। কোনও শিক্ষক যতই গুণী হোন, এটা করতে পারেন না।’’ প্রতিবাদী মেয়েদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই না-হলে কেউ তাঁদের পাশে দাঁড়াত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy