এমনই খোলা থাক ব্যালকনি, নীতি বদলে পুর-প্রস্তাব। নিজস্ব চিত্র
ব্যালকনিতে আলো-হাওয়া বেশি করে আসুক। রোদ পড়ুক। এমন ব্যালকনিতে যাতায়াত করা যাবে, ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যাবে। কোনও ভাবে পুরোটা ঘেরা যাবে না। কিন্তু খোলাই রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনে সেই ব্যালকনি আগুন নেভানোর কাজেও ব্যবহার করা যায়। তা হলেই ব্যালকনি নির্মাণের ক্ষেত্রে বাড়তি ছাড় পাবেন সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাট মালিক। শহরের ব্যালকনি-নীতিতে এমনটাই বদল আনতে চলেছে কলকাতা পুরসভা।
ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে পুর বিল্ডিং আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য তা পাঠানোও হবে। ব্যালকনি খোলা রাখার এই নিয়ম আনার বিষয়ে পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর কারণ মূলত দু’টি। প্রথমত, সাম্প্রতিক সময়ে পরপর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডে দেখা গিয়েছে, বহুতলের আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয়েছে দমকলকর্মীদের। কারণ, মূল ব্যালকনি অনেক ক্ষেত্রে ঘেরা থাকায় দমকলকর্মীদের হয় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়েছে বা কোনও দরজা ভেঙে আগুন লাগার উৎস পর্যন্ত পৌঁছতে হয়েছে। ফলে তাতে সময় ব্যয় হয়েছে, ঝক্কিও বেড়েছে। দমকল নিজেদের অভিজ্ঞতার কথাও পুরসভাকে বলেছে। এ বার আর সে ব্যাপারে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না পুরসভা। তাই নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যালকনি খোলা রাখার কথাই বলা হচ্ছে। তবে তা বাধ্যতামূলক নয় বলেই জানাচ্ছেন পুরকর্তারা। তাঁদের কথায়, এমনি ব্যালকনি করা যেতেই পারে, সে ক্ষেত্রে এই ছাড় মিলবে না।
পুরকর্তাদের একাংশ এ-ও মনে করছেন, প্রতি তলে ব্যালকনির ক্ষেত্রে অনেক সময়েই দেখা যায়, নীচের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা পর্যাপ্ত আলো-হাওয়া পান না। তাই প্রতি দু’তলা অন্তর এই ব্যালকনি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, বিল্ডিং রুল সংশোধনের যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তাতে দোতলার বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট বহুতলের ক্ষেত্রেই এমন ব্যালকনি তৈরি করা যেতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে যাতে সেই বারান্দার কোনও ছাদ না থাকে বা চারপাশ ঘেরা না থাকে। রেলিং থাকলেও দেওয়াল দিয়ে কখনওই ঘেরা থাকবে না সেই ব্যালকনি। আর তা হলেই এফএআর-এর (ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো) মধ্যে এই ব্যালকনির অংশটুকু ধরা হবে না। মিলবে ছাড়। তখন এই ধরনের ব্যালকনি ‘টেরাস’ হিসেবে গণ্য করা হবে। পাশাপাশি, প্রস্তাবিত ব্যালকনি নির্মাণের জায়গার মোট অংশের তিন শতাংশের বেশি হবে না। এর কারণ হল, ছাড় পাওয়ার জন্য নির্মাণ-কৌশলে ব্যালকনির অংশ যাতে বাড়িয়ে না-দেওয়া যায়, সে কারণেই নির্দিষ্ট অংশের উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়োর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে। যেমন সিঁড়ি এবং লিফটের সামনে লবিতে ছাড় রয়েছে। এ বার যে নিয়মে ব্যালকনি তৈরির কথা বলা হচ্ছে, তেমনটা করলে সেখানেও ছাড় মিলবে। এত দিন এ বিষয়ে নির্দেশিকা ছিল। এ বার সেটাই আইন হিসেবে আসতে চলেছে।’’
এমনিতেই বহুতলের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে ‘ফায়ার রিফিউজ’ নির্মাণ করার কথা বলে দমকল। দমকলই বলে দেয় যে, সেই ‘ফায়ার রিফিউজ’ বহুতলের কোথায় কোথায় নির্মাণ করতে হবে। সেটা সাধারণত সিঁড়ির সঙ্গে সংলগ্ন থাকে। অগ্নিকাণ্ডের সময়ে ওই জায়গাকেই আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করে দমকল। কিন্তু প্রস্তাবিত ব্যালকনি সাধারণ ভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের সময়েও যাতে ব্যবহার করা যায়, সে ভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy