—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পুজোর উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ ভাবছেন, মেনুতে খানিকটা কাটছাঁট করবেন। ভোগ বিতরণের সময়ে একটির জায়গায় কেউ দু’টি বেগুনি চাইলে বিনীত ভাবে না বলে দেবেন। কেউ আবার ভাবছেন, নানা রকম আনাজ দিয়ে যে লাবড়া হয়, এ বার সেটির পরিমাণ কমিয়ে চাটনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন। কারণ, আনাজপাতির মধ্যে টোম্যাটোর দামটাই এখন তুলনামূলক ভাবে কম। পুজোকর্তারা জানাচ্ছেন, এ বছর এমনিতেই প্রতিমার দাম থেকে শুরু করে পুজোর খরচ, সবই বেড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে আনাজের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে এ বার চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁদের কপালে। তবে তাঁরা জানাচ্ছেন, পুজোর ভোগের পরিমাণ বা গুণমান, কোনও কিছুর সঙ্গেই আপস করার প্রশ্ন নেই। তাই গোটা ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।
পুজোয় আনাজের দাম যে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে, তা মানছেন কোলে
মার্কেটের আনাজ ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা জানান, পাইকারি বাজারেও দাম আগুন। তাই খুচরো বাজারে তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে। উচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং ঝিঙে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। আর বেগুনের দাম ১০০ পেরিয়েছে। একমাত্র টোম্যাটোর দাম কম। ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। কাশী বোস লেনের পুজোকর্তা সোমেন দত্ত বললেন, “এমনিতেই পুজোর খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাজারও এ বার আগুন। আমরা পুজোর ভোগের মানের সঙ্গে আপস করতে পারব না। ভোগের পরিমাণও কমানো যাবে না। সপ্তমী ও অষ্টমীর ভোগে আনাজপাতি অনেক থাকে। তাই হয়তো যতগুলো পদ রান্না হয়, তার থেকে একটা-দুটো কম করাব। তাতে আনাজ একটু হলেও কম লাগবে।’’
বাগুইআটির রেল পুকুর সর্বজনীন পুজো কমিটির কর্তা উৎপল চন্দ্র বললেন, ‘‘অষ্টমীতে আমাদের পুজোর মেনুতে খিচুড়ি, লাবড়া, পোলাও, আলুর দম, পায়েস আর চাটনি থাকে। কিন্তু যে হারে আনাজের দাম বেড়েছে, তাতে খরচ আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তা বলে পুজোর ভোগ নিয়ে তো কোনও আপস করা যায় না। তাই অতিরিক্ত যে খরচ হচ্ছে, সেটা ক্লাবের সদস্যেরা মিলে ভাগ করে নেব।’’ হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসুও প্রায় একই কথা বললেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুজোর প্রতিটি পর্যায়েরই খরচ বেড়েছে। তার মধ্যে আনাজের দাম এতটা বাড়ায় পুজোর বাজেটও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু ভোগের সঙ্গে আমরা আপস করি না।’’
অক্টোবরের প্রথম দিকের অতিবৃষ্টিতে ফসল কিছুটা নষ্ট হওয়ার জেরেই আনাজের দাম
এতটা বেড়েছে বলে মনে করছেন রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা ‘চাষি ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট কমল দে। তবে তাঁর মতে ‘‘শুধু অক্টোবরের গোড়ার অতিবৃষ্টিই দাম বাড়ার পিছনে একমাত্র কারণ নয়। এ বার তো জেলা থেকে আনাজের ট্রাক ঢুকতেই পারছে না কলকাতায়। পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে মহালয়া থেকে। তখন থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে রাস্তায়। যার জেরে জেলা থেকে আসা আনাজের গাড়ি শহরে ঢুকতে পারছে না ঠিক মতো। অনেক গাড়ি আসছেই না। যে সব গাড়ি আসছে, তারা দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া হাঁকছে। তা ছাড়া, পুজোর জন্য কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা বিভিন্ন সময়ে ‘নো এন্ট্রি’ হয়ে থাকছে। ফলে সামগ্রিক ভাবে আনাজের চাহিদার তুলনায় জোগান অনেকটাই কমে গিয়েছে।’’
কোলে মার্কেটের বিক্রেতাদের বক্তব্য, আগে ষষ্ঠী থেকে মানুষের ঢল নামত রাস্তায়। তাই আনাজের আমদানি পুজোর কয়েকটা দিন সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কলকাতার রাস্তায় ট্র্যাফিকের হাল এতটাই খারাপ যে, আনাজের গাড়ি ঢুকতে চাইছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy