ছবি সংগৃহীত।
চব্বিশ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বাকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা বুঝেছিলেন, গর্ভস্থ ভ্রূণ তীব্র সঙ্কটে। রক্তের কোষ ভেঙে গিয়ে ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ও পেটে জল জমেছে। অর্থাৎ, ভ্রূণটি ‘হাইড্রপস ফেটালিস’-এ আক্রান্ত। যে কোনও মুহূর্তে অঘটনের আশঙ্কা করে চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন, ভ্রূণটিকে রক্ত দেওয়া হবে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিয়ে ছ’বার রক্ত দিয়ে শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখালেন এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
বিরাট ঝুঁকি সামলে গর্ভস্থ শিশুকে রক্ত দিয়ে বাঁচানোর এই ঘটনা পূর্ব ভারতে প্রথম বলেই জানাচ্ছেন ওই চিকিৎসকেরা। বালির বাসিন্দা অংশু কুমার ও অনুরতি কুমারের এটি দ্বিতীয় সন্তান। বুধবার ন’দিনের শিশুটিকে নিয়ে ওই হাসপাতালের সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন তাঁরা। বললেন, ‘‘সামান্য অসুবিধা হলেই চিকিৎসকদের ফোন করতাম। ওঁরাও সব সময়ে খবর নিতেন। সকলকে বলব, এই সমস্যা হলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের কাছে যান। সন্তান হারানোর কষ্ট পেতে হবে না।’’
ওই বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১০ হাজারের মধ্যে একটি গর্ভস্থ শিশুর এই রোগ হয়। গর্ভস্থ অবস্থাতেই মৃত্যুর হার ৫৫-৯৮ শতাংশ। তাই দ্রুত ভ্রূণটিকে রক্ত দিয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে হয়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, বাবার রক্তের গ্রুপ পজ়িটিভ, মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ এবং তাঁদের প্রথম সন্তানের রক্তের গ্রুপ যদি পজ়িটিভ হয়, তা হলে তখন শিশুর রক্ত প্রবেশ করে মায়ের শরীরে। মায়ের শরীর সেই রক্তকে চিনে রাখে। দ্বিতীয় সন্তানেরও রক্তের গ্রুপ যদি পজ়িটিভ হয়, তখনই সমস্যাটি হয়। সে ক্ষেত্রে মায়ের শরীর ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় ভ্রূণের রক্তের কোষগুলি ভাঙতে থাকে। সাধারণত, শিশুদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা থাকে ১৬-১৮। সেখানে ২৪ সপ্তাহে ওই ভ্রূণের হিমোগ্লোবিন ছিল তিন। মল্লিনাথবাবু এবং স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জয়ন্ত গুপ্ত, চিকিৎসক কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, সুদীপ সেনগুপ্ত, সুদীপ্তশেখর দাস, সীতা রামমূর্তি পাল এবং সুমনা হকের দল সিদ্ধান্ত নেয়, ভ্রূণকে রক্ত দিতে হবে। কিন্তু পূর্ব ভারতে আগে এমন ঘটেনি। তাই স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি দরকার ছিল। পরিস্থিতি বিচার করে দ্রুত অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য দফতর।
অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গর্ভের যে থলির মধ্যে ভ্রূণ থাকে, সেটি ফুটো করে রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ। মল্লিনাথবাবু বলেন, ‘‘খুব দক্ষ হাতে ফুটো করতে হয়, না হলে জল বেরিয়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু হতে পারত। পেটে সংক্রমণ হওয়া ও সময়ের আগেই শিশুটির ভূমিষ্ঠ হওয়ার আশঙ্কাও ছিল।’’ ভ্রূণের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ছ’বার দেওয়া হয় রক্ত। ৩৫ সপ্তাহে সন্তান প্রসব করেন অনুরতি। জন্ম দেন ছেলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy