পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ফাইল ছবি
এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির মামলায় ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ‘পয়লা বাইশ’ কুঠুরির দু’নম্বর লক-আপে একাই রয়েছেন প্রায় ২৮ দিন ধরে। কী ভাবে কাটছে তাঁর জেল জীবন?
জেলে আসার কয়েক দিন পর থেকেই সহবন্দিদের গালিগালাজের জেরে কুঠুরির বাইরে কার্যত মুখ দেখাচ্ছেন না পার্থ। নিজের চৌহদ্দিতে সারা দিন শুয়ে-বসেই কাটছে তাঁর। শুধুমাত্র আইনজীবীদের সঙ্গে সংশোধনাগারের অফিসে বসে ঘণ্টাখানেক মামলা নিয়ে আলোচনা করছেন। কারারক্ষীদের দাবি, সংশোধনাগারে আসার পরে এখনও পর্যন্ত পার্থের ঘনিষ্ঠ কোনও দলীয় কর্মী বা নেতা এবং আত্মীয়কে সেখানে আসতে দেখা যায়নি। মেয়ে জামাই না-হয় বিদেশে আছেন। কিন্তু পার্থর নাকতলার বাড়ির পাশেই থাকেন তাঁর ছোট ভাই। তাঁকেও জেলে আসতে দেখা যায়নি বলে দাবি কারারক্ষীদের। আইনজীবী মারফত কিছু টাকা পার্থের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে ওই টাকায় ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী।
প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক আবেদনের ভিত্তিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে পার্থকে আদালতে হাজির না-হতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন বিচারক। জেল থেকেই ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজির থাকবেন পার্থ। কর্তব্যরত কারারক্ষীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই খবর শোনার পরে মাথা নিচু করে পার্থকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমাকে এরা সূর্যের মুখ দেখতে দিতে চায় না। সেই কারণেই এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
মাস দেড়েক আগেও তিনি দলের মহাসচিব পদে থেকে লালবাতির গাড়িতে সওয়ার হতেন। সব সময়ে অনুগতদের ঘেরাটোপে থাকতেন। কারারক্ষীদের একাংশের কথায়, ‘‘আত্মীয়স্বজন তো নয়ই। দাদা বা স্যর ডাকা সেই দলীয় কর্মী বা অনুগতদের এত দিনেও আমরা আসতে দেখলাম না। দুর্নীতির মামলায় জড়িয়েছেন পার্থ। তাঁর ঘনিষ্ঠেরাও দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছে সিবিআই ও ইডি। পাছে কেউ তদন্তকারী সংস্থার নজরে পড়েন, সে কারণেই হয়তো পার্থকে সবাই এড়িয়ে যাচ্ছেন।’’
পার্থ একা থাকলেও প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে অল্প দূরে আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে পার্থের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় অবশ্য থাকছেন সহবন্দিদের সঙ্গে। তাঁর সহবন্দিদের অধিকাংশই মাদক পাচার ও খুনে অভিযুক্ত। তাঁদের সঙ্গে বিশেষ মেলামেশা করেন না অর্পিতা। ফলে সকলের মাঝেও একাই তিনি।
তাঁর নিরাপত্তায় থাকা মহিলা কারারক্ষীদের একাংশের দাবি, অর্পিতা প্রায় ধরেই নিয়েছেন, তিনি আর জামিন পাবেন না। বাকি জীবনটা জেলেই কাটাতে হবে। তাঁর ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সে আদেশ শোনার পরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত অর্পিতাও। বিচারকের নির্দেশ শুনে হতাশ অর্পিতা নাকি বলেছিলেন, ‘১৪ দিন পর পর বাইরের আলো একটু দেখতাম। সূর্যের আলো গায়ে লাগত। সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হল।’ আজ, বুধবার ইডির মামলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পার্থ ও অর্পিতার সেই ভার্চুয়াল শুনানি।
সংশোধনাগারে আসার পর থেকে অর্পিতার সঙ্গেও কোনও আত্মীয় বা বন্ধু দেখা করতে আসেননি। জেলের খাবারের মেনুও অর্পিতার মুখে রোচে না। খাবার দেখলেই চোখে জল। অর্ধেক দিন খাবারের থালা সরিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন বলে জানাচ্ছেন কারারক্ষীদের কেউ কেউ। সূত্রের খবর, অর্পিতার আইনজীবী সোমবার জেলে কিছু টাকা জমা দিয়ে এসেছেন। মাঝেমধ্যে ক্যান্টিন থেকে নিজের পছন্দ মতো খাবার কিনে নিয়ে অর্পিতা যাতে খেতে পারেন, সেই জন্য এই ব্যবস্থা হয়েছে। ওই টাকা থেকেই মঙ্গলবার পছন্দের খাবার ক্যান্টিন থেকে কিনে খেয়েছেন তিনি।
আইনজীবীদের কথায়, পার্থের মতো অবস্থা অর্পিতারও। পার্থ ও অর্পিতা পরিজনদের জড়িয়ে একাধিক কোম্পানি খুলে দুর্নীতি কাণ্ডের লুটের টাকায় সম্পত্তি কিনেছিলেন বলে আদালতে দাবি করেছে তদন্তকারী দুই সংস্থা। ফলে পরিজন ও ঘনিষ্ঠেরা অর্পিতার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy