প্রতীকী ছবি।
আপাতদৃষ্টিতে মামুলি সর্দি-কাশিতে ভুগছিল শিশু। তাই তার পরীক্ষা করানো হয়নি। ফলে জানতে পারেননি যে, আপনার সন্তানের হয়তো করোনা হয়েছিল। তৃতীয় ঢেউয়ে উপসর্গ গুলিয়ে এ ভাবেই হোঁচট খাচ্ছেন অভিভাবকেরা। সংক্রমণ সন্তানের শরীরে থাবা বসিয়েছে কি না, জানবেন কী ভাবে? চিকিৎসকেরা বলছেন, চোখ-কান খোলা রাখতে হবে বাবা-মাকেই। জ্বর, কাশি, খিঁচুনি, মাথা ব্যথা, বার বার বিছানা ভিজিয়ে ফেলা, ঘুমের মধ্যেও প্রস্রাব করতে ওঠা, পাতলা পায়খানা অথবা খেয়েও ওজন না বাড়লে জানান চিকিৎসককে। কয়েক দিনের শিশু থেকে আঠারো বছরের কম বয়সিদের চোখে চোখে রাখতে হবে।
করোনাভাইরাসের প্রভাব শিশুর শরীরে কতটা? সংক্রমণের প্রথম পর্ব থেকেই উঠছিল এই প্রশ্ন। দ্বিতীয় ঢেউয়ে খানিকটা বোঝা গিয়েছিল শিশুদের উপরে করোনার প্রভাব। তৃতীয় ঢেউয়ে সারা বিশ্বেই আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের শরীরে করোনা দীর্ঘমেয়াদি কী প্রভাব ফেলবে, তা জানতে আপাতত গবেষণাই ভরসা। শহরের শিশুরোগ চিকিৎসকদের আশ্বাস, ছ’মাসের মধ্যে সেই উত্তর অনেকটাই জানা যাবে।
বিদেশে তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিত শিশুদের নিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর একটি গবেষণাপত্র বলছে, কোভিডের পরে আঠারো বছরের কম বয়সিদের ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। যা নিয়ে বিস্মিত নন এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, যে কোনও ভাইরাসের আক্রমণেই ডায়াবিটিস হতে পারে। টাইপ-ওয়ান ডায়াবিটিসের কারণ নির্দিষ্ট করা না গেলেও ভাইরাসের আক্রমণেও সেটা হয়।
কী ভাবে? প্যাংক্রিয়াসের আইলেট অব ল্যাঙ্গারহ্যান্সে স্থিত বিটা সেল কোনও ভাইরাসের প্রভাবে ধ্বংস হতে পারে। ফলে সেই সেল নিঃসৃত ইনসুলিন তখন তৈরি হয় না। তাতেই রক্তে শর্করার মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়। বিটা সেল ধ্বংস হয়ে টাইপ-ওয়ান ডায়াবিটিস দেখা দিলে সেই সমস্যা আজীবন চলে। সতীনাথবাবুর কথায়, ‘‘তখন সারা জীবন ইনসুলিনেই ভরসা করতে হয়। সেই ইনসুলিন, যা রোগীর শরীরে প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯২২ সালের ১১ জানুয়ারি, কানাডার টরন্টো শহরে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সার্স এবং মার্সে সংক্রমিত শিশুদেরও পরবর্তী কালে ডায়াবিটিস হয়েছে। তবে দু’বছরের ফলো-আপের শেষে টাইপ-টু আক্রান্তদের শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক হতেও দেখা গিয়েছে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিতদের মধ্যে যারা পরবর্তী কালে টাইপ-টু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের শরীরে এর প্রভাব বুঝতে সময় লাগবে। সতীনাথবাবুর কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, করোনায় আক্রান্ত শিশুদের স্থূলতা ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বাড়ায়। ওষুধ ও নির্দিষ্ট খাদ্য-তালিকা মেনে ওজন কমাতে হবে। শিশুর জ্বর দেখলে চিকিৎসক এবং অভিভাবককে রক্তের শর্করা পরীক্ষার কথা ভাবতে হবে। সে যত ছোট শিশুই হোক।’’
শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কি না, তা না জানলে কী ভাবে সচেতন হবেন অভিভাবক? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঘুমের মধ্যেও প্রস্রাব পাওয়া, বিছানা ভিজিয়ে ফেলা, ক্লান্তি, যথেষ্ট খেয়েও ওজন না বাড়া— এমন কিছু দেখলেই সচেতন হোন।
শিশুরোগ চিকিৎসক কৌস্তভ চৌধুরী জানাচ্ছেন, জ্বর, খিঁচুনি, পেট ও মাথা ব্যথা, পাতলা পায়খানা হলেই সজাগ হতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এই সব সমস্যায় আইজিজি বা আনুষঙ্গিক কিছু পরীক্ষা ও ইকো করে সংক্রমণের পূর্ব ইতিহাস জানতে পারব। তার ভিত্তিতেই কোভিড-পরবর্তী প্রভাব নির্ণয় করে চিকিৎসা করতে হবে।’’
শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথে কোভিড নিয়ে ১৫টি শিশু ভর্তি, যাদের বয়স এক থেকে ১২ বছরের মধ্যে। কেউই গুরুতর অসুস্থ নয়। ওদের কারও ডায়াবিটিস বা ‘মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন’ হচ্ছে কি না, জানতে ইনস্টিটিউট কোভিড-পরবর্তী সমীক্ষা করবে। কিন্তু সন্তানের প্রতি অভিভাবকদের তীক্ষ্ণ নজর জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy