Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Tram

Tram: ট্রাম সংগ্রহশালা বাঁচাতে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা কে হবে

যাতায়াতকারী অনেকেরই অভিযোগ, গোটা পরিসরটি ছোট হওয়ায় ভিতরে গিয়ে বসার জন্য বেশ খানিক ক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়।

বিপন্ন: অবহেলায় পড়ে রয়েছে ট্রামের সংগ্রহশালা।

বিপন্ন: অবহেলায় পড়ে রয়েছে ট্রামের সংগ্রহশালা। নিজস্ব চিত্র।

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৩৯
Share: Save:

পথচলতি অনেকের কাছেই কার্জন পার্কের ইঁদুরদের আস্তানা কৌতূহলের বিষয়। কিন্তু, এ বার সেই ইঁদুরদের আস্ফালনে বিপন্ন হতে বসেছে কলকাতায় ট্রামের একমাত্র মিউজ়িয়াম এবং ক্যাফেটেরিয়া ‘স্মরণিকা’। সেখানকার বিদ্যুতের তার বার বার ইঁদুরে কেটে দেওয়ায় ওই সংগ্রহশালার বিভিন্ন আলো এবং বাতানুকূল যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন সংস্থার আধিকারিকেরা। উল্লেখ্য, দু’কামরার ট্রাম ‘স্মরণিকা’র প্রথম কামরায় একটি এসি ক্যাফেটেরিয়া আছে। সেখানে টিকিট কেটে কিছু ক্ষণ সময় কাটাতে পারেন উৎসাহীরা। পাশের কামরায় থাকা মিউজ়িয়ামে বিভিন্ন স্মারকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে কলকাতার ট্রামের ইতিহাসকে। সেখানে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা ছাড়াও আগ্রহীদের অনেকে নিয়মিত আসেন। ট্রামের ইতিহাস সংরক্ষণের পাশাপাশি শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ-মাধ্যমটি সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে আগ্রহ বাড়াতে ২০১৩ সালে ওই ক্যাফে চালু করা হয়েছিল।

কিন্তু ওই ক্যাফেতে যাতায়াতকারী অনেকেরই অভিযোগ, গোটা পরিসরটি ছোট হওয়ায় ভিতরে গিয়ে বসার জন্য বেশ খানিক ক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়। ফলে, আগ্রহ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মিউজ়িয়াম এবং ক্যাফে ক্রমশই তার জৌলুস হারাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ক্যাফের এসি খারাপ হয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ। সম্প্রতি সেটি কোনও মতে সারানো হয়েছে। এ ছাড়া সংগ্রহশালায় বিভিন্ন দ্রষ্টব্যের জন্য যে সব প্যানেল আলো বসানো হয়েছে, সেগুলির অবস্থাও খারাপ। দর্শকদের বড় অংশের অভিযোগ, ট্রামকর্মীদের ব্যাচ, টিকিট পাঞ্চিং যন্ত্র, ট্রামের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, একাধিক মডেল— সবই কার্যত অযত্নে লালিত।

দর্শকদের একাংশ আবার মিউজ়িয়াম থেকে বিভিন্ন স্মারক উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগও এনেছেন। কলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম এবং প্রথম বাতানুকূল ট্রামের মডেল জনৈক আধিকারিকের ইচ্ছায় খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। যদিও, এ নিয়ে ট্রাম সংস্থার কেউই মুখ খুলতে চাননি।

ওই ক্যাফেতে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে অনমিত্র বসুর। তাঁর কথায়, ‘‘ক্যাফেতে ঢোকার পা-দানি ভাঙা। ভিতরের অবস্থাও খারাপ। কামরায় ছবির উপরে জল পড়ার চিহ্ন ফুটে উঠেছে।’’ ওই সংগ্রহশালায় নিয়মিত যাওয়া, আর এক দর্শক শ্রেয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ক্যাফে এবং মিউজ়িয়াম নিয়ে আমার মতো অনেকেই আগ্রহী। কিন্তু এই অব্যবস্থা দেখলে খুব খারাপ লাগে।’’

ট্রাম সংস্থার আধিকারিকদের একাংশ অবশ্য এসি এবং আলোর সংযোগ নষ্ট হওয়ার পিছনে কার্জন পার্কের ইঁদুরদের উৎপাতকে দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাত আটটার পরে ক্যাফে বন্ধ হয়ে গেলে অন্ধকারে ইঁদুরদের উপদ্রব বাড়ে। খাবারের উচ্ছিষ্টের টানে হাজির হয় তারা।

সংগ্রহশালার এই দুরবস্থার জন্য ট্রামপ্রেমীদের একাংশ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের দিকে আঙুল তুলেছেন। সংস্থার আধিকারিকেরা এ নিয়ে সরাসরি মুখ না খুললেও আর্থিক সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রয়োজনীয় টাকা না মেলায় বহু কাজ করা যাচ্ছে না। অতীতে ক্যাফে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেও সেনাবাহিনীর বাধায় পিছিয়ে আসতে হয়েছে। তবু, ‘স্মরণিকা’ নিয়ে আগ্রহের কথা মাথায় রেখে সীমিত রসদের মধ্যে জরুরি মেরামতির কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম সংস্থার এক আধিকারিক। ট্রামপ্রেমীরা অবশ্য ‘স্মরণিকা’র সমস্যাদীর্ণ দশায় ব্যথিত। ইঁদুর-বাহিনীকে সরিয়ে ট্রাম মিউজ়িয়ামের হৃত গৌরব ফেরাতে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো কেউ এগিয়ে আসুন— আপাতত এটুকুই চাইছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Tram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy