(বাঁ দিকে) এই হস্টেল থেকেই পড়ে মৃত্যু হয়েছে স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর। (ডান দিকে) স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। ছবি: সংগৃহীত।
যাদবপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর কিনারা করতে জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হস্টেলের তিন ছাত্রকে যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। থানাতেই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পাশাপাশি হস্টেলে গিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন যাদবপুর থানা এবং লালবাজারের গোয়েন্দা শাখার আধিকারিকরা। রাতে কী ঘটেছিল? মৃত পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডু দিনভর কী করছিলেন? কার কার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল? সন্ধ্যার পরই বা তিনি কী করছিলেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
এরই মধ্যে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জয়দীপ ঘোষ জানিয়েছেন, নতুন বর্ষের পড়ুয়া ভর্তির পর সোম, মঙ্গল এবং বুধ— পর পর এই তিন দিন তাঁদের নিয়ে ক্লাস করা হয়। এই তিন দিন তিনি স্বপ্নদীপের মধ্যে অস্বাভাবিক কোনও আচরণ লক্ষ করেননি বলেই দাবি করেছেন জয়দীপ। তিনি জানিয়েছেন, নতুন পড়ুয়াদের নিয়ে তিন দিন বেশ কয়েকটি ছবি তোলা হয়েছিল। সেই সব ছবিতেও স্বপ্নদীপকে দেখা গিয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। বুধবার প্রথম বর্ষের নতুন ৮০ জন ছাত্রের সঙ্গে আলাপ করেন জয়দীপ। কারও কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, তা-ও জানতে চান। তখনও স্বপ্নদীপ সন্দেহজনক কিছু জানাননি বলেই দাবি করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি জারি করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। প্রথম বর্ষের এক জন ছাত্রকে এ-২ ব্লকের নীচে উলঙ্গ এবং অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং সেখানেই সে মারা যায়। জানা গিয়েছে, ঘটনার কিছু ক্ষণ আগে সে তার মাকে ফোন করে কান্নাকাটি করেছিল।’’ জুটার দাবি, এই ঘটনার দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক এবং কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ইউজিসি-র নিয়ম মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নতুন পড়ুয়াদের আলাদা হস্টেলে রাখতে হবে বলেও দাবি জানিয়েছে জুটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রাক্তনীরা এখনও হস্টেলে বেআইনি ভাবে থাকছেন, তাঁদের হস্টেল থেকে বার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের একটি ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে ‘কোনও ভাবে’ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় স্বপ্নদীপের। স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলেছে পরিবার। স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুন্ডু দাবি করেছেন, সোমবার থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। জায়গা না পেয়ে হস্টেলে এক বন্ধুর সঙ্গে অতিথি হিসাবে থাকছিলেন স্বপ্নদীপ। সেখানেই র্যাগিং করা হয়েছে তাঁর ভাগ্নেকে। বুধবার রাতে মাকে ফোন করে ‘ভাল নেই’ বলেও নাকি জানিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ। পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকে যাদবপুর থানাতেই রয়েছেন স্বপ্নদীপের পরিবারের সদস্যরা।
এখন প্রশ্ন উঠছে, পরিবারের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে কারা র্যাগিং করেছিলেন স্বপ্নদীপকে? হোস্টেলের সহ-আবাসিকেরা নাকি প্রাক্তনীরা? পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ এবং গোয়েন্দা শাখা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy