Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

মানসিক রোগী মেয়ের হাতে ‘ঘরবন্দি’ বৃদ্ধা

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পর্ণশ্রী থানা এলাকার মহেন্দ্র ব্যানার্জি রোডে বহু বছর ধরে নিজেদের একতলা বাড়িতে রয়েছেন বছর সত্তরের বৃদ্ধা ইরা সেন।

চিকিৎসাধীন: হাসপাতালে ইরাদেবী। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসাধীন: হাসপাতালে ইরাদেবী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

বৃদ্ধার ভরসা বলতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মেয়ে। মেয়েই বাজার-হাট করেন, ব্যাঙ্কে যান, ঘরের কাজ করেন। অভিযোগ, সেই মেয়ে বৃদ্ধা মাকে ঘরে আটকেও রাখেন। প্রতিবেশীদের তৎপরতায় রবিবার বাড়ির দরজা ভেঙে সেই বৃদ্ধাকে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ উদ্ধার করে। পুলিশ ওই বৃদ্ধাকে বেহালার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পর্ণশ্রী থানা এলাকার মহেন্দ্র ব্যানার্জি রোডে বহু বছর ধরে নিজেদের একতলা বাড়িতে রয়েছেন বছর সত্তরের বৃদ্ধা ইরা সেন। তাঁর স্বামী কুড়ি বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর এক ছেলে ছিলেন। তিনিও দশ বছর আগে মারা যান। তার পর থেকে মেয়ে স্বর্ণালীকে নিয়েই থাকেন ইরাদেবী। তাঁর স্বামী জাহাজে চাকরি করতেন। তাঁর পেনশনের টাকাতেই চলে ইরাদেবীর সংসার। এলাকার বাসিন্দারা জানান, স্বর্ণালী ইংরেজিতে এমএ। বাড়ির সব কাজ করলেও তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। গত বছর পুজোর কিছু দিন আগে মাসখানেক একটি হোমেও ভর্তি ছিলেন। ইরাদেবীর এক প্রতিবেশী জয়তী ঘোষ বলেন, ‘‘মা-মেয়ের সংসারে স্বর্ণালী কাউকে ঢুকতে দিতেন না। মেয়ে মাকে দেখতেন ঠিকই। কিন্তু নানা রকম অসংলগ্ন আচরণ করতেন, অসংলগ্ন কথাবার্তাও বলতেন। মায়ের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে দিতেন না। ইরাদেবীকে ঘরে বন্দি করে রাখা হত। ঘরের দরজা-জানলাও সব সময়ে বন্ধ রাখা হত।’’

জয়তী জানান, গত কয়েক দিন ধরে ইরাদেবীর সাড়াশব্দ না পেয়ে রবিবার স্বর্ণালীকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন তাঁর মায়ের কথা। জয়তী বলেন, ‘‘স্বর্ণালী জানান, তিনি তাঁর মাকে মেরে ফেলেছেন। ওই উত্তর শুনে আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ক্লাবের ছেলেদের ডেকে আনি। পর্ণশ্রী থানাতেও খবর দেওয়া হয়। স্বর্ণালী তখন ঘর আটকে ভিতরে বসে। বারবার ঘর খোলার অনুরোধ করলেও তিনি ঘর খোলেননি। শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকা হয়।’’

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, পুরো ঘরের মেঝেয় জলে থইথই করছে। জলের মধ্যেই একটি মাদুর পেতে ইরাদেবীকে মেঝেতে শুইয়ে রেখেছেন স্বর্ণালী। ইরাদেবী এতটাই অসুস্থ যে তাঁর ওঠার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই। তাঁর চোখের দু’দিকে কালশিটে পড়ে রয়েছে। ইরাদেবীকে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে পুলিশ।

এ দিন ইরাদেবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাইরের দরজায় তালা আটকানো। স্বর্ণালী কোথায় গিয়েছেন কেউ জানেন না। এলাকার বাসিন্দারা যেমন ইরাদেবীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত, তেমনই তাঁরা উৎকণ্ঠায় মানসিক ভারসাম্যহীন স্বর্ণালীকে নিয়েও। প্রতিবেশীরা জানান, তাঁরা চান এই অবস্থায় কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ বলে যে প্রকল্প রয়েছে, তারা ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াক। স্বর্ণালীর আবারও হোমে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা।

পর্ণশ্রী থানার এক পদস্থ পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘ইরাদেবীর চিকিৎসা চলছে। স্বর্ণালীর গতিবিধির উপরেও নজর রাখা হচ্ছে।’’ এক প্রতিবেশী জানান, ইরাদেবীদের এক আত্মীয় শিবপুরে থাকেন। তাঁকে খবর দেওয়া হয়েছে।

এ দিকে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ইরাদেবী। অসুস্থ ইরাদেবী এতটাই রুগ্‌ণ যে গলা দিয়ে স্বর পর্যন্ত ভাল করে বেরোচ্ছে না। তার মধ্যেই তিনি মেয়ের খোঁজ নিলেন। দু’চোখের পাশে কালশিটে কী ভাবে পড়ল জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানালেন, কিছু দিন আগে পড়ে গিয়েছিলেন।

হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডের অন্য রোগীরা জানান, তাঁদের বাড়ি থেকে আসা খাবারই তাঁদের আত্মীয়েরা ইরাদেবীকে খেতে দিচ্ছেন। বৃদ্ধাকে দেখতে কেউ আসেননি। মাঝেমধ্যে শুধু বৃদ্ধা ‘মেয়ে কোথায়’, ‘মেয়ে কেমন আছে’ জিজ্ঞাসা করছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Old Woman Parnashree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy